পিরোজপুর মুক্ত দিবস আজ
প্রকাশিত : ০৯:২০, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩
পিরোজপুর শত্রু মুক্ত হয় আজ ৮ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এ দিনে পিরোজপুর পাকিস্তানী হানাদার, রাজাকার, আলসামস ও আলবদর মুক্ত হয়। এ দিনে ঘরে ঘরে উড়েছিল লাল সবুজের বিজয় পতাকা। পিরোজপুরের ইতিহাসে এ দিনটি বিশেষ স্মরণীয় দিন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুর ছিল মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টরের অধীন সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিনের কমান্ডের আওতায়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার ১৮ ঘন্টার মধ্যে পিরোজপুরের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহকুমা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্রাগার ভেঙ্গে অস্ত্র গুলি নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করে ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নেয়।
১৯৭১ সালের ৩ মে পিরোজপুরে প্রথম পশ্চিম পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী প্রবেশ করে। বরিশাল থেকে গানবোর্টে চড়ে ৩২ পাঞ্জাব ও ২২ বালুচের ২ প্লাটুন বর্বর সৈন্য শহরের প্রবেশদ্বার হুলারহাট নৌ-বন্দর থেকে শহরে প্রবেশের পথে প্রথমেই তারা মাছিমপুর ও কৃষ্ণনগর গ্রামে শুরু করে নারকীয় গণহত্যা।
এ দিনেই তারা শতাধিক নিরাপরাধ নারী-পুরুষ শিশুকে হত্যা করে। জ্বালিয়ে দেয় শহরের ও শহরতলীর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের শতশত বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, খাদ্যগুদাম। ৮ মাস স্থানীয় শান্তিকমিটির নেতা ও রাজাকারদের সহায়তায় বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা, সংখ্যালঘু ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের লোকজনদের বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মূল মন্ত্র বুকে ধারণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করার অপরাধে ৫ মে পিরোজপুরের বলেশ্বর নদের বধ্যভূমিতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তখনকার মহাকুমা প্রশাসক মো: আব্দুর রাজ্জাক, ১ম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল বারী মো: মিজানুর রহমান, হুমায়ুন আহমেদ ও জাফর ইকবালের পিতা মহাকুমা পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমান আহমেদসহ সরকারি কর্মকর্তাদের।
এভাবে ৮ ডিসেম্বর পালিয়ে যাওয়ার দিন পর্যন্ত রক্ত পিপাষু বর্বর হায়নারা তদানিন্তন পিরোজপুর মহাকুমার ৯টি থানার মুক্তিকামী নারী-পুরুষ শিশুকে নির্বিচারে হত্যা করে।
পিরোজপুর মহাকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি ও শহরের গোপাল কৃষ্ণ টাউন ক্লাব মাঠে প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনকারী ছাত্রনেতা ওমর ফারুক, ফজলুল হক খোকন, বিধান মন্টু, সেলিম, যশোর শিক্ষা বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ১ম স্থান অধিকারকারী গণপতি হালদার, জিয়াউজ্জামান, গৃহবধু ভাগিরথী সাহাসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে পৈশাচিকভাবে বলেশ্বর খেয়াঘাটের বধ্যভূমিসহ বিভিন্ন স্থানে হত্যা করা হয়।
পিরোজপুরকে হানাদার মুক্ত করতে সুন্দরবনের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিনের নির্দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ৭ ডিসেম্বর রাতে সামছুল হক খানের নেতৃত্বে পাড়েরহাটের দিক থেকে এবং হাবিবুর রহমান সিকদারের নেতৃত্বে আরেকটি শক্তিশালী দল নাজিরপুরের পথ ধরে শহরের দিকে দ্রুত এগিয়ে আসার খরব পেয়ে দখলদার বাহিনী পিরোজপুর ছেড়ে গানবোর্টে চড়ে বরিশালের দিকে পালিয়ে যায়।
এর আগে স্বরূপকাঠী পেয়ারা বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের গড়ে তোলা দুর্গে পাকবাহিনী আক্রমণ করলে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে কয়েকজন পাকিস্তানী সেনা হতাহত হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণে পাকিস্তানী বাহিনী পর্যুদস্ত হতে থাকে। অবশেষে ৮ ডিসেম্বর পিরোজপুর ছেড়ে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
যাবার দিন তারা ন্যাশনাল ব্যাংক লুট করে সেখানে গচ্ছিত টাকা এবং স্বর্ণ নিয়ে যায়। হত্যা করে বহু মুক্তিকামী জনতাকে।
পিরোজপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বাধীন মুক্ত দিবস উদযাপন পরিষদ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সকাল ৯টায় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে পতাকা উত্তোলন এবং সেখান থেকে সার্কিট হাউজ পর্যন্ত একটি র্যালীর আয়োজনের পাশাপাশি সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান এ দিনটি যথাযোগ্য আনন্দ উচ্ছ্বাসের সঙ্গে পালনে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এএইচ