প্রজন্ম বাঁচাতে এখনই প্রয়োজন যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা
প্রকাশিত : ১৫:৫৯, ১৩ জানুয়ারি ২০২১ | আপডেট: ১৬:২৯, ১৩ জানুয়ারি ২০২১
আমার এই লেখাটা যাদের কাছে পৌঁছালে আমরা উপকৃত হতাম হয়তো তাদের কাছে পৌঁছাবে না। তবে এই আশাটা বুকে নিয়ে লিখছি যে, লেখাটা এমন কারো কাছে নিশ্চয়ই পৌঁছাবে যারা পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষা ব্যবস্থা নির্ধারণ করবেন।
আমি এদেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের উপরে গ্রাজুয়েশন শেষ করলাম। ৪ বছরের পড়াশোনা শেষে আমার অর্জন কি! আর ভবিষ্যতের পাথেয় কি! সেই হিসাবের অঙ্কটা নিজের কাছে বেশ কঠিন মনে হচ্ছে।
যে বিষয়ের উপরে সবাই পড়াশোনা করে সেই বিষয়কে ঘিরেই তার জীবনের একটা লক্ষ্য তৈরি হয়। কিন্তু আমরা যারা বাংলা, ইংরেজি অথবা অন্য কোনো সাহিত্যে পড়াশোনা করি আমাদের কি লক্ষ্য হওয়া উচিৎ! কেউ কি স্পষ্ট করে বলতে পারেন! হয়তো বলবেন স্কুল, কলেজের শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া উচিৎ।
আচ্ছা, যে সংখ্যক শিক্ষার্থী প্রতিবছর এই সকল বিষয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে বের হয় তার কত ভাগ শিক্ষার্থীকে আপনারা এই পেশায় নিয়োগ দিতে পারবেন? যদি সবাইকে নিয়োগ দিতেও পারেন তাহলে আমি বলবো ৪ বছর ধরে আমাদের সাহিত্য কেন পড়ালেন? আমাদের দেশের যে শিক্ষাব্যবস্থা তাতে ইংরেজির শিক্ষক হওয়ার জন্য তো আমাদের ৪ বছর ইংরেজি সাহিত্য পড়ার দরকার নেই। এই ৪ বছর আমাদের গ্রামাটিক্যাল আইটেমের সাথে ল্যাংগুয়েজ পড়াতে পারতেন।
বিশ্বাস করেন তাহলেই আপনারা যেমন শিক্ষক বানাচ্ছেন তার থেকে ভালো মানের শিক্ষক আমরা হতে পারতাম। কিন্তু আজ সেটাও হচ্ছে না। আমরা সাহিত্যের শিক্ষার্থীরা না হতে পারছি ভালো মানের শিক্ষক আর না হতে পারছি সাহিত্যিক। হয়তো আপনারা ভাবছেন মেডিক্যালে পড়ে মানুষ যেমন ডাক্তার হতে চায়, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে যেমন ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়, আমরা সাহিত্যের শিক্ষার্থীরা সাহিত্য পড়ে সাহিত্যিক হতে চাচ্ছি! না, আমরা সেটাও হতে সাহস পাই না।
আমরা যখন অর্নাসে ক্লাস করেছি, আমাদের শিক্ষকরা বলেছেন এখন আর শেক্সপিয়ার, কিটস, ওয়ার্ডসওর্থ, ক্রিস্টোফার মারলো জন্মায় না। বাংলার শিক্ষকরা নিশ্চয়ই বলেছেন এখন আর রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বা জীবনানন্দ জন্মায় না। কিন্তু তারা কখনোই বলেননি তুমি এই মানুষগুলোকে ছাড়িয়ে এর থেকেও বড় সাহিত্যিক হতে পারবে। তাদের এই না বলার পেছনে যৌক্তিক কারণও আছে।
তারা জানেন, সাহিত্যের বর্তমান বাজার দর কি! আমাদের তো পেট চলতে হবে। যদি পেটে ক্ষুধা থাকে তাহলে সাহিত্য পাঠ আসবে কোথা থেকে! তারা জানেন সাহিত্যের শিক্ষার্থীর মতো বিপদে পড়ে পাঠ ব্যতীত খুব কম মানুষই সাহিত্য পাঠ করেন। তাই তারা তাদের শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে উৎসাহিত করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না।
তাহলে কি আমাদের এ ব্যাপারটাকে এড়িয়ে যেতে হবে! যেমন চলছে তেমনি চলুক এভাবেই চলতে দিতে হবে! আমরা কি একটু ভিন্নভাবে ভাবতে পারি না !
চলুন না, একটু ভিন্ন ভাবে ভাবি -
এখন মানুষ সাহিত্য পড়তে চায় না এটা ঠিক। কিন্তু মানুষ সাহিত্যকে এখনো ছেড়ে দেয়নি। তারা এখন সাহিত্যকে চলমান রূপে দেখতে ভালোবাসে। তাই আমরা যদি সাহিত্যকে বইয়ের পাতায় আটকে না রেখে ছবি, নাটক, টেলিফিল্মে রূপ দিতে পারি তাহলে মানুষ নিশ্চয় গ্রহণ করবে। এখনো মানুষ ভালো গল্পের ভালো মুভি খোঁজে, জীবনের গল্প খুঁজে। কিন্তু সে গল্প তৈরি হচ্ছে না।
তবে একজন সাহিত্যের ছাত্র চেষ্টা করলেই একটি ভালো গল্পের জন্ম দিতে পারবে। আর সে গল্প যদি ফিল্ম স্টাডিজের কোনো শিক্ষার্থীর হাতে পড়ে তাহলে সে প্রজন্মের দাবি মাথায় রেখে ভালো একটি কাজ অবশ্যই উপহার দিতে পারবে। তাই সাহিত্যের সাথে যদি ফিল্ম স্টাডিজকে কম্বাইন করে ‘ফলিত সাহিত্য’ নামে মডিফাইড বিষয়টি পড়ানো হয় এবং গল্পকার ও ফিল্মমেকার যদি একই সাথে বসে ক্লাস করতে পারে তখন হয়তো গল্পের অভাবে আমাদের ফিল্ম ইন্ডাট্রিজ বন্ধ করতে হবে না, আর সেদিন হয়তো অস্কার আর আমাদের কাছে দুঃস্বপ্ন থাকবে না। বরং একের পর এক হাতে এসে ধরা দিতে থাকবে দেশি–বিদেশী সব পুরস্কার।
তখন হয়তো পৃথিবীর নানান প্রান্ত থেকে মানুষ আসবে আমাদের কাছে গল্প, মুভি, নাটক ধার করতে। সেদিন আমরা যেমন শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ হতে পারবো ঠিক তেমনি একটি বিশাল অংশের শিক্ষিত মানবসম্পদকে শিক্ষিত বেকারের তকমা লাগিয়ে দিশাহীনভাবে অজানার পথে চলতে হবে না। এখন থেকে না হয় সেদিনের অপেক্ষায় রইলাম।
এআই/এসএ/
আরও পড়ুন