ঢাকা, মঙ্গলবার   ২২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ফেসবুকে বুড়ো চেহারা দিয়ে বিপদ ডেকে আনছেন না তো?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৫৬, ১৮ জুলাই ২০১৯ | আপডেট: ১৪:৪৫, ১৮ জুলাই ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

আপনার ফেসবুক ফিডজুড়ে শুধু বুড়ো মানুষের ছবি? কারা এরা? খেয়াল করে দেখুন এরা সব আপনারই পরিচিত এবং পুরনো বন্ধু। কিন্তু এরা সবাই বুড়ো হয়ে গেল কী করে? ঘটনাটা কী?

আসলে সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে একটি ভাইরাল ট্রেন্ড চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে অনেকেই বুড়ো হচ্ছেন। আর এই বুড়ো হওয়ার কাজে সহযোগিতা করছে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত ফেসঅ্যাপ।

এটি এমন একটি অ্যাপ যা মানুষের ছবি এডিট করে তাদের তরুণ কিংবা বৃদ্ধ বয়সের মুখচ্ছবির প্রতিরূপ দেখাতে পারে। আর এই অ্যাপের মাধ্যমে নিজেদের চেহারার ছবি এডিট করে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছেন বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ।

কিন্তু এর ব্যবহার নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠছে, ফেসঅ্যাপ ব্যবহার করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই বিপদ ডেকে আনছেন না তো?

বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিনে যখন থেকে ফেস এডিটিংয়ের এই অ্যাপটি ভাইরাল হয়েছে, তখন থেকে কিছু মানুষ এর শর্তাবলী নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন।

তারা অভিযোগ করেছেন, ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে নিয়ম বহির্ভূতভাবে উপাত্ত সংগ্রহ করছে তারা।

তবে ফেসঅ্যাপ এক বিবৃতিতে বলেছে, আপলোড করার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই নিজেদের সার্ভার থেকে ছবি ডিলিট করে দেয় তারা।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এর ব্যবহারকারীরা যে সব ছবি এডিটিং করার জন্য নির্ধারণ করেন শুধু সেসব ছবিই আপলোড করে থাকে অ্যাপটি। অন্য কোনও ছবি নয়।

প্রসঙ্গত, ফেসঅ্যাপ নতুন কিছু নয়। দুই বছর আগে ‘জাতিগত ফিল্টার’ ব্যবহার করে এটি খবরের শিরোনাম হয়েছিল। ওই ফিল্টারটি দিয়ে এক জাতির মানুষের চেহারা অন্য আরেকটি জাতির চেহারায় কেমন দেখায় তা প্রকাশ করা হতো। তবে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এটির প্রতি নেতিবাচক সমালোচনা তৈরি হয় এবং পরে অ্যাপটি বাদ দেয়া হয়। অ্যাপটি কোনও ধরণের অভিব্যক্তি ছাড়া মুখকে বা রাগান্বিত অভিব্যক্তিসহ মুখকে হাসিমুখে পরিণত করত। এমনকি এটি মেক-আপ লুকও নিয়ে আসতে পারতো। কৃত্রিম মুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এই অ্যাপটি কাজ করত।

তাহলে সমস্যা কী? সম্প্রতি অ্যাপ ডেভেলপার জশুয়া নজি এক টুইটে অভিযোগ করেন, ফেসঅ্যাপ অনুমতি না নিয়েই ব্যবহারকারীর স্মার্টফোনের সংরক্ষিত ছবি আপলোড করছে। যার পরপরই এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে।

ফরাসি এক সাইবার নিরাপত্তা গবেষক, যিনি ইলিয়ট অ্যালডারসন ছদ্মনাম ব্যবহার করেন, তিনি এই অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করেন।

তিনি দাবি করেন, এ ধরণের বড় মাপের কোনও আপলোডিং হচ্ছে না। ব্যবহারকারীরা যে ছবি জমা দিতে রাজি হয় সেসব ছবি নিয়েই কাজ করে এই ফেসঅ্যাপটি।

ফেসঅ্যাপ বিবিসিকে এটা নিশ্চিত করেছে, ব্যবহারকারীর দেয়া ছবিই শুধু আপলোড করা হয়।

অনেকে বলছেন, ফেসঅ্যাপ দিয়ে ছবি থেকে সংগ্রহ করা তথ্য ফেসিয়াল রিকগনিশন বা মুখের অবয়ব ও গড়ন সম্পর্কে জানতে সহায়তা করে। আর এটা করা যেতে পারে, আপলোড করা ছবি ডিলিট করে দেয়ার পরও। কারণ ওই ব্যক্তির মুখের বৈশিষ্ট্য পুনরায় সংগ্রহ করা যায় এবং এ ধরণের কাজে ব্যবহার করা যায়।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ইয়ারোস্লাব গনশারভ বলেন, ফেসিয়াল রিকগশিন প্রশিক্ষণের জন্য আমরা ছবি ব্যবহার করি না। শুধু ছবি এডিটের জন্য আমরা এগুলো ব্যবহার করি।

এদিকে, ফেসঅ্যাপের যে সার্ভারে ব্যবহারকারীদের ছবি সংরক্ষিত হয় সেটি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। অথচ ফেসঅ্যাপ নিজে একটি রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান যাদের সেন্ট পিটার্সবার্গে অফিস রয়েছে।

সাইবার নিরাপত্তা গবেষক জেন মানচুন ওং এক টুইটে লেখেন, এর ফলে ফেসঅ্যাপ একটি সুবিধা পেয়েছে। কারণ অন্য কারো পক্ষে একই ধরণের আরেকটি অ্যাপ তৈরি করে সেটি কীভাবে কাজ করে তার গাণিতিক হিসাব বুঝা সম্ভব নয়।

এ কথায় সমর্থন জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের স্টিভেন মার্ডক। বিবিসিকে বলেন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য এটা ভালো যে ছবিগুলোকে স্মার্টফোনের মধ্যেই প্রক্রিয়াজাত করা হয়। কিন্তু এটির গতি ধীর হবে, বেশি পরিমাণে ব্যাটারির চার্জ চলে যাবে আর ফেসঅ্যাপ প্রযুক্তিটি চুরি হওয়াও অনেক সহজ হয়ে যাবে।

মার্কিন আইনজীবী এলিজাবেথ পটস ওয়েনস্টেইন বলেন, অ্যাপটির শর্তাবলী অনুযায়ী, ব্যবহারকারীর ছবি বাণিজ্যিক কাজে- যেমন ফেসঅ্যাপের নিজস্ব বিজ্ঞাপন তৈরিতে- ব্যবহার করা যাবে।

কিন্তু টেক সাইট লাইফওয়্যার এর প্রধান সম্পাদক ল্যান্স উলানফ তার যুক্তিতে বলেন, এ ধরণের শর্ত টুইটারের শর্তাবলীতেও রয়েছে।

কিন্তু ব্যবহারকারীরা কি এসব কিছু জানেন? অনেকের কাছে, এটাই হচ্ছে মূল চিন্তার বিষয়।

ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিষয়ক আইনজীবী প্যাট ওয়ালশে, ফেসঅ্যাপের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার এমন শর্তের দিকেই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যেখানে বলা হয়েছে যে, বিজ্ঞাপনের জন্য কিছু কিছু সময়ে ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে।

অ্যাপটিতে রয়েছে গুগল অ্যাডমব, যা ব্যবহারকারীদের গুগলের বিজ্ঞাপন দেখায়। ওয়ালশ বিবিসিকে জানান, এমনভাবে কাজটি করা হয়েছে, যে পদ্ধতিটি আসলে সুস্পষ্ট নয়। আর এর কারণে মানুষ তাদের প্রকৃত অভিমত ও নিয়ন্ত্রণ পেতে ব্যর্থ হয়।

গনশারভ বলেন, ফেসঅ্যাপের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নীতির শর্তগুলো বিশেষায়িত। তিনি বলেন যে, বিজ্ঞাপন আদায়ের জন্য কোনও ধরণের তথ্য বিনিময় করে না প্রতিষ্ঠানটি। এর পরিবর্তে, অ্যাপটি বিশেষ সেবা বা বৈশিষ্ট্যর জন্য সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে অর্থ আয় করে।

ড. মার্ডক বলেন, ফেসঅ্যাপের শর্ত প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যবহারকারীর ছবি ব্যবহারে পূর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে যা চিন্তার বিষয় হলেও অনেকটা স্বাভাবিকই বটে।

এ বিষয়ে ফেসঅ্যাপ কি বলছে? গনশারভ কোম্পানিটির দেয়া একটি বিবৃতি শেয়ার করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে, ফেসঅ্যাপ এডিটিংয়ের জন্য শুধু ব্যবহারকারীর সরবরাহ করা ছবিই ব্যবহার করে। আমরা আর কোনও ছবি স্থানান্তর করি না।

বিবৃতিতে বলা হয়, ফেসঅ্যাপ যেহেতু ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে তথ্য মুছে ফেলার অনুরোধ বাস্তবায়ন করে তাই প্রতিষ্ঠানটির সাপোর্ট টিম খুবই ব্যস্ত সময় পার করছে।

ফেসঅ্যাপ বলছে, তারা ব্যবহারকারীদের এ ধরণের অনুরোধ সেটিংস, সাপোর্ট, ‘রিপোর্ট এ বাগ’ এবং ‘প্রাইভেসি’ সাবজেক্ট লাইনে রেখে তারপর করার অনুরোধ জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ব্যবহারকারীদের তথ্য রাশিয়ায় পাঠানো হয়নি।

যুক্তরাজ্যের তথ্য কমিশনারের দফতর বিবিসিকে জানায়, ফেসঅ্যাপ বিষয়ক উদ্বেগ নিয়ে গজিয়ে ওঠা নানা গল্প শুনেছেন তারা। বিষয়টি তারা বিবেচনা করে দেখছেন।

আইসিও এর এক মুখপাত্র বলেন, আমরা মানুষদের বলব যে কোনও অ্যাপে সাইন আপ করার সময় তাদের ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে ব্যবহার করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত না জেনে কোনও ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে দেবেন না।

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি