প্রাচুর্য বা বিপদে কৃতজ্ঞচিত্ত
প্রকাশিত : ১৬:৫১, ৭ জুন ২০১৯
প্রাচুর্য বা বিপদে সমানভাবে কৃতজ্ঞচিত্ত থাকাই প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। যারা বিশ্বাসী তারা জীবনের সত্যকে উপলব্ধি করতে পারেন। তারা জানেন এই পৃথিবীর জীবন কর্মক্ষেত্র।
যারা বিশ্বাসী ও কৃতজ্ঞচিত্ত তারা প্রাচুর্য বা বিপদ দুটোকে প্রাপ্তি হিসেবে নয় বরং পরীক্ষার বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে। তাদের কাছে যদি প্রাচুর্য, সম্মান, খ্যাতি, ক্ষমতা আসে এগুলোকে তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে উপহার ও পরীক্ষার মাধ্যম মনে করে স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞচিত্ত ও বিনয়ী হন।
এ বিশ্বাসীরা ক্ষমতা, খ্যাতি, প্রাচুর্যকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেন। ক্ষমতার শিখরে উঠে তারা এতই দায়িত্ববান হয়ে ওঠেন যে, কোনো অবস্থাতেই মজলুমের কান্না স্রষ্টার কাছে পৌঁছার আগে তারা তা উপশমের ব্যবস্থা করেন।
ফলে তারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ও কৃতজ্ঞতার মানে উত্তীর্ণ হন। আল্লাহ তাদের নিয়ামত বাড়িয়ে দেন আর তাদের উপর সন্তুষ্ট হন।
কোনো বিশ্বাসীর উপর যখন জান-মাল সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে কোনো বিপদ আপতিত হয়, তখন তার মোকাবিলায় অস্থিরচিত্ত হওয়ার পরিবর্তে সে স্থির ও দৃঢ়চিত্তের হয়। সে ধরে নেয় যে আল্লাহ তাকে সম্পদ-খ্যাতি দিয়েছেন তিনি তা কেঁড়ে নেওয়ারও ক্ষমতা রাখেন।
তাই স্রষ্টার উপর কোনো প্রশ্ন না তুলে নিজের দিকে তাকিয়ে কোনো দুর্বলতা আছে কিনা তা আবিষ্কার করে সংশোধন করার চেষ্টা চালায়।
সে ভালোভাবে জানে যে বিপদ কালো মেঘের মত। তা দেখতে অসুন্দর হলেও এক পশলা বৃষ্টি নিয়ে আসে। তাই মহাপ্রভু যে বিপদ দিয়েছেন, তার মধ্যেও কল্যাণ নিহিত আছে। হতে পারে তা ইহকালীন বা পরকালীন।
সে এও জানে যে বিপদের মুখে স্থিরচিত্ততা ও প্রশান্ত প্রত্যয়ের মাধ্যমে যদি সে পরীক্ষায় পাস করে তাহলে তার আত্মিক উন্নতি সাধিত হবে আর সে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার পাবে।
পক্ষান্তরে যারা অকৃতজ্ঞচিত্ত তারা তাদেরই হাতে গড়া কৃতকর্মের কারণে যখন বিপদে পড়ে, তখন মুষড়ে পড়ে ও আল্লাহকে অপবাদ দিতে থাকে। এভাবে তারা পৃথিবীর জীবনে বিপদের মাধ্যমে প্রেরিত পরীক্ষায় ফেল করে ও পরকালে চিরস্থায়ী অশান্তির বলয়ে প্রবেশ করে।
আসলে বিপদে স্থিরতার মধ্য দিয়ে সেই স্রষ্টার উপর বিশ্বাসের ভিত দৃঢ় হয় যার কাছ থেকে বিপদ ও প্রাচুর্য দুটোই আসে। ‘দুর্যোগ আসে সুযোগ হয়ে, ভালবাসার কারাগার পরিণত হয় বাগানে।’
যুগে যুগে সৃষ্টিকর্তা তার মনোনীত ব্যক্তিদের বিপদের উপহার পাঠিয়ে পরীক্ষা করেছেন এবং তারা (মহামানবরা) বিপদে কৃতজ্ঞচিত্ত থেকে তাদের সত্তাকে নিয়ে গেছেন স্রষ্টার প্রতি সমর্পিত সন্তুষ্ট চিত্ত আলোকিত আত্মার স্তরে।
(শোকরিয়া, প্রশান্তি ও প্রাচুর্যের রাজপথ গ্রন্থ)
এএইচ/