প্রত্যাশা-প্রাপ্তির মেলবন্ধন সমৃদ্ধ চান্দিনায়
প্রকাশিত : ২০:১৭, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ২১:০৬, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮
রাজধানী শহরে থাকতে থাকতে প্রকৃতির রূপ বৈচিত্র্য দেখে ঋতু নির্ধারণের সক্ষমতা হারিয়েছি কখন যে, মনে করতে পারি না। ক্যালেন্ডারের পাতা হাতড়ে দেখি, পৌষের শেষ। বাল্যকালে নিজ গ্রামের প্রকৃতির সঙ্গে মিলানোর চেষ্টা করি খানিকটা। খুব একটা সুবিধার হলো বলতে পারি না। কেননা, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে পাল্টে যাচ্ছে বাংলার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যও। শীতটা জেঁকে বসেনি তখনও। তবে প্রকৃতিতে শীতের আমেজ টের পাওয়া যায়। বিকালে চান্দিনার কাশিমপুরে পৌঁছি। কাশিমপুর গ্রামটি ডাকাতদের গাঁ নামেই পরিচিত ছিল বছর কয়েক আগেও, মানে ছয় বছর আগে। কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রাম। উপজেলা শহর থেকে ৮/৯ কিলোমিটার দূরের এই গ্রামে হাজার চারেক লোকের বসতি।
কাশিমপুরে পৌঁছি যখন, সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে। বাঁশঝাড়ের মাথার ওপরে তখন লাল আভার সূর্য। পাশে একটি খেলার মাঠ। মুখে মৃদু হাঁসি চলে আসে। ইশ! এমন একটা খেলার মাঠের জন্য কত আহাজারি ছিল। নিজ গ্রামে খেলার মাঠ ছিল না। সেই কচি বয়সে এক কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে স্কুল মাঠে ক্রিকেট খেলতাম। কখনো কখনো নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরে পিচ কেটে ক্রিকেট মাঠ বানিয়েছি। আজ এত সুন্দর মাঠ, শুন্য পড়ে আছে কিশোর দলের কোলাহল ছাড়া।
মাঠ ছেড়ে সামনে এগোই। গ্রামের মধ্য দিয়ে সরু একটা সড়ক। অবাক লাগে, এই সরু সড়কটাও পাকা। আক্ষেপ জেগে ওঠে মনে। আমার বাড়ি নাটোর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামে, বড়াল নদীর তীর ঘেষা গ্রামে। সড়ক পথের পাশাপাশি নদীপথের কারণেও গুরুত্বপূর্ণ সব সড়কের সংযোগ আমার গ্রামে। অথচ, সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি, চৈত্র মৌসুমে ধুলোর সাগর, আর বর্ষায় হাঁটু কাদা। কাশিমপুরের মতো ছোট্ট গাঁয়ের সরু সড়কেও যেখানে পীচের আস্তরণ পড়েছে, আমার সড়কগুলো রয়ে গেছে বালি, এঁটেল বা দোঁ-আশ মাটির আবরণ নিয়েই।
ইট-পাথরের শহরে রুটি-রোজগারে ছুটে চলা নিরন্তর। জীবন যেখানে কনক্রীটময়, সেখানে সামান্য ফুসরত পাওয়াই কঠিন। তাই তো, কত বর্ষা চলে যায়, রাতের পর রাত স্নিগ্ধ কিরণ ছড়িয়ে চলে রূপালী চাঁদ- এসব সৌন্দর্য দেখার সময় আর হয়ে উঠে না। তাই পেশাগত কাজের ফাঁকে বা দৈবক্রমে যখন সবুজ প্রান্তরে পৌঁছে যাই কখনো বা, আনন্দে মন ভরে ওঠে। তৃপ্তি ভরা চোখে দেখতে থাকি প্রকৃতির নানা রূপ আর সৌন্দর্য। কাশিমপুরের মেঠোপথ আর সোনালী ধানের খেত দেখে তাই আহলাদিত হই। একা একাই হেঁটে চলি সরু সেই পাকা সড়ক দিয়ে। চোখে পড়ে ব্যাটারি চালিত রিকসা। সহজ যাতায়াতের বাহন হিসেবে ব্যাটারি চালিত রিকসা বা ভ্যান এখানে বেশ জনপ্রিয়। হাঁটতে হাঁটতে সামনে এগোই। দেখা হয় কাশিমপুর দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী আহসানের সাথে। অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা করার ফলে সারাদেশে বিদ্যুৎ বাতির প্রসার, এলএনজি সরবরাহ, সৌর বিদ্যুতের সঞ্চালন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পরিসংখ্যান, পাকা সড়ক প্রশস্তকরণের হিসাব শুনতে শুনতে অভ্যস্ত বলা চলে। তাই সুযোগ পেলেই বিভিন্ন সময় সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের মুখে শোনা তথ্য বা পরিসংখ্যান ব্যুরো, মন্ত্রণালয়ের তথ্য যাচাইয়ে সাংবাদিকতার মনোভাব জেগে ওঠে।
