প্রতি উপজেলায় শাখা হচ্ছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের
প্রকাশিত : ২১:০১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ২১:১২, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (পিএসবি)-এর শাখা দেশের প্রতিটি উপজেলায় খোলা হচ্ছে। এই মার্চ থেকেই শুরু হবে শাখা খোলা কার্যক্রম।
দেশের হতদরিদ্র মানুষদের ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা এবং জামানতবিহীন ঋণ দানের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলাই এই প্রকল্পের লক্ষ্য।
পিএসবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আকবর হোসেন বলেন, ‘ব্যাংকটি ইতোমধ্যেই সারাদেশের ৪০৬টি উপজেলায় কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামী মাসের মধ্যেই বাকি সব উপজেলাতেও এ ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।’
তিনি বলেন, গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী বিশেষত: নারী উদ্যোক্তাদের প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আসাই এই ব্যাংকের মূল লক্ষ্য। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ব্যাংক দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে জামানতবিহীন ঋণ দিচ্ছে।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক অন্যান্য প্রচলিত ব্যাংক থেকে আলাদা। এই ব্যাংক সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে আয়বর্ধক কর্মকান্ডে যুক্ত হতে সহায়তা করে এবং সঞ্চয় গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করে। এ ছাড়াও এ ব্যাংক সদস্যদের সঞ্চয় থেকে আবর্তিত ঋণ স্কিমের আওতায় তাদের ঋণ দেয়।
আকবর হোসেন বলেন, ‘‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ‘একটি বাড়ি একটি খামার (ইবেক)’ প্রকল্পের গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্যদের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।’’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে ২৪ হাজার গ্রাম উন্নয়ন সমিতির ১৩ লাখ সদস্য পরিবার ৭৩৩.৫৬ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। ব্যাংকটি ইতোমধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার সদস্যের মধ্যে উৎপাদন ভিত্তিক কর্মসংস্থানের জন্য ২০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।
যেসব ক্ষেত্রে এই ব্যাংক ঋণ দেয় সেসব হলো গরু মোটাতাজাকরণ, কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্র শিল্প, গাভী পালন, কুটির শিল্প, মৎস্য চাষ, নার্সারী, কৃষিভিত্তিক-শিল্পের জন্য নানা পণ্য উৎপাদন, শাক-সবজি এবং মশলা উৎপাদন।’
ঋণ গ্রহিতাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনার ওপর ঋণের পরিমাণ নির্ভর করে। তবে সাধারণভাবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সর্বাধিক ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজর টাকা, মধ্যম উদ্যোক্তাদের ৫০ হাজার ১ টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা এবং বিশেষ উদ্যোক্তাদের ৩ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এসব ঋণের সুদের হার ৮ শতাংশ।
ঋণ নেয়া ছাড়াও সদস্যরা এ ব্যাংকের সঞ্চয় প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারেন। সঞ্চয় প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- সাধারণ সঞ্চয়, বিশেষ সঞ্চয়, সামাজিক সুরক্ষা সঞ্চয়, ছাত্র সঞ্চয়, মেয়াদি আমানত এবং গ্রামীণ পেনশন স্কিম।
ব্যাংক আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্যদের হাঁস-মুরগী পালন, মৎস চাষ, গবাদিপশু পালন, নার্সারী ও কৃষি খাতের বিভিন্ন আয়বর্ধক কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এ ছাড়াও তাদের উৎপাদিত পণ্য কার্যকরভাবে মজুত ও বিপণনের লক্ষ্যে গুদাম নির্মাণের জন্য ঋণ দিয়ে সদস্যদের সহায়তা করে।
এই ব্যাংকের সুবিধাভোগীদের একজন দেলোয়ারা বেগম। স্বামীর শুঁটকি মাছের ব্যবসায় বিনিয়োগ করে নিজেদের জীবনধারা বদলে ফেলেছেন। তিনি একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে প্রথম ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দুই বছর আগে স্বামীর ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা তিন সন্তানের জননী দেলোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী শুঁটকি মাছের ব্যবসা করেন। কিন্তু এ ব্যবসার সামান্য আয় থেকে ঠিকমত সংসার চালাতে পারছিলেন না। স্বামীকে সাহায্য করার জন্য আমি একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করি।’
দেলোয়ারা বেগম এবং তার স্বামী এই ঋণ নিয়ে ব্যবসা বাড়ান। পরে দেলোয়ারা বেগম একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে আবার ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন। তিনি নিয়মিত এই ঋণের টাকা শোধ করেন। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চৌদ্দগ্রাম শাখায় দেলোয়ারা বেগমেরও একটি এ্যাকাউন্ট রয়েছে। কোন খরচ ছাড়াই এই ব্যাংক থেকে তিনি সবধরনের ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছেন।
দেলোয়ারা বলেন, এখন আমাদের শুঁটকি মাছের ব্যবসা ভালোভাবে চলছে। যা থেকে আমরা সংসারের সব প্রয়োজন মেটাতে পারি।
সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, ‘একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পের’ হিসাব এবং আমানত বজায় রাখার মাধ্যমে ব্যাংকটি দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সমন্বয়কারী ও পিএসবি’র শাখা ব্যবস্থাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পিএসবি এই প্রকল্পের সদস্যদের অনেক সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে যাতে তারা আত্মনির্ভরশীল হতে পারে। সূত্র: বাসস
এসি/
আরও পড়ুন