‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি’
প্রকাশিত : ১৭:৫৬, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেছেন, ‘ব্যাপকভিত্তিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরেকটি বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মুখেও গতিশীল রাখা সম্ভব। বাংলাদেশের ব্যাংকের মাধ্যমে আমরা এমন একটি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কর্মসূচি পরিচালনা করেছি যার ফলে সামাজিক পিরামিডের পাটাতনে থাকা প্রান্তিক মানুষের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছেছে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বেড়েছে, এবং সর্বশেষ বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার হাত থেকে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করার পাশাপাশি দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে।’ সম্প্রতি চট্টগ্রাম অফিসার্স ক্লাবে ক্রেডিট ডেভেলপমেন্ট ফোরাম‘র (সিডিএফ) আঞ্চলিক সম্মেলনে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. আতিউর তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন যে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ক্ষুদ্র অর্থায়নকারি প্রতিষ্ঠান এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এক সাথে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বর্তমানে মোট কৃষি ঋণের এক-তৃতীয়াংশ দিতে পারছে এবং এর ফলে পল্লী অঞ্চলে এসএমই সহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতি পাচ্ছে। এক দিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ভালো ব্যবসা করছে, অন্য দিকে এর ফলে আগে আর্থিক সেবার বাইরে থাকা মানুষের সার্বিক আর্থ-সামাজিক অবস্থায় উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। যেমন, ২০১০ থেকে ২০১৭ সময় কালে ক্ষুদ্র অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানের সেবা যারা পেয়েছেন তাদের আয়, যারা এ সেবার আওতার বাইরে ছিলেন তাদের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষুদ্র অর্থায়ন সেবার কারণে গ্রামীণ পরিবারগুলোর সঞ্চয়ের প্রবণতাও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
ড. আতিউর আরও বলেন, ‘ব্যাংকগুলো মোবাইল ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যে ডিজিটাল আর্থিক সেবার প্রসার ঘটিয়েছে তার ফলে গ্রামাঞ্চল থেকে প্রচুর আমানত সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অর্থায়নে বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে। এর ফলে গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক ধাক্কা/ঝুঁকি মোকাবিলা করার সক্ষমতাও বাড়বে। ক্ষুদ্র অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের সার্বিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক রূপান্তরে অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে, এবং ভবিষ্যতে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন, ক্ষুধা-দারিদ্র্য নিরসন এবং উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার মতো লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নেও এ প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
‘আর্থিক অন্তর্ভুক্তি তথা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে ক্ষুদ্র অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকা’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মূখ্য সচিব মো. আব্দুল করিমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান। সম্মেলনের বিশেষ অতিথি ছিলেন মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান অমলেন্দু মুখার্জি এবং চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান।
সম্মেলনে আইএনএম’র নির্বহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরি মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন। স্থানীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনার মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এবং স্থানীয় পর্যায়ের তথ্য জাতীয় পর্যায়ের নীতি নির্ধারকদের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সরকার ও ক্ষুদ্র অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগগুলো নিয়ে তিনি আলোচনা করেন। মন্ত্রী এম. এ. মান্নানও এসডিজি বাস্তবায়নে স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষুদ্র অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকার প্রশংসা করেন। এ ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আগামীতেও জাতীয় সামষ্টিক অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এমএস/আরকে
আরও পড়ুন