পিলখানা হত্যাকাণ্ডের এক যুগ
প্রকাশিত : ০৮:৫৫, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) পিলখানা হত্যা দিবস। ২০০৯ সালের এই দিনে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস বা বিডিআর (যা এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা সংক্ষেপে বিজিবি) সদর দফতর পিলখানায় বিপথগামী সৈনিকরা নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। ওই বছরের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিপথগামী কিছু বিডিআর সদস্য ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা ছাড়াও নারী ও শিশুসহ আরও ১৭ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের এক যুগ আজ।
দিনটি উপলক্ষে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) কোরআন খানি, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধিরা সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর বনানীর সামরিক কবরস্থানে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
এ ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, বিজিবির মহাপরিচালক এবং নিহত কর্মকর্তাদের স্বজনরাও শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সব সেক্টর, প্রতিষ্ঠান এবং ইউনিটে বিজিবির পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং বিজিবির সদস্যরা দিবসটি উপলক্ষে কালো ব্যাজ পরিধান করবেন।
নিহতদের বিদেহী আত্মার শান্তির জন্য বিজিবি কেন্দ্রীয় মসজিদ, ঢাকা সেক্টর মসজিদ এবং পিলখানার বর্ডার গার্ড হাসপাতাল মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিজিবির কেন্দ্রীয় মসজিদে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
এ ছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, বিজিবি মহাপরিচালক, শহীদদের আত্মীয়-স্বজন, পিলখানায় কর্মরত সব কর্মকর্তা দোয়া ও মিলাদে যোগ দেবেন।
এদিকে পিলখানা হত্যা মামলার আপিল শুনানি এ বছরের শেষে শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। এ মামলার শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করতে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। দ্রুত শুনানি করতে প্রধান বিচারপতি স্পেশাল বেঞ্চ গঠন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন আসামীপক্ষের আইনজীবী।
এ ঘটনায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জন বিডিআর সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং ২৭৮ জনকে খালাস দিয়ে রায় দেন বিচারিক আদালত।
ওই রায়ের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২২৮ জনকে। পূর্ণাঙ্গ রায়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিলো ২৯ হাজার। উচ্চ ও নিম্ন আদালতের রায় সংযুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ একটি আপিলে পৃষ্ঠার সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৫ হাজার ৬২৩টি।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে গিয়ে অর্থ সংকটে পড়েন আসামীরা। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে পেপারবুক ছাড়া আবেদনের কপি দিয়ে আপিল করেছে ৪৮ জন আসামী।
আসামী পক্ষের আইনজীবী এম আমিনুল ইসলাম জানান, ২০৩ জনের পক্ষে ইতিমধ্যে আপিল এবং লিপ-টু আপিল ফাইল হয়েছে। ওই পেপারবুক ছাড়াই শুধু মেমো দিয়ে অন্যান্যদের পক্ষে আপিল করার একটা সুযোগ প্রধান বিচারপতি মহোদয় প্রশাসনিক আদেশ আমাদেরকে দিয়েছেন।
আপিল বিভাগে এ বছরের শেষে আপিল শুনানি শুরু হতে পারে বলে জানান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা।
অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, আশা করছি যে, স্বাভাবিকভাবে এটা বছরের শেষের দিকে আসতে পারে। তারপরও এর আগেই আমরা যাবো, আদালতের কাছে শুনানির জন্য একটা তারিখ চাইবো।
নিম্ন আদালতে বিষ্ফোরক দ্রব্য মামলাটি বিচারে দীর্ঘসূত্রতায় হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া আসামীরা বের হতে পারছেন না বলে জানান আইনজীবী।
আইনজীবী এম আমিনুল ইসলাম জানান, ২২২ জন আসামী এখন পর্যন্ত খালাসপ্রাপ্ত আছেন। শুধুমাত্র তাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্যের মামলাটি থাকার কারণে তারা বের হতে পারছেন না।
আসামির সংখ্যা ও ফাঁসির দণ্ড বিবেচনায় পিলখানা হত্যা মামলা আইনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়।
এসএ/