কথা জমাই। স্বভাবে অস্থির আহসান জানায়, তিন বছর আগে এই পাকা সড়ক হয়েছে। স্থানীয় সাংসদ অধ্যাপক আলী আশরাফ পাকা সড়ক করে দিয়েছেন। ছোট্ট কিশোরের মুখে সাংসদের নাম শুনে আগ্রহ জাগে। ততক্ষণে সেখানে জড়ো হয় বেলাল, কাশেম, জহুরুলসহ আরো কজন কিশোর। জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায়, প্রবীণ এই সাংসদ নিয়মিতই গ্রামে আসেন। তাদের মাদ্রাসাতেও যেতে ভুলেন না, শ্রেণি কক্ষে গিয়ে সবার কুশল জিজ্ঞাসা করেন, বাবা মায়ের খবর জানতে চান। কে কি পড়া শিখে এসেছেন তাও জিজ্ঞাসা করেন তাদের। আহসান জানায়, সাংসদের কাজ সম্পর্কে তার ভালো ধারণা নেই। তবে গ্রামে কেউ মারা গেলে, ছেলে বা মেয়ে কারও বিয়ের অনুষ্ঠান হলে বা তাদের মাদ্রাসা বা অন্য বিদ্যালয়ের প্রোগ্রাম হলে সেখানে উপস্থিত হন অধ্যাপক সাহেব। আহসানদের মাদ্রাসা, কাশিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নানা অনুষ্ঠানেই হাজির হন অধ্যাপক আলী আশরাফ। সাংসদ বা সাহেব নয়, আলী আশরাফ তাদের কাছে পরিচিত দাদু হিসেবে। কিশোর বয়সে স্থানীয় প্রশাসনের হালহকিকত সম্পর্কে তাদের ধারণা দেখে বুঝতে পারি, কেবল সরকারি প্রেস নোটের ভাষ্যই নয়, প্রকৃতপক্ষেই বড় হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি, এগোচ্ছে দেশও।
পরে খোঁজ করলাম কিশোরদের মুখে শোনা ভাসা ভাসা তথ্যের। এলজিইডির তথ্য বলছে, গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারের (কাবিখা) আওতায় ২৫১টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৩৪ কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা ও নগদ অর্থের ৫৬টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৩১ কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা নির্মাণ ও পুণঃনির্মাণ করা হয় গেল কয়েক বছরে। ১ হাজার ৯৬১টি মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবরস্থান, ১৫৭টি মন্দির, ৭৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৪০৭টি সংযোগ রাস্তার কাজও সম্পন্ন হয়েছে সাংসদ অধ্যাপক আলী আশরাফের উদ্যোগে। অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছে ১ হাজার ৫৬৮ জন। শুধু উন্নয়নই করেননি, তার কঠোর পদক্ষেপের ফলে কুমিল্লা-৭ আসনে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, চাঁদাবাজ ও মাদক মুক্ত হয়েছে। আলী আশরাফ কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনের বর্তমান এমপি ও জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পীকার।
২. হাঁটি আরও কিছুক্ষণ। গ্রামের এই সড়কের দুপাশেই পুকুর। অনেকগুলো পুকুর। মনে পড়ে, বনপাড়ার মালিপাড়া গ্রামে সড়কের দুপাশে এমন অসংখ্য পুকুর দেখেছিলাম। ছোটবেলায় দেখা মালিপাড়ার পুকুরে এখন মাছ চাষ হয় কি না জানি না। তবে কাশিমপুরের প্রতিটি পুকুরেই মাছ চাষ হয়, চাষ হয় হাসও, সমন্বিত পদ্ধতিতে। মজার দৃশ্য হলো, প্রতিটি পুকুরেই পানির ওপরে জালি বিছানো। রাস্তার ধারে চায়ের দোকান।
বসে পড়ি সামনে পেতে রাখা বাঁশের বেঞ্চিতে। দোকানের মালিক পঞ্চাশার্ধো আবদুল মজিদ। মাথায় টুপি, মুখ ভর্তি পান। একটু পর পর পিক ফেলছেন পাশে রাখা কাগজের ঠোঙায়। মুখে প্রশান্তির ছায়া। কথা শুরু হলো। জানালেন এটিই ডাকাতদের গ্রাম। আলী আশরাফ এম পির উদ্যোগে ডাকাতদের কয়েকটি পরিবারের পূর্নবাসন হয়েছে। এলাকাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি গেল প্রায় বছর পাঁচেক হলো। গ্রামে কয়েকটি কওমী মাদ্রাসা রয়েছে। এলাকার লোকজনও বেশ ধর্মমনা। আবার স্থানীয়দের অর্ধেকই হিন্দু ধর্মালম্বী। তা সত্বেও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাও হয়নি, সংঘাত তো পরের ব্যাপার। বললেন, ওই যে সড়কের ওপারের পরিবারগুলোই হিন্দু ধর্মের লোকজনের। ‘আমাদের মাঝে চমৎকার সম্পর্ক।’
চায়ের কাপে চুমুকের সাথে চোখ বুলাই দোকানের ভেতরে। দেশীয় ব্র্যান্ডের একটি ফ্রিজ, ওয়ালে ঝুলানো টিভিও। কয়েকজন বসে টিভি দেখছে। হাতে চায়ের কাপ, সিগারেটও ফুঁকছেন কেউ কেউ। মনে পড়লো বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের একটি অতি পরিচিত বক্তব্যের কথা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি প্রায়ই বলেন, বিপুল পরিমাণ চা উৎপাদন সত্বেও এখন রপ্তানি কমে গেছে। কেননা, দেশের মানুষ এখন সকাল সন্ধ্যা চা খায়। মজিদ বলছিলেন, তার দু ছেলে দুবাইয়ে কর্মরত। স্থানীয় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণের পর দেশের বাইরে গেছে কাজ নিয়ে। ফলে সংসারে অভাব নেই দীর্ঘ দিন। তিনি সুখী, আরও বেশি সুখী এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিয়ে।
তখন মাইকে ভেসে আসছিল কাশিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের একটি উঠোন বৈঠকে বক্তৃতার সুর। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এর আয়োজন করেছে আলী আশরাফের সমর্থক কর্মীরা। ওখানে বক্তব্য রাখছিলেন এমপি পুত্র মুনতাকিম আশরাফ টিটো। মজিদ জানালেন, গ্রাম ডাকাতমুক্ত হওয়ার পর নিজের অর্থে জমি কিনে এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় করে দিয়েছেন আলী আশরাফ। এছাড়া তার মেয়াদে ১০২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ কাজ চলমান ও ৩৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক ১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আসবাবপত্র সরবরাহসহ নুতন ভবন নির্মাণ করা হয়। আরও ৮টি বিদ্যালয়ে নুতন ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন।
মজিদের সঙ্গে যোগ করেন স্থানীয় যুবক রওশন আলী। আগ্রহ নিয়েই জানতে চাই, এমপি পুত্র সম্পর্কে। এমপি পুত্র সম্পর্কে সারাদেশে অভিজ্ঞতা যে খুব একটা সুখকর নয়, তা গণমাধ্যমের মাধ্যমেও জেনেছি। বেশিরভাগই উচ্ছেন্নে যাওয়া। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই জিজ্ঞাসা। রওশন জানান,
তিনি না কি ঢাকার বড় ব্যবসায়ী। নেতাও বটে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ান। কিন্তু এলাকায় এলে সাধারণভাবে তাদের সাথে মিশেন। রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে বসে যুবক-মুরব্বীদের সাথে কথা বলেন, চা খান। তার মধ্যে কোনো অহংকার নেই। এলাকার যে কেউ ফোন দিলেই তার সাথে কথা বলতে পারেন। গরীব-দুঃখীসহ এলাকার মেধাবী শিক্ষার্থীদের তিনি সহযোগিতা করেন, উৎসাহিত করেন। পরে মিলিয়ে দেখলাম মুনতাকিম ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টি দেশে সরকারি-বেসরকারি সফরে গেছেন। ব্যবসায়ীদের মাঝে তার যে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বেরও অধিকারী, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পরে আরেকটু খোঁজ নিয়ে দেখলাম, বয়সে তরুণ এই নেতার এলাকা নিয়েও বিশেষ ভাবনা রয়েছে। কয়েকটি টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন একান্তই ব্যক্তিগত উদ্যোগে, যার লক্ষ্য তারুণ্য যেন প্রশিক্ষণ নিয়ে যথাযথ প্রতিভা কাজে লাগাতে পারে।
