ঢাকা, শনিবার   ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পিছু হটলেন স্থানীয় আলেমরা, সেই মাঠেই হবে নারী ফুটবল ম্যাচ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫২, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে নারীদের ফুটবল খেলা নিয়ে আপত্তি ও মাঠে টিনের বেড়া ভাঙচুরের ঘটনায় অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চেয়েছেন স্থানীয় আলেম সমাজের নেতারা। নারীদের ফুটবল খেলা নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই বলেও জানিয়েছেন।

গতকাল শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে তদন্ত টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর আলেম সমাজের নেতারা এমন কথা বলেন।

স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ জানুয়ারি আক্কেলপুর উপজেলায় নারীদের ফুটবল ম্যাচ বন্ধ করতে এলাকার বিক্ষুব্ধ মুসল্লি, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও মাদরাসার ছাত্ররা তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠের টিনের বেড়া ভাঙচুর করেন। এ ঘটনাটি দেশব্যাপী বেশ আলোচিত হয়। ঘটনাটি নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রশাসনকে স্থগিত ফুটবল ম্যাচ পুনরায় চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে জেলা প্রশাসক (ডিসি) বৃহস্পতিবার বিকেলে তার কার্যালয়ে এক মিটিং করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। গঠিত কমিটিকে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক আগামী ২ ফেব্রুয়ারি তারিখের মধ্যে ঘটনার কারণসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে ডিসি আফরোজা আকতার চৌধুরী ও পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। 

শুক্রবার সকালে তদন্ত টিমের সদস্য আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মনজুরুল আলম, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমানসহ পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আয়োজক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। তদন্ত টিম চলে আসার পর ওই মাঠে আলেম সমাজের কয়েকজন নেতা যান।

বাচ্চাহাজী মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম আবু বকর সিদ্দিক সেখানে যেতে না পারায় তার পক্ষে গিয়েছিলেন ওই মাদরাসার শিক্ষক মোস্তাকিম হোসেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিগত দিনে যা হয়েছে তা আমরা ভুল করেছি। ওই দিনের ঘটনায় আমরা অনুতপ্ত এবং দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাই। ভবিষ্যতে আমরা নারী ফুটবল খেলায় আর এরকম বাধা হবো না। আমরা বিষয়টি মিমাংসা হয়ে যাক সেটিই চাই। অর্থাৎ তিলকপুরে শান্তি চাই। আমরা সরকারের আইনের ওপর হস্তক্ষেপ করতে চাই না।

স্থানীয় আলেক সমাজের নেতা বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির জেলা নেতা মাওলানা আব্দুস সামাদ বলেন, একই জায়গায় আমাদের বসবাস। ভুল বোঝাবুঝির কারণে যেটি হয়েছে তার জন্য আমরা সমঝোতা চাই। এই সমঝোতা নিয়ে বসার কথা ছিল। কিন্তু যারা ওই দিন বক্তব্য দিয়েছিলেন তারা উপস্থিত হতে না পারায় বসা হয়নি।

তিলকপুর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা নজরুল ইসলাম বলেন, সেদিন আলেম-ওলামাদের সঙ্গে আমি গিয়েছিলাম। আপামর জনতাসহ সেদিনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত, পরিকল্পিত নয়। সেখানে জাতীয় বা সরকারি খেলা চলবে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেখানে বেড়া দিয়ে, টিকিট করে খেলা চলতো। তাছাড়া গান বাজিয়ে মেয়েদের এনে ছেলেদের আকর্ষণ করতো, এটাই সমস্যা ছিল। মাঠ ঘিরে একটা বিশৃঙ্খলা করা হয়েছিল। নারীরা খেলবে, খেলুক। খেলার মাঠে তারা খেলুক সমস্যা নেই।

টি-স্টার ক্লাবের সভাপতি ও আক্কেলপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সামিউল হাসান ইমন ঢাকা পোস্টকে বলেন, খেলা আয়োজন নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। আর আমাদের নিজেদের এলাকা, সবাই ভাই-ভাই। যা হয়েছে তার সমাধান চাই। বিকেলে উভয় পক্ষ সমঝোতায় বসার কথা ছিল। কিন্তু বসা হয়নি। আমাদের চাওয়া যেভাবে খেলা চলছিল, ওইভাবে খেলা হোক। মাঠ ঘিরে, টিকিট কেটে। এখন সরকার যা মনে করবে সেই মোতাবেক খেলা হবে।

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। উভয় পক্ষের প্রায়ই সমঝোতা হয়েছে। সেখানে খেলা হলে আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

এ ব্যাপারে আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মনজুরুল আলম কল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি