প্রি-পেইড মিটারের ভোগান্তিতে যশোরের ৪৬ হাজার গ্রাহক
প্রকাশিত : ১০:২১, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ঝামেলা যেনো পিছু ছাড়ছে না যশোরের বিদ্যুতের ডিজিটাল (প্রি-পেইড) মিটার গ্রাহকদের। প্রয়োজনীয় ব্যালেন্স রিচার্জের ঝক্কি-ঝামেলার মধ্যেই নতুন করে লোড ক্যাপাসিটি (স্যাংশন লোড) কর সংযোজন জটিলতায় ভোগান্তিতে ফেলেছে তাদের। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) যশোরের আওতায় জেলার ৪৬ হাজার গ্রাহক এখন এ ঝামেলা থেকে মুক্তি চান।
তবে ওজোপাডিকো যশোর কর্তৃপক্ষ বলছে, শুধু ডিজিটাল প্রি-পেইড মিটারের ক্ষেত্রে নয় অ্যানালগ মিটারের গ্রাহকদের ক্ষেত্রেও লোড ক্যাপাসিটি (স্যাংশন লোড) কর সংযোজন পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিত করতে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড (ওজোপাডিকো) যশোরের বিক্রয় বিতরণ বিভাগ ১ ও ২ এর আওতায় যশোর শহর ও তার আশপাশে ৪৬ হাজার গ্রাহকের বাসা ও অন্যান্য স্থাপনার অ্যানালগ মিটার পরিবর্তন করে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করে। গ্রাহকরাও অনেকটা আগ্রহ নিয়ে আগের মিটার পরিবর্তন করে ডিজিটাল মিটার সংযোজন করেন।
তবে ডিজিটাল এ মিটার সংযোজনের শুরুতেই গ্রাহকরা ব্যালেন্স রিচার্জের ঝামেলা নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়েন। অনেকে মিটার পরিবর্তন করে আগের মিটারে ফিরে যাবার ব্যাপারেও বিদ্যুৎ বিভাগে যোগাযোগ করতে থাকেন। এরই মধ্যে গত প্রায় একমাস ধরে নতুন করে লোড ক্যাপাসিটি (স্যাংশন লোড) কর সংযোজন জটিলতায় ভোগান্তিতে ফেলেছে এসব গ্রাহকদের।
শহরের চোরমারা দিঘীরপাড় এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রি-পেইড মিটার এখন তাদের গলার ফাঁস হয়ে দেখা দিয়েছে। অ্যানালগ মিটার থেকে প্রি-পেইড মিটারে ফিরে গিয়ে বিড়ম্বনার শেষ হচ্ছে না। প্রি-পেইড মিটারে রিচার্জ টাকা ঢোকাতে গিয়ে প্রায়ই সময় ঝামেলায় পড়তে হয়। এরই মধ্যে বাসায় হঠাৎ করে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফ্রিজ চালানো অবস্থায় সাবমার্সিবলের সুইচ দিলেই বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করলে তারা লোড ক্যাপাসিটি বাড়ানোর কথা বলছে।
একই কথা বলেন ফাতেমা বেগম নামে আরেক গৃহিনী। তিনি বলেন, সোমবার থেকে আমার বাসায় হঠাৎ হঠাৎ করে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলার পর পরদিন মঙ্গলবার বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করে সমস্যার কথা জানালে তারা জানান, লোড ক্যাপাসিটির চেয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করার কারণে এ পরিস্থিতি হচ্ছে। পরে ৪শ’ ৩ টাকা দিয়ে লোড ক্যাপাসিটি বাড়িয়ে নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, এখন সুযোগ থাকলে তিনি আগের অ্যানালগ পদ্ধতিতে ফিরে যেতেন।
শহরের মুজিব সড়ক এলাকার ওজোপাডিকোর আরেক গ্রাহক বলেন, তার বাসাতেও একই অবস্থা হওয়ার পর বিদ্যুৎ বিভাগে যোগাযোগ করলে তারা জানিয়েছেন এখন থেকে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের জন্য মাসে ৩৫ টাকা করে সেবা কর দিতে হবে। এটি বিদ্যুৎ বিভাগের নতুন করে গ্রাহকের পকেট কাটার কৌশল বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ অবস্থায় কী করণীয় তা ভেবে উঠতে পারছি না বলে তিনি আক্ষেপ করেন।
এ বিষয়ে ওজোপাডিকো যশোর বিক্রয় বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নাসির উদ্দীন বলেন, ওজোপাডিকো যশোরের দুটি জোনে মোট ৪৬ হাজার প্রি-পেইড মিটারের গ্রাহক রয়েছে। এসব গ্রাহকের মধ্যে থেকে প্রতিদিন দেড়শ’রও বেশি গ্রাহক তাদের বাসা ও স্থাপনায় বাড়তি লোড ক্যাপাসিটি সংযোজনের জন্য আবেদন করছেন। সামনে আরও বাড়তে পারে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, লোড ক্যাপাসিটির এ বিষয়টি সব সময়ই বলবৎ ছিল। ডিজিটাল মিটারের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ অটো বন্ধ হয়ে যায় বলে গ্রাহকরা এটিকে বিড়ম্বনা মনে করছেন। তবে এর বাইরে অ্যানালগ মিটারে যেহেতু লোড ক্যাপাসিটির ঘাটতি হলে বিদ্যুৎ বন্ধের কোনো অপশন নেই সেকারণে ওইসব গ্রাহকের মাসিক বিদ্যুৎ বিলের সাথে এসব লোড ক্যাপাসিটি (স্যাংশন লোড) কর সংযোজন সমন্বয় করা হয়।
এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি যশোর-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. ইছাহাক আলী জানান, তাদের গ্রাহকরা এখনও প্রি-পেইড মিটারের আওতায় না আসলেও মাসিক বিলের সাথে সমন্বয় করে লোড ক্যাপাসিটি (স্যাংশন লোড) কর সংযোজন করা হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে লোড ক্যাপাসিটি জটিলতায় কোনো গ্রাহকের বাসা বা স্থাপনার বিদ্যুৎ অটোমেটিক বন্ধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে তিনি জানান।
বিষয়টি নতুন হওয়ায় এ বিষয়ে গ্রাহকদের কিছুটা অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে অন্যসব গ্রাহকদেরকেও এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে বলে জানান তিনি।
এএইচ
আরও পড়ুন