ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

পুঁজিবাজার ধ্বংসের অন্যতম হোতা শিবলী রুবাইত

মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : ১৫:৪০, ১৭ আগস্ট ২০২৪

কারসাজি আর অনিয়মে পুঁজিবাজারকে ডুবিয়ে অবশেষে বিদায় নিয়েছে শিবলী রুবাইয়াত কমিশন। এমন নজিরবিহীন জাল-জালিয়াতি অতীতে কোনো কমিশন করেনি বলে অভিযোগ বাজার বিশ্লেষকদের। শিবলী রুবাইয়েত আমলের সব কারসাজি তদন্তের পরামর্শ তাদের।

খায়রুল হোসেন কমিশনের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যখন বিপর্যস্ত পুঁজিবাজার; ঠিক সেই সময় ২০২০ সালের ১৭ মে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন- বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক শিবলি রুবাইয়াত-উল ইসলাম। সাথে যোগ দেন আরও চার কমিশনার।

শুরুতে এই কমিশনের নেয়া কিছু পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের মাঝে আশার সঞ্চার করেছিল। তবে সে আশা হতাশায় রূপ নিতে বেশি সময় লাগেনি। 

কৃত্রিমভাবে বাজার চাঙ্গা করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে আনুকূল্য দেয়ার অভিযোগ ওঠে কথিত বড় বিনিয়োগকারী সমবায় কর্মকর্তা আবুল খায়ের হিরু এবং তার সহযোগীদের। বেশকিছু কারসাজির ঘটনায় তাদের জরিমানা করা হলেও তাদের মুনাফা ছিল তার চাইতে শতগুণ বেশি। শিবলি রুবাইয়াতের প্রশ্রয়ে এ চক্র কারসাজি করে একের পর এক কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে মুনাফা তুলে নেয়। 

২০২১ সালে আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে যে পাঁচটি কোম্পানির শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তার মধ্যে ছিল সোনালী পেপার ৩২১ শতাংশ, ফরচুন সুজ ৩১৭, এমারাল্ড অয়েল ২৮৪, সালভো কেমিক্যাল ২৫৩ ও  জেনেক্স ইনফোসিস ২৩১ শতাংশ।

২০২২ সালে সবচেয়ে দর বেড়েছিল ওরিয়ন ইনফিউশনস ৫০৭ শতাংশ, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ ৪০০, সি পার্ল ৩১৭, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ ১৮৩ ও জুট স্পিনার্স ১৭৪ শতাংশ। ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি বেড়েছিল খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ইন্ডাস্ট্রিজ ৬৮৬ শতাংশ, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার ৩৩৮, খুলনা পিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ২২৩, আরএন স্পিনিং মিলস ১৬১ ও ফাইন ফুডস ১৩৪ শতাংশ। 

সর্বশেষ এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ১৪৬ শতাংশ, তাওফিকা ফুডসের ১২৮, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের ১১৮ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে। এগুলোর অধিকাংশই দুর্বল ও রুগ্ন কোম্পানি। কিন্তু কমিশনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন থাকায় তেমন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর আগে কোন কমিশনের এভাবে সরাসরি জালিয়াতিতে জড়ানোর নজির নেই।  

বিএসইসি সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, “যখন একটা কমিশনকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ করা হয়। তখন সেই লোকগুলো থেকে কী আসা করতে পারেন। অনেকের কাছেই শুনেছি, সততার অভাব ছিল কমিশনের। উনি যতোদিন ছিলেন চরমভাবে ম্যানিপুলেশন চলেছে বিশেষ করে ছোট ছোট শেয়ার নিয়ে। সেটা কন্ট্রোল করতে উনি ব্যর্থ হয়েছেন।”

এদিকে, শিবলী রুবাইয়াতের আমলে কারসাজি তদন্তের অনেক ঘটনাই গোপন রাখা হয়। এমনকি বিএসইসিতে সাংবাদিকদের প্রবেশেও নানা কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইউএফএস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ও অ্যালায়েন্স ক্যাপিটালের বিরুদ্ধে ইউনিট হোল্ডারদের অর্থ তছরুপের অভিযোগ থাকলেও নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। রিংশাইন টেক্সটাইলের প্লেসমেন্ট জালিয়াতির ঘটনা উদঘাটিত হলেও এ বিষয়েও নিরব ছিল শিবলী কমিশন। এছাড়া রুগ্ন ও দুর্বল কোম্পানিগুলোর পর্ষদ পুনর্গঠনের নামেও হয়েছে নানা জালিয়াতি।

এদিকে, অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেন্ট-ওসিসিআরপি’র প্রতিবেদনে নাম এসেছে শিবলী রুবাইয়াতের। মিলিয়ন ডলার জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত একটি ব্যাংক হিসাব থেকে শিবলী রুবাইয়াতের কাছে অ্যাকাউন্টে অর্থ এসেছে দাবি করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। 

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, “আন্তর্জাতিক সংস্থার থেকেও ওনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। আমার মনে হয়, সেগুলোর কোনো তদন্ত হয়নি।”

গত ১০ আগস্ট রাতে পদত্যাগ করেন শিবলী রাবাইয়াত উল ইসলাম, এ ব্যাপারে কথা বলতে তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া দেননি তিনি।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি