ফুটবল জাদুকরের আশ্চর্য জীবন
প্রকাশিত : ১৫:০৬, ২১ জুন ২০১৮
রাশিয়ার সবুজ মাঠে মায়াজাল বুনবেন লিওনেল মেসি। এই আশাতেই বুক বেঁধেছিলেন তামাম ভক্তরা। বিশ্বকাপের বল গড়ানোর মাসখানেক আগে থেকেই মেসিকে নিয়ে প্রত্যাশা বাড়ছিল সবার। মাঠে বল গড়াতেই মন ভাঙেছে ভক্তদের। প্রথম ম্যাচেই স্বপ্ন ভঙ্গ। তার উপরে আর্জেন্টিনাও জেতেনি। নিন্দুকরাও ছাড়ছেন না। রক্তাক্ত হচ্ছেন মেসি। কিন্তু ভক্তদের মেসিতে যে প্রবল ভরসা। মেসি যে ভরসারই নাম। রুশ মুলুক থেকে আর্জেন্টিনায় এবার বিশ্বকাপ নিয়ে ফিরবেন এই ফুটবল জাদুকর এটাই একমাত্র চাওয়া।
খেলার মাঠে তিনি ফুটবলের ঈশ্বর, রাজপুত্র, সেরার সেরা। কিন্তু মানুষ মেসির ব্যাপ্তি বোধহয় আরও বেশি। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো তার ঔদ্ধত্য নেই। হাত-পা ছোড়েন না। সস্তা দরের গিমিক পছন্দ নয় তার। সব সময়েই তিনি শান্ত, নির্বিকার। রোনাল্ডো বা নেইমারের মতো ‘ক্যাসানোভা’ ভাবমূর্তিও নেই তার। পোশাক বদলানোর মতো বান্ধবী বদলের খবর হন না। বরং এক নারীতেই তিনি বেজায় খুশি। তাকেই সঁপেছেন মনপ্রাণ। এক ক্লাবের প্রতিই তার দায়বদ্ধতা। তার এই সহজ, সরল মানবিক চেহারা দেখে মহিলা ভক্তরাও ভালোবেসে ফেলেছেন মেসিকে।
মেসি এমনই এক আবেগের নাম যার জন্য যে কোনও প্রেমিক তার সঙ্গীনীকে পর্যন্ত ত্যাগ করতে পারেন হাসি মুখে। বাস্তবেও মেসির জীবনেও এমনই ঘটেছে। মাত্র ৯ বছর বয়সে রোজারিওয় আলাপ মেসি ও তার বর্তমান স্ত্রী আন্তোনেলা রোকুজোর। তখন আন্তোনেলার বয়স ৮। আন্তোনেলার এক দূর সম্পর্কের ভাই লুকা স্ক্যাগলিয়ার মাধ্যমেই দু’জনের পরিচয়। রূপকথার জন্মও তখন থেকেই। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘৯০ মিন’-এ লুকা জানিয়েছিলেন, সেই সময়েই আন্তোনেলাকে চিঠি লিখে মেসি জানিয়েছিলেন ‘একদিন আমরা প্রেমিক-প্রেমিকা হব।’
রোজারিও ছেড়ে মেসিকে চলে যেতে হয় বার্সেলোনায়। শৈশব প্রেমও কি হারিয়ে গেল সেই সঙ্গে? মেসি বার্সেলোনায়। আন্তোনেলা রোজারিওয়। কথায় বলে, চোখের থেকে দূরে চলে গেলে সে নাকি হৃদয় থেকেও হারিয়ে যায়। মেসির ক্ষেত্রে কিন্তু তা হয়নি। মেসির হৃদয়ে যে ছাপ ফেলে গিয়েছিল রোজারিওর এক সুপারমার্কেট মালিকের মেয়ে। আন্তোনেলার হৃদয়ের তল কি খুঁজে পেয়েছিলেন মেসি?
মেসি আর্জেন্টিনা ছাড়ার পরে আন্তোনেলার জীবনে চলে আসেন অন্য এক পুরুষ। তিন-তিনটে বছর তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল আন্তোনেলার।
জনশ্রুতি বলে, আন্তোনেলার সেই প্রেমিক সড়ক দুর্ঘটনায় হারিয়ে যানন তারার দেশে। শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। দূরে থাকলেও মেসির কানে পৌঁছয় আন্তোনেলা শোকস্তব্ধ। দ্রুত তিনি ফিরে আসেন আর্জেন্টিনায়। আন্তোনেলার পাশে সেই সময়ে এসে দাঁড়ান ফুটবলের রাজপুত্র। শৈশবের সেই প্রেম তখন থেকেই পাকাপোক্ত। বর্হিজগত অবশ্য মেসি-আন্তোনেলার প্রেমের বিন্দুবিসর্গ জানতে পারেনি তখন।
মেসির সঙ্গেও জুড়ে গিয়েছিল কয়েকজন মহিলার নামও। তবে সেগুলো ছিল একমুখী। কেউ নিজের প্রচারের জন্য মেসিকে ব্যবহার করেছিলেন। কেউ আবার রাজপুত্রের শরীরে মাখিয়ে দিতে চেয়েছিলেন কলঙ্কের কালি। রোজারিও-র এক মডেল ম্যাকারেনা লেমোস এক সময়ে দাবি করেছিলেন, মেসির সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপের ঠিক আগে মেসি যখন আর্জেন্টিনা ফিরে আসেন, তখনই নাকি আলাপ সেই মডেলের সঙ্গে। এক সংবাদমাধ্যমের কাছে লেমোস জানিয়েছিলেন, আলাপ হলেও তাকে চুম্বন পর্যন্ত করেননি মেসি।
এর মাঝে আর্জেন্টিনার মডেল-সিঙ্গার লুসিয়ানা সালাজারের সঙ্গেও নাম জড়ায় রোজারিওর বিস্ময়বালকের। লুসিয়ানা মেসির থেকে বয়সে ৬ বছরের বড়। শোনা যায়, বেশ কিছুদিন অনলাইন ডেটিং করেছিলেন দু’জনে। কিন্তু কেউই এই সম্পর্ক নিয়ে কোনও দিন মুখ খোলেননি। এই সব সম্পর্কের সত্যতা নিয়েই রয়েছে প্রশ্ন।
মেসির জীবনে স্থায়ী স্তম্ভের মতো থেকে গিয়েছেন কেবলমাত্র আন্তোনেলা।
মেসি-আন্তোনেলার প্রেম কাহিনি নিয়ে শোনা যায় আরও এক ঘটনা। এক সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছিল, আন্তোনেলার সেই প্রেমিক হৃদয় ভাঙার দুঃখ সামলে নিয়েছিলেন খুব সহজেই। কারণ তার প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম মেসি—যার অপাপবিদ্ধ মুখ দেখলে নতজানু হয় ষড়রিপু।
সংবাদ মাধ্যমের কাছে আন্তোনেলার সেই প্রেমিক নাকি একবার বলেছিলেন, ‘আন্তোনেলা আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। ও যার জন্য আমাকে ছেড়েছে, সেই মানুষটা লিওনেল মেসি।’
সূত্র : এবেলা
এসএ/