প্রধানমন্ত্রীর সাপোর্ট দারুণ উৎসাহ দেয় : সাকিব
প্রকাশিত : ২০:৩৯, ৩০ আগস্ট ২০১৭ | আপডেট: ২১:৩৫, ৩০ আগস্ট ২০১৭
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাপোর্ট ক্রিকেটেরদের দারুণ উৎসাহ যোগায় বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। খেলা শেষে মুশফিক-সাকিব-তামিমদের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসান এ কথা বলেন।
বুধবার অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসের ৭০তম ওভারে প্রধানমন্ত্রী মিরপুর স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন। জায়ান্ট স্ক্রিনে একটু পর পরই ভেসে উঠছিল প্রধানমন্ত্রীর হাস্যোজ্জ্বল মুখ, আর দর্শকরা ভেসে যাচ্ছিলেন উচ্ছ্বাসে। কিছুক্ষণ পরই অলআউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ পায় ২০ রানের ঐতিহাসিক জয়। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে টাইগাররা এখন ১-০তে এগিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার মাঠে উপস্থিত থেকে উপভোগ করেছেন ঐতিহাসিক জয়। প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে ২০ রানে হারিয়ে সাজঘরে ফেরার সময় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের করতালি দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। বিসিবি সভাপতির রুমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন ক্রিকেটাররা, তুলেছেন ছবিও। পরে ম্যাচ সেরা খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান জানিয়েছেন, ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী কীভাবে তাদের উৎসাহিত করেন সবসময়।
ঢাকা টেস্ট জয়ের নায়ক সাকিব সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সবসময় আমাদের সাপোর্ট করেন, ক্রিকেট অনেক পছন্দও করেন। তার সাপোর্ট আমাদের আরও ভালো খেলতে উৎসাহিত করে।
সাকিব জানালেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের বললেন যে কালকেও আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে আসতে পারেননি। পাপন ভাই (বিসিবি সভাপতি) তাকে বলেছেন, খেলা আর দুই-এক ওভার বাকি আছে। তাই তিনি আর আসেননি। আমাদের দলের জন্য এমন সাপোর্ট দরকার। প্রধানমন্ত্রীর সাপোর্ট আমাদের দারুণ উৎসাহ দেয়।
বুধবার শেষটা হাসির হলেও সকালটা ছিল পুরোপুরিই অন্যরকম। তৃতীয় দিন বিকেলের বিষন্নতার ছোঁয়াটা ছিল সকালের মিরপুরেও। যেভাবে ইচ্ছা, সেভাবেই খেলছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার আর স্টিভ স্মিথ—অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সেরা দুই ব্যাটসম্যান। ওয়ার্নার তো আগের দিন বিকেলেই ৭৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। স্মিথও জমে গেছেন উইকেটে। কোনো আশা কী ছিল!
মিরপুরের দর্শকের হতাশ করে এই দুই ব্যাটসম্যান দিনের প্রথম ঘণ্টাতেই তুলে নিলেন ৬৫ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে পাওয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ফিফটিটি সেঞ্চুরিতে (১১২) পরিণত করতে বেশি সময়ও নিলেন না। কিন্তু এর পরপরই কী যেন হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার।
সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণি দুর্বোধ্য হয়ে উঠল অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের কাছে। প্রথমে সেঞ্চুরিয়ান ওয়ার্নারকে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলে ফেরালেন সাকিব। এরপর অধিনায়ক স্মিথ—উইকেটের পেছনে তাঁর ক্যাচ নিলেন মুশফিক। জ্বলে উঠলেন তাইজুলও। পিটার হ্যান্ডসকম্বকে স্লিপে সৌম্যর ক্যাচে পরিণত করলেন। ম্যাথু ওয়েডকে এলবিডব্লিউ করলেন সাকিব। অ্যাশটন অ্যাগারকে নিজেই তালুবন্দী করলেন তাইজুল। প্রথম ঘণ্টায় যেখানে ব্যাটসম্যানরা স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে যাচ্ছিলেন, সেখানে বাংলাদেশ লাঞ্চে গেল জয়ের সুবাস নাকে নিয়েই।
বিরতির সময় জোর জল্পনা-কল্পনা। বাংলাদেশ কি পারবে? গ্লেন ম্যাক্সওয়েল যে তখনো ছিলেন। কিন্তু লাঞ্চের পর প্রথম বলেই ম্যাক্সওয়েলকে সাকিব বোল্ড করলেন। বলটি নিচু হয়ে গিয়েছিল। জয়টা তখন চোখেই দেখছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু প্যাট কামিন্স আর নাথান লায়ন চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা করলেন। বাংলাদেশকে জয় পেতে দেবেন না সহজেই। কামিন্স নিজের ব্যাটিং পারঙ্গমতার পুরোটা ব্যবহার করলেন। লায়নও কম যান না। ২৯ রানের জুটি গড়লেন। কামিন্স রাখলেন মূল ভূমিকাটা। টিকে থাকতে পারবেন না দেখে বড় শটে মনোযোগী হলেন। ঝুঁকি নিয়ে কয়েকটা বাউন্ডারিও মেরে দিলেন। গ্যালারিতে তখন শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। জয়টা বোধ হয় ফসকেই গেল বাংলাদেশের হাত গলে।
অনেকের মনে তখন ভেসে উঠছে ২০০৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মুলতান টেস্টের স্মৃতি। ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলা সর্বশেষ সিরিজের স্মৃতিও জেগে উঠছিল। সেবার ফতুল্লায় বাংলাদেশের কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন রিকি পন্টিং, জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও ৩ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে তো এক টেলএন্ডার, জেসন গিলেস্পি কাঁদিয়ে ছেড়েছিলেন বাংলাদেশকে।
কিন্তু মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তেমন কিছু হতে দিলেন না বাংলাদেশের বোলাররা। কামিন্স-লায়ন জুটিটা চোখ রাঙিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু স্বপ্ন হাতিয়ে নেওয়ার আগেই মিরাজের আঘাত। সুইপ করতে গিয়ে সৌম্যর দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হলেন লায়ন। স্লিপ থেকে বাম দিকে দৌড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে নেওয়া সৌম্যর ক্যাচটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জশ হ্যাজলউড চোটগ্রস্ত। কিন্তু দলের প্রয়োজনে মাঠে নামলেন। পিঠের ব্যথায় খুব অসুবিধা হচ্ছিল তাঁর ব্যাটিংয়ে। কিন্তু কামিন্স খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে হ্যাজলউডকে আড়াল করে খেলতে লাগলেন। বাংলাদেশের বোলাররা সুযোগই পাচ্ছিলেন না শেষ ব্যাটসম্যানকে বোলিং করার। সুযোগ পেলেন তাইজুল। আর তাতেই ইতিহাস গড়ে ফেলে বাংলাদেশ। তাইজুলের বলে এলবির ফাঁদে পড়লেন হ্যাজলউড। ম্যাচ শেষ। মর্নিং শোজ দ্য ডে—কথাটা মিথ্যে প্রমাণ হলো দুর্দান্তভাবেই।
এই জয়ের নায়ক সাকিবই। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ১০ উইকেট পেলেন। নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি ক্রিকেটার স্যার রিচার্ড হ্যাডলির পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এক টেস্টে ১০ উইকেট ও ন্যূনতম ৫০ রান করার কীর্তিটা নিজের করে নিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত সেই অর্জন ছাপিয়ে দুর্দান্ত এক দলগত অর্জন বাংলাদেশের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়—পবিত্র ঈদুল আজহার উৎসবে দেশের মানুষ এর চেয়ে বড় উপহার আর কী হতে পারে?
আরকে/ডব্লিউএন