প্রণোদনার প্রথম কিস্তিতে ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়
প্রকাশিত : ২২:৫৩, ২২ এপ্রিল ২০২০
করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় দেশের তৈরীপোশাক খাতের জন্য সরকার ঘোষিত ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে প্রথম কিস্তির ২ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। তবে এই অর্থ ছাড়ের সঙ্গে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। যেসব তৈরীপোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান ৮০ শতাংশের বেশি সরাসরি পণ্য রপ্তানি করে থাকে, তাদের এলসি পরীক্ষা সাপেক্ষে এই প্যাকেজের অর্থ ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ অর্থ কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের লক্ষ্যে শিল্প মালিকরা ঋণ হিসেবে নিতে পারবেন। কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান যদি লে-অফ ঘোষণা করে. সেসব প্রতিষ্ঠান এ তহবিল থেকে ঋণ পাবে না।
৮০ শতাংশের কম বিবেচিত রপ্তানিকারকরা ২০ হাজার কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল থেকে ঋণ নিতে পারবে। যা দিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে। কোনো কর্মকর্তার বেতন-ভাতা এ অর্থ থেকে পরিশোধ করা যাবে না।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সুমা গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, অর্থ ছাড়ের বিষয়টি তারা জেনেছেন। একটি ভালো সংবাদ। ঋণের ক্ষেত্রে যে সব শর্ত দেওয়া হয়েছে, সেগুলো নিয়ে সমস্যা নেই। সরকার ঋণ দেবে তার জন্য কিছু শর্ত থাকবেই। যারা ৮০ শতাংশ রপ্তানি করেন, তারা ৫ হাজার কোটির তহবিল থেকে ঋণ নেবেন। আর এর নিচে যারা, তারা ২০ কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল থেকে নেবেন। এ নিয়ে সমস্যা নেই। তবে আমাদের কনসার্ন লে-অফের বিষয়টি। এ নিয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি বিষয়টি সুরাহা হবে।
নাম না প্রকাশের শর্তে অন্য একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, অর্থ ছাড়ের বিষয়টি জেনেছেন। কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। দু’-একটা বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। গার্মেন্টস শিল্প মালিকরা এ তহবিল থেকে ঋণের জন্য আগামী ২৬ এপ্রিল থেকে আবেদন করবেন।
গত সোমবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ সরকার ঘোষিত ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণের প্রথম কিস্তির ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়ের অনুমতি দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই অর্থ ছাড় করবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বল্প সময়ে বেতন দেওয়ার জটিলতা এড়াতে ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড়ে শ্রমিকদের তালিকা প্রণয়নসহ আনুষঙ্গিক তথ্যের শর্তটি শিথিল করা হয়েছে। প্রণোদনা তহবিল থেকে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সম্পূর্ণ তথ্যসহ একটি ডাটাবেজ করার শর্ত ছিল। এটা অনুসরণ করতে গেলে অনেক সময় লেগে যেতো। ফলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সময়ক্ষেপণ হতো। শ্রমিকদের স্বার্থ চিন্তা করে এ শর্তটি শিথিল করা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ব্যাংকের তথ্যও রয়েছে। তবে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণের অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে এগুলো পরিপূর্ণভাবে দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান মোট উৎপাদনের ন্যূনতম ৮০ শতাংশ রপ্তানি করে, তারা রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ২ শতাংশ সুদে এই তহবিলের অর্থ পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবে। যেসব কারখানা সচল আছে, তারাই কেবল ঋণ পাবে। লে-অফকৃত কারখানা এই তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা পাবে না। যারা ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন-ভাতা ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছে, শুধু তারাই সচল কারখানা হিসেবে বিবেচিত হবে। এসব প্রতিষ্ঠান তিন মাসের বেতন-ভাতা দেওয়ার সমপরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে নিতে পারবে এই তহবিল থেকে। এই তিন মাস হচ্ছে-এপ্রিল, মে ও জুন।
এই ঋণের গ্রেস পিরিয়ড হবে ছয় মাস। ঋণের পুরো অর্থ শোধ করতে হবে দুই বছরের মধ্যে। ৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডের পরের ১৮ মাসে ১৮ কিস্তিতে ঋণের টাকা শোধ দিতে হবে। কোনো ঋণ গ্রহীতার ঋণের কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধিত না হলে প্রচলিত নিয়মে ওই ঋণ শ্রেণীকরণ করা হবে এবং ঋণগ্রহীতা খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ক্ষেত্রে বকেয়া কিস্তির ওপর ২ শতাংশ হারে দণ্ড সুদ আরোপ করা হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, মজুরির টাকা সরাসরি শ্রমিকের ব্যাংক হিসাব বা মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে পাঠিয়ে দেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এখন পত্রিকা খুললেই দেখা যাচ্ছে বেতন-ভাতার দাবিতে বিভিন্ন তৈরীপোশাক কারখানার শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসছে। এতে দেশে চলমান লকডাউন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাপক সংখ্যক শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসার কারণে করোনা ছড়িয়ে পড়ারও মারাত্মক ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে। তাই কিছু শর্ত শিথিল করে এই অর্থ ছাড় করা হয়েছে। তবে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পেতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী সব শর্তই পূরণ করতে হবে।
আরকে//
আরও পড়ুন