ফারুক মঈনউদ্দীনের জন্মদিনে শুভেচ্ছা
প্রকাশিত : ১৯:১০, ৮ অক্টোবর ২০১৭ | আপডেট: ১৮:২৮, ১ নভেম্বর ২০১৭
৮ অক্টোবর, ২০১৭ সাল। আজ আমার অত্যন্ত প্রিয় মানুষ শ্রদ্ধেয় ফারুক মঈনউদ্দীনের ৫৯তম জন্মদিন।তাঁর এ শুভ দিনে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও পুষ্পাভিনন্দন।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারি সৃজনশীল এ গুণধর ব্যক্তিত্ব পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গল্প-উপন্যাস রচনাসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় অর্থনীতি ও ব্যাংকিংবিষয়ক লেখালেখি এবং টিভি টকশো’তে মূল্যবান মতামত ও পরামর্শ দিয়ে জাতীয় জীবনে অবদান রেখে আসছেন। ফারুক মঈনউদ্দীন বর্তমানে ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌরসভার উত্তর-ইদিলপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ অক্টোবর ফারুক মঈনউদ্দীনের জন্ম।তাঁর বাবা মলকুতুর রহমান ছিলেন থানা শিক্ষা অফিসার।মায়ের নাম বেগম কামালুল হায়া। সীতাকুণ্ডে এটি একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম।বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবদীপ্ত মহান মুক্তিযুদ্ধে এ পরিবারের গর্বিত সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ সালাউদ্দিনের (ফারুফ মঈনউদ্দীনের বড়ভাই)রয়েছে অনন্য অবদান। আমাদের জাতীয় পতাকা তৈরি ও ‘জয়বাংলা’শ্লোগান আবিস্কারের পেছনে রয়েছে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা।বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে ধাপে তাঁর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা সর্বজনবিদিত।
বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে সভাপতি ও আ স ম আবদুর রবকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্বপাকিস্তান ছাত্রলীগের যে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয় সেখানে ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ সালাউদ্দিন সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালের ৬দফাভিত্তিক সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ১১দফার সমর্থনে আয়োজিত প্রতিটি কর্মসূচিতে তিনি তৎপর ছিলেন। বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির আহসান উল্লাহ হলের ২০৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন ইউসুফ সালাউদ্দিন।এই কক্ষটি ছিল আন্দোলনের সংগ্রামের সূতিকাগার ও সব কেন্দ্রীয় নেতাদের আড্ডাস্থল।তোফায়েল আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক, সিরাজুল আলম খান, আ স ম আবদুর রব, কাজী আরিফ আহমেদ, হাসানুল হক ইনু, শেখ শহিদুল ইসলামসহ তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতাদের আড্ডা আবর্তিত হত ২০৪ নম্বর কক্ষকে ঘিরে।
রাজনৈতিক সতীর্থদের প্রায় সবাই স্বাধীনতার পরবর্তীতের মন্ত্রী-এমপি হলেও জাতীয় রাজনীতিতে এতো অবদান রাখার পরও ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ সালাউদ্দিন প্রতিদানে কখনো রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা আদায়ে সচেষ্ট হননি। দেশপ্রেম,নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শ থেকে চুল পরিমাণও তিনি বিচ্যুত হননি। একইভাবে তাঁরই অনুজ ফারুক মঈনউদ্দিনও আত্মমর্যাদা, নীতি ও মূল্যবোধকে বিসর্জন দিয়ে কর্মস্থলে সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেননি।
সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। তাঁর মধ্যে নেই কোনো অহংবোধ ও ভণিতা শঠতা, চাটুকারিতা। একজন সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ ও কর্মঠ ব্যাংক-কর্মকর্তা হিসেবে কর্মক্ষেত্রে তাঁর যথেষ্ট সুনাম ও খ্যাতি রয়েছে।
১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ জুলাই আরব বাংলাদেশ ব্যাংক লিমিটেড-এ তাঁর ব্যাকিং-ক্যারিয়ার শুরু। ফারুক মঈনউদ্দীন একজন ব্যতিক্রমধর্মী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মানুষ।পরোপকার ও আন্তরিকতার ক্ষেত্রে তাঁর জুড়ি মেলা ভার।তাঁর মতে, পরের জন্যে জীবন উৎসর্গ করার মতো সুখ আর নেই।স্বার্থপরতা জীবনের চরম উদ্দেশ্য নয়, এতে সুখ ও আনন্দ পাওয়া যায় না।প্রীতি, ভালোবাসা,সেবাব্রত ও কল্যাণসাধনের জন্যে মানুষের জন্ম।তাই প্রতিটি মানুষকে অপরের কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করা উচিত।তাই সারা জীবন তিনি মানুষের সাধ্যমতো উপকার করার চেষ্টা করেছেন।মার্জিত রুচিবোধ, সুন্দর আচার-আচরণ ও সহজ-সরল-মধুর ব্যবহারের জন্যে সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধবসহ সর্বমহলে তিনি একজন পরিপূর্ণ ভদ্রলোক হিসেবে সমাদৃত।
শিক্ষার প্রতি রয়েছে তাঁর প্রচণ্ড দুর্বলতা।শিক্ষা নিয়ে তাঁর ভাবনা- বহুমুখি দিক থেকে যদি শিক্ষা অর্জন করা না যায় তবে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা হয় না।এর জন্যে মনের দরজাগুলো খুলে দিয়ে অসীম বিশ্বের দিকে থাকাতে হয়। আর এ থেকে যে জ্ঞান লাভ করা যায়, সেই জ্ঞানে জীবনের অন্ধকার দূরকরে আলোর সন্ধান পাওয়া যায়।তিনি আরও মনে করেন, শিল্প-সাহিত্য আর সংস্কৃতিচর্চা ছাড়া জীবন কখনো অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে না।ফারুক মঈনউদ্দীন প্রকৃতির বুক থেকে রূপ, রস ও গন্ধ আহরণ করে ভাষার ছন্দ-মাধুরী মিশিয়ে আঁকতে পারেন গল্প ও কাব্যের আলপনা।কাব্যরসে সবাইকে তিনি মুগ্ধ ও সঞ্জীবিত করতে পারেন। তিনি শুধু দেশভ্রমণ করেন না; ভ্রমণশেষে অর্জিত অভিজ্ঞতা লেখালেখির মাধ্যমে অন্যের মাঝে বিলিও করেন। রচনা করেন ভ্রমণবিষয়ক পাঠকপ্রিয় গল্পগ্রন্থ।বিশ্বভ্রমণে তাঁর উদগ্র বাসনা থাকলেও নিজ মাতৃভূমির প্রতি রয়েছে তাঁর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।তিনি একজন সুশিক্ষিত, সজ্জন ও জ্ঞানের আলোয় আলোকিত মানুষ।দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে তিনি অত্যন্ত আন্তরিক ও সচেষ্ট।সকলপ্রকার লোভ ও স্বার্থান্বেষী মনোভাবের বিপরিতে তাঁর সুদৃঢ় অবস্থান।
ব্যাংকিংপেশায় যোগদানের আগে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে তাঁর পেশা ছিল সাংবাদিকতা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়ালেখার সময় কবিতা রচনার পাশাপাশি সত্তরের দশকের শেষদিকে ছোটগল্প দিয়েই তাঁর লেখালেখির সূত্রপাত। তাঁর প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলায় ১৯৭৮ সালে।১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম গল্পগ্রন্থ। এ যাবৎ প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ তিনটিসহ তাঁর মোট গ্রন্থের সংখ্যা ১৭টি।
লেখক- প্রধানসম্পাদক, চাটগাঁর বাণী
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।