৩. আমরা পরের দিন সকালে যাই চান্দিনা উপজেলার দোল্লাই ইউনিয়নে। বাজারে চায়ের দোকানে বসি। নানা আলাপচারিতায় প্রসঙ্গ আসে জাতীয় নির্বাচনও। ততক্ষণে সেখানে এসে উপস্থিত হয়েছেন স্থানীয় একটি মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষার্থী। সাথে মাদ্রাসার হুজুর শওকত আলী। তারা মোটামুটি বিচ্ছিন্নভাবে এমন তথ্যগুলোই এমনভাবেই বলছিলেন, অধ্যাপক আলী আশরাফ এমপি তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কেবলই জনগনের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করেছেন। নাগরিক সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে চান্দিনা পৌরসভা গঠন করেন। গেল এক দশকে চান্দিনায় ৬৬ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ, ৫৬ কিলোমিটার সড়ক মেরামত, ৪টি বড় ব্রীজ নির্মাণের চলমান কাজসহ চান্দিনা ও দোল্লাই নবাবপুর বাজার উন্নয়নের প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কীয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এই সংসদ সদস্যের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। ৮৬টি ছোট সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে। হাসপাতালে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করা হয়েছে। বিএনপি আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৭ টি কমিউনিটি ক্লিনিক পুনরায় চালু করা হয়েছে। মহিচাইল ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়েছে তারই নির্দেশনায়। এ ছাড়া বরকইট, মাইজখার ও বাতাঘাসী ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ চলছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মোকাব্বের আলী। বয়সের হিসাবে প্রায় সত্তরের কাছাকাছি। এখনও সুঠামদেহী এই ভদ্রলোক জানালেন আলী আশরাফ সম্পর্কে। তার ভাষায়, বছরের বেশিরভাগ সময়ই আলী আশরাফ তার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এলাকা ও জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নে নেওয়া নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন তদারকি করেন। সুখে-দুখে জনপ্রতিনিধিকে পাশে পেয়ে বরাবরই উচ্ছ্বসিত স্থানীয়রা। তার বাবার নামের ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি গরীব দুঃখীদের সেবা করেন সারাবছরই। বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকজনের সুখ-দুঃখের কথা শুনেন, সমস্যা সমাধানে আর্থিকসহ সবধরণের সহযোগিতা করেন। টাকার সংকট হলে নিজ থেকে অর্থ দিয়ে গরীব মেয়েদের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। আর বলতে গেলে ওই এলাকার গরীব শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগেরই পড়াশোনার খরচ যোগান দেন তার সংসদীয় তহবিল, বাবার নামের ফাউন্ডেশন বা ব্যক্তিগত তহবিল থেকে। মানবদরদী বৈশিষ্ট্যের কারণে আলী আশরাফ দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের মাঝে গরীবের বন্ধু বলেই পরিচিত। পরে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্যের সত্যতাও পেয়েছি।
আমার কাছে মনে হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষা, মাথাপিছু আয়, রপ্তানিপ্রবৃদ্ধি, রেমিট্যান্স প্রবাহসহ সামাজিক নানাসূচকেই এগিয়েছে বিস্ময়করভাবে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। এদেশের ১৬ কোটি জনগণের ভাগ্যোন্নয়ন ও চলমান উন্নয়নের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে ও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই কাজ এগিয়ে নিতে যে দরকার একঝাঁক নিষ্ঠাবান সাংসদ। সব মানবীয় গুণাবলী নিয়ে যে আলী আশরাফ যোগ্য একজন প্রতিনিধি, তা বলার অবকাশ নেই। জনগণের ভোটের মাধ্যমে এমপি নির্বাচিত হয়ে গত তিন দশক ধরে তিনি এলাকায় সততা ও নিষ্টার সাথে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছেন। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাক- এমনটা স্থানীয় জনগণের সঙ্গে আমিও প্রত্যাশা করি।
আলী আশরাফের সাথে রয়েছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা ও চান্দিনা উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সব সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে কথা হয় চান্দিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আইউব আলী এবং সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তপন বক্সীর সঙ্গে। তারা বলেন, বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য আলী আশরাফের অব্যাহত প্রচেষ্টায় চান্দিনা আজ উন্নত জনপদ। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে চান্দিনা উপজেলা আওয়ামীলীগও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিরা ফ্রিডম পার্টি গঠন করে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে আলী আশরাফ কে প্রাণনাশের চেষ্টা করে। তখন সব ভয় উপেক্ষা করে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সংগঠিত করেন তিনি। ১৯৯৪ সালে তিনি তৎকালীন পাঁচটি উপজেলা নিয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠা করে সংগঠনের শক্তিশালী ভীত তৈরি করেন।
৪. চান্দিনায় গিয়েছিলাম বন্ধুর বাসায়, পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে যোগদান আর এলাকা ঘুরে দেখা। দেখার ষোলআনা পূর্ণ হওয়ার পর চেষ্টা করি এমপি মহোদয়ের সঙ্গে যোগাযোগের। তিনি ঢাকায় থাকায় বন্ধুর সৌজন্যেই দেখা হয় মুনতামিক আশরাফের সঙ্গে। চান্দিনায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে বসে কথা বলি। প্রায় ঘন্টাখানেকের এই আলাপের সময় দেখেছি, গেস্ট রুমে অপেক্ষা করতে এলাকার রিকসাচালক, দিনমজুর, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, বেকার যুবক, মসজিদের মুয়াজ্জিম ও ইমাম, স্কুলের নৈশপ্রহরীসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ। কেউ আসছেন অভাব অভিযোগ নিয়ে, কারও আবদার নানা সুপারিশ। মজার ব্যাপার, শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আসছে তার সাথে সেলফি উঠানোর জন্য। পানের দোকানদার এক মুরব্বি তো বলেই ফেললেন, বাবার ছায়া দেখতে পান ছেলের মধ্যে। তাই আলী আশরাফ কে না পেলে তারা মুনতাকিমের কাছে ভীড় করেন। মুনতাকিমও ব্যস্ততার মাঝে হাসিমুখে সবাইকে সময় দেয়ার চেষ্টা করেন।
তরুণ এই নেতা জানালেন, চান্দিনার উন্নয়নে রয়েছে তার বিশেষ পরিকল্পনা। দেশে-বিদেশে ঘোরার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি উপজেলাকে সমৃদ্ধ উপজেলার অনন্য উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান। তার বাবা অধ্যাপক আলী আশরাফের পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করতে চান তিনি। জানালেন, উপজেলায় এগ্রো প্রসেসিংয়ের কয়েকটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করবেন। প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণমূলক কেন্দ্র স্থাপন করবেন। যেন, কম পড়ালেখা করেও স্থানীয় দরিদ্র যুবকরা দেশে ও বিদেশে ভালো প্রতিষ্ঠানে সুনাম ও দক্ষতার সাথে কাজ করতে চান।
নির্বাচনের বাকি বলতে গেলে তখনও মাসখানেক, আমরা যে সময় সেখানে গিয়েছিলাম। মুনতাকিমের ব্যস্ততা বাড়ছিল মোবাইল ফোনেও, যার বেশিরভাগই এলাকার লোকজনদের। চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়ি রাজধানীর উদ্দেশ্যে। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে তখন ব্যস্ততম যানের দ্রুত চলাচল। গাড়িতে চেপে বসি আমরাও। সমৃদ্ধ একজনপদের তুষ্টির গল্প নিয়ে আবার ফিরতে শুরু করি ব্যস্ততম শহরে।
লেখক# বিজনেস রিপোর্টার, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর।