ঢাকা, মঙ্গলবার   ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পৈত্তিক সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা, রুনা খান লিখলেন আবেগঘন পোস্ট

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৪৯, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দেশের স্বনামধন্য মডেল ও অভিনেত্রী রুনা খান। আজকের পর্যায়ে আসতে রুনা খানকে পাড়ি দিতে হয়েছে কঠিন পথ। সেই পথে নানা ঘটনায় তিনি বিচলতি হননি। অবিচল থেকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তিনি আরেকটি দায়িত্ব পালন করেছেন, সেটা তার পরিবারের প্রতি। সেই প্রতিদান পেলেন এবার রুনা। নিজের পৈত্তিক সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা হয়েছে। সেই সম্পদ ভাগের পর নিজের ভাইকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লিখলেন এক পোস্ট. আর তাতেই সারা ফেসবুকে হৈ চৈ। সঙ্গে শেয়ার করেছেন ছোটভাই তুহিনের সঙ্গে তোলা কিছু ছবি। 

রুনা তার পোস্টে লিখেন, 
তুহিন খান..
বয়সে আমার দেড় বছরের ছোট,কিন্তু পড়াশুনায় ৫ বছর পেছনে..?
আম্মা-আব্বু আমাকে ৫ বছর বয়সে প্রাইমারী স্কুলে সরাসরি ক্লাস টু তে ভর্তি করেন..?
আর তাকে ৫ বছরে প্লে-গ্রুপে.. কিন্ডার-গার্ডেনে, ক্লাস টু উঠতে উঠতে তার বয়স ১০..?
আব্বু ১৯৯৮ সালে বিএডিসি থেকে গোল্ডেন-হ্যান্ডশেকে রিটায়ার করেন..
আমি SSC পাশ করেছি মাত্র,তুহিন ক্লাস সেভেনে পড়ে..!
সরকারী সৎ চাকুরীজীবীর ছোট্ট মহাসুখী পরিবার,অঢেল প্রাচুর্য নেই তবে আর্থিক সংকট কি জিনিষ তাও জীবনে কখনো দেখিনি..
আব্বুর বেতনের টাকায় মহাসুখে খেয়ে-দেয়ে দুই ঈদে নতুন জামা-জুতো পরে কেটেছে আমাদের দুই ভাইবোনের জীবন।
আমি HSC পাশ করার পর জানতে পারলাম আব্বুর রিটায়ারমেন্টের সব টাকা শেষ,আব্বুর চোখে রেটিনা সমস্যা তিনি দেখতে পান না ঠিক মতন.. কোন কাজ বা রোজগার তিনি আর করতে পারবেন না..!
সম্পদ বলতে সখিপুরে বাবার চাকরীর টাকায় কেনা ২৫ কাঠা জায়গার উপর বিশাল এক বাড়ী..!
শাক-সবজী,ফলমুল,মুরগী-ডিম-গরুরদুধ-বাড়ী ভাড়া কিছুই লাগে না.. সব নিজেদের.. কিন্তু মাসিক কোন রোজগার নেই..!
ততদিনে আমি ইডেনে অনার্স ভর্তি হয়ে গেছি,তুহিন ক্লাস নাইনে ..
পরিবারে আমিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ..!
টিউশনি-কোচিং এ পড়ানো,কুরিয়ার-সার্ভিস অফিসে চাকরী.. এসব করে ঢাকায় নিজে চলি,বাড়ীতে টাকা পাঠাই.. সেই টাকায় ভাইয়ের লেখাপড়া,ইলেকট্রিসিটি বিল, অন্যান্য খরচ চলে..!
তারপর শুরু হলো টিউশনির পাশাপাশি,অভিনয় করে উপার্জন.. 
এভাবেই চলছিলো সংসার..!
ভাইয়ের পড়াশুনা শেষ হলো..
তারপর,২০০৯ এ আমার বিয়ে..ভাইয়ের চাকরী..বিয়ে..
২০০১-২০০৯ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি থেকে ২০০৯-২০২৫ এমন জীবন-যাপন করছে রুনা..যেখানে তার ১ টাকা সংসারের পেছনে খরচ করতে হয় না, না নিজের সংসার..না মা-ভাইয়ের সংসার..!
দায়িত্ব ফুরালো রুনাবিবির !
রয়ে গিয়েছিলো সখিপুরের ২৫ কাঠার বাড়ীটা..!
ভাই বিক্রি করলো..!
ধরুন ১০ টাকা..!
ভাগ করলো,তার ৫ টাকা রেখে আমার ৫ টাকা ব্যাংকে দিয়ে গেলো..!!!
সবাই তাকে বুঝায় তুমি সাড়ে সাত টাকা পেলে তোমার বোন পাবে আড়াই টাকা..এটাই দেশের নিয়ম..!
তুমি তাকে ৫ টাকা কেনো দিচ্ছো..??!!
সে বলে ..”আমি দেশের নিয়ম মানি না..!”
আর তোমার রোজগার ১ টাকা হলে, তোমার বোনের রোজগার ১০ টাকা..!
তোমার ১ টাকার সম্পত্তি থাকলে, তোমার বোনের আছে ১০ টাকার সম্পত্তি..!
কেনো তাকে বাবার জমির ভাগ অর্ধেক দিবা..??!!
আমার ভাই বলে ..
“রুনার আমার থেকে ১০ গুন বেশী আছে তাই অর্ধেক দিলাম, নইলে ওকে পুরাটা দিতাম..!!!
বাপের ২৫ কাঠা জমি যে ২৫ বছর আগেই বেচে খেতে হয়নি, তার কারণ রুনা..!
আব্বুর রিটায়ার করার পর কোন একটা আত্মীয়-স্বজন ১ টাকা দিয়ে সাহায্য করেনি, রুনা জীবনে ১ টা টাকা কারোর কাছে সাহায্য চায়নি, ধার করেনি..!
১৮ বছর বয়স থেকে টিউশনি করে নিজে চলেছে-সংসার চালিয়েছে-আমাকে মানুষ করে..!
এইজন্যই তো এই জমি আছে,নইলে তো জমি কবেই বেচে খেতে হতো..!
আব্বুর জমির পুরাটা ওর ভাগ..!
ওর অনেক আছে তাই ওর ভাগ থেকে অর্ধেক আমি নিলাম..!”
আমি যা করেছি তা এই দেশের বহু মেয়ে হয়তো পরিবারের-ভাইয়ের জন্য করে..!
তবে আমার ভাই যা করলো গত সপ্তাহে, তা এই দেশের কয়জন ভাই বাপের সম্পত্তি ভাগের ক্ষেত্রে বোনদের সাথে করে, তা ঠিক জানিনা..!!!
আমার থেকে শেখার তেমন কিছু না থাকলেও, আমার ভাইয়ের থেকে এদেশের ছেলেরা শিখতে পারেন.. ?
মনে মনে হাসি আর ভাবি,অর্থ-বিত্ত-বিখ্যাত না হলেও ভাই আমার মানুষ হয়েছে.. সত্যিকারের মানুষ..! 
#Runakhan
#Tuhinkhan
#blessed
(বি: দ্র: - আমি জানি, দেশের প্রথম সারির কোন গণমাধ্যমে “রুনা খানের পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগ” এই খবর “হেডলাইন” হবে না..!!
কারণ, এখানে দখল-জিডি-মামলা এসব শব্দ নেই..!!
নেগেটিভিটি যত সহজে বিক্রি হয়, ভালো খবর তত সহজে বিক্রি হয় না..
পত্রিকাওয়ালাদেরও দোষ নেই..! 
যা লোকে খাবে, তাইতো বেচবে.. ?)

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি