ঢাকা, শুক্রবার   ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের জীবন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:২৫, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

ভারত এবং পাকিস্তান উভয় দেশ উত্তর কাশ্মীরের সিয়াচেন হিমবাহকে নিজেদের বলে দাবি করে। পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত এ জায়গাটিতে উভয় দেশ কয়েক হাজার সৈন্য মোতায়েন রেখেছে।

সিয়াচেনে সৈন্যরা শুধু প্রতিপক্ষের গুলি কিংবা মর্টারের আঘাতে আঘাতে মারা পড়ছে না। এখানকার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ হচ্ছে আবহাওয়া। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান সিয়াচেনে তারা প্রতিপক্ষ নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়, বরং তাদের প্রধান শত্রু হচ্ছে আবহাওয়া।

এখানে দায়িত্ব পালন করা একজন সৈনিকের জন্য ভীষণ কষ্ট এবং বিপদের। কারণ ভূ-পৃষ্ঠ থেকে সিয়াচেন হিমবাহের উচ্চতা তের থেকে বাইশ হাজার ফুটের মধ্যে। এতো উঁচুতে অক্সিজেনের ঘাটতি একটি বড় সমস্যা। এখানে অধিকাংশ সৈনিক মারা যান তীব্র ঠাণ্ডা এবং তুষাড় ঝড়ের কারণে। সারাবছর যাবত সিয়াচেনের তাপমাত্রা থাকে মাইনাস বিশ ডিগ্রি। শীতকালে এ তাপমাত্রা থাকে মাইনাস পঞ্চাশ ডিগ্রি।

সিয়াচেনে অনেক অপ্রত্যাশিত বিপদও আসে। একবার এক সৈন্যকে ভাল্লুক আক্রমণ করেছিল। তাকে সাহায্যের জন্য আরেকজন সৈন্য এগিয়ে এলে ভাল্লুক সাহায্যকারী সৈন্যকেও আক্রমণ করে। একজন সৈন্য মারা যায় এবং আরেকজন তাঁর একটি হাত হারায়।

১৯৮৪ সালে সিয়াচেনে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত শুরু হবার পর উভয় দেশ প্রায় তিন থেকে পাঁচ হাজার সৈন্য হারিয়েছে। নিহতের মধ্যে ৭০ শতাংশই মারা গেছে আবহাওয়া-জনিত কারণে। ২০০৩ সালে সিয়াচেন নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি হবার পর এখনও পর্যন্ত প্রতিপক্ষের গুলিতে একজন সৈন্যও মারা যায়নি।

২০১২ সালে এক ভয়াবহ তুষাড় ঝড়ে পাকিস্তানের ১৪০জন সেনা সদস্য বরফের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছে। গত বছর একই ধরনের ঘটনায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর নয়জন নিহত হয়।

সিয়াচেনে দায়িত্ব পালনকারী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক মেজর জানান সেখানে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। শেভ করা, বাথরুমে যাওয়া কিংবা দাঁত ব্রাশ করা সাংঘাতিক কঠিন কাজ। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে দিনেরে পর দিন এ ধরনের কাজ করলে হাতের আঙ্গুল জমে যায়। তীব্র ঠাণ্ডায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে হয়তো এক পর্যায়ে হাতের আঙুলে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে অকেজো হয়ে যায়। অনেক সময় কেটেও ফেলতে হয়। সিয়াচেনে রান্নাবান্না করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। প্রায় সারাদিনই লেগে যায় খাবার রান্না করতে। শুধু ভাত এবং ডাল রান্না করতেই চার ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে।

সেনাবাহিনীর একজন মেডিকেল অফিসার জানান, একানকার খাবারে কোন স্বাদ নেই। প্রতিবার খাবার খাওয়ার সময় বমি চলে আসে। সিয়াচেন থেকে দায়িত্ব পালন শেষে ফিরে আসলে তাঁর ওজন ২২ কেজি কমে গিয়েছিল বলে জানান তিনি।

সূত্র: বিবিসি

একে// এআর


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি