ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে চাই: ফরিদা খানম সাকি

প্রকাশিত : ২২:০৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ২২:৫১, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ফরিদা খানম সাকি। একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত সংসদ সদস্য। সবকিছু ঠিক থাকলে কয়েকদিন পর আনুষ্ঠানিক ভাবে নারী সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন তিনি।  

ফরিদা খানম সাকি একজন মুক্তিযোদ্ধা। শুধু তিনি নন; তার এক ভাই এবং এক বোনও মুক্তিযোদ্ধা। তার আপন সেজ মামা সাহাবুদ্দিন এসকান্দর ভুলু মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। সারাজীবন রাজনীতি করা মানুষটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ছিলেন শেখ হাসিনা`র ( বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) সহপাঠী। তার স্বামী মাহমুদুর রহমান বেলায়েত দু`বার সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ তার সাধাসিধে জীবন অন্য অনেকের চেয়ে ব্যতিক্রম করে তুলেছে তাকে।

বঙ্গবন্ধুর স্নেহ পাওয়া ফরিদা খানম সাকি`র ছাত্ররাজনীতির স্মৃতি মানেই ছয়দফা, গণঅভ্যুথান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সহপাঠী হিসেবে পেয়েছেন শেখ হাসিনাকে (আজকের প্রধানমন্ত্রী)। স্মৃতিচারন করতে গিয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, আমি যখন রোকেয়া হলে থাকি তখন তিনি (শেখ হাসিনা) রোকেয়া হলে খুব জনপ্রিয়। শুধু ছাত্রীরা নয়, হলে কর্মচারীরাও তাকে ভালবাসত। বঙ্গবন্ধু`র ইশারায় তখন দেশ চলে। অথচ তার মেয়ে হয়েও তিনি ছিলেন খুব সাধারণ। সবার সঙ্গে মিশতেন। অনেকে আশ্চর্য্য হয়ে যেত। এত বড় নেতার মেয়ে। অথচ কোন অহংকার নেই।  

ফরিদা খানম সাকি বলেন, শুধু প্রধানমন্ত্রী নয়, বঙ্গবন্ধু`র পরিবারের সবাই ছিল নিরহংকার ও সাধাসিধে ধরনের। ৩২ নাম্বারে গিয়ে আমরা কখনো না খেয়ে ফিরেছি এমন নজির নেই।

রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেওয়া ফরিদা খানম সাকি ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতেন রাজনীতি করার। বঙ্গবন্ধু`র ছয় দফা যখন দেশের মানুষকে নতুন প্রেরণায় উজ্জ্বীবীত করে তখন থেকেই নোয়াখালীর মিটিং, মিছিলে বিচরণ শুরু করেন ফরিদা খানম সাকি।

পরবর্তীতে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। থাকতেন রোকেয়া হলে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনী প্রচারে তিনি ছিলেন তখনকার ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে নোয়াখালীর এমন কোন বাড়ী নেই যেখানে তিনি নৌকা`র পক্ষে গণসংযোগ চালাননি।

২৫ মার্চের কালো রাতে তিনি সহ সাতজন মেয়ে অনেকটা অলৌকিক ভাবে হানাদারদের বুলেট থেকে বেঁচে যান। কিন্তু নোয়াখালীতে তার পরিবার মনে করেছিল, সাকি আর বেঁচে নেই। তিনি জীবিত আছেন এখবরটি নিশ্চিত হতে তাদের সময় লেগেছিল এক সপ্তাহ।

সে সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ফরিদা খানম সাকি বলেন, ২৫ মার্চের রাতে রোকেয়া হলের হাউস টিউটর সায়রা বেগম আমাদের সাতজন মেয়েকে স্টোররুমে লুকিয়ে রেখেছিলেন। নয়তো সেদিন আমাদের অবস্থা অন্যান্য হলের ছাত্রদের মতো হতো।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ফরিদা খানম সাকি ঢাকা শহরে বিভিন্ন আত্মীয়ের বাসায় লুকিয়ে ছিলেন। পরে নিজ এলাকা নোয়াখালীর মাইজদীতে চলে যান। সেখানে শহর থেকে যেসব মানুষ প্রাণ বাঁচাতে গ্রামে ফিরে যাচ্ছিল তাদের সেবায় লেগে যান। তাদের খাওয়ানো, তাদের জন্য পোশাক সংগ্রহ সহ নানা কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলেন। এরমধ্যে একদিন স্থানীয় রাজাকারদের প্ররোচনায় তার মামা সাহাবুদ্দিন এসকান্দর ভুলুকে পাকবাহিনী ধরে নিয়ে যায় ও হত্যা করে।

ফরিদা খানম সাকি তার এক বোন ও ভাই সহ ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। খুব অল্প সময়ে তিনি স্টেনগান চালানো আয়ত্ব করেন নিখুঁত ভাবে। পরবর্তীতে সেনবাগ গেরিলা যুদ্ধে তা ভাল কাজ দেয়। সেই সম্মুখ যুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর বেশ ক্ষতি হয়।

নিজ বাসায় বসে একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে ফরিদা খানম সাকি বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা, সেটাই আমার বড় পরিচয়। সংসদ সদস্য অনেকে আসবে যাবে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা আর আসবে না।

ফরিদা খানম সাকি`র বিয়ে হয়েছিল রাজনৈতিক পরিবারে। তার স্বামী মাহমুদুর রহমান বেলায়েত দু`বার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথমবার ১৯৭৩ সালে দ্বিতীয়বার ১৯৮৬ সালে। বঙ্গবন্ধু`র সরাসরি স্নেহ পাওয়া মাহমুদুর রহমান বেলায়েত নোয়াখালী জেলায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেকে ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি ছিলেন নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনীর প্রধান। চৌমুহনী এসএ কলেজের সাবেক ভিপি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মাহমুদুর রহমান বেলায়েত নোয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৭৫ পরবর্তী প্রেক্ষাপট স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে ফরিদা খানম সাকি বলেন, সে সময় জিয়াউর রহমান আমার স্বামীকে তার দলে যোগ দেওয়ার জন্য ও তার সমর্থিত শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বলেছিল। কিন্তু আমার স্বামী তাতে রাজী না হওয়ায় বারবার তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। কারাগারে নির্যাতন চালানো হয়েছে। কিন্তু আমার স্বামী পণ করেছিলেন, মৃত্যু হলেও তিনি আদর্শ ত্যাগ করবেন না। 

দীর্ঘ চুয়ান্ন বছর রাজনীতির মাঠে থেকে এবার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। কীভাবে প্রথম জানলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দলের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রথম আমার স্বামীকে ফোন করে বলেন, আমাকে প্রধানমন্ত্রী ফরম নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মনোনয়ন পেয়েছি এ খবরটাও তিনি প্রথম আমার স্বামীকে ফোনে জানান।

রাজনীতি করতে গিয়ে জীবনে নানা চড়াই উৎরাই পার হয়েছেন। মাঠ ঘাট চষে বেড়িয়েছেন। চুয়ান্ন বছরের রাজনীতিতে এই প্রথম স্বীকৃতি হিসেবে সংসদ সদস্য হলেন। এমন অবস্থায় কী ভাবছেন জানতে চাইলে ফরিদা খানম সাকি একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, আগেও মানুষের জন্য কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বিশ্বাস করে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি যে কোন কিছুর বিনিময়ে সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে চাই।

এসি   

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি