‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা নজিরবিহীনভাবে আমাকে বরখাস্ত করেছে’
প্রকাশিত : ১৬:৫৮, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমীর সন্ধান মেলে। মুক্তির পর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমীকে বরখাস্তের আদেশ ‘প্রমার্জনা’ করে এর পরিবর্তে ভূতাপেক্ষভাবে ‘অকালীন (বাধ্যতামূলক) অবসর’ দেওয়া হয়েছে। এই আদেশ প্রদানের জন্য তিনি রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধানকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
ওই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘আমি ৫ম বিএমএ (বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি) লং কোর্সের অফিসার হিসেবে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করি। আমি কখনো আত্মপ্রচার পছন্দ করি না। কিন্তু এখন পরিস্থিতির শিকার হয়ে একান্ত নিরুপায় হয়েই দেশবাসীর কাছে কিছু বিষয় তুলে ধরতে চাই।’
‘কমিশনপ্রাপ্তির সময় সর্ব বিষয়ে সেরা চৌকস ক্যাডেট হিসেবে আমি `সোর্ড অব অনার’, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি পরীক্ষায় কলা বিভাগ থেকে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১ম শ্রেণিতে ১ম স্থান অধিকার করে `স্বর্ণপদক’ এবং রণকৌশলে সেরা নৈপূণ্য প্রদর্শনের জন্য আমি `ট্যাকটিক্স প্ল্যাক’ অর্জন করি। বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর সচিত্র মুখপত্র `সেনানী’ এর জানুয়ারি ১৯৮২ সংখ্যার ৭ ও ৮ নং পৃষ্ঠায় এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যে কোনো অফিসারই এক বাক্যে আমার এই বক্তব্যের স্বপক্ষে সাক্ষ্য দিবেন।’
তিনি লেখেন, ‘আমার কৃতিত্বপূর্ণ এই চাকরির পরও ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালীন আমার মেজর থেকে লে. কর্নেল পদে পদোন্নতি বন্ধ করে রেখেছিল। ২০০২ সালে ৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় এলে আমার লে. কর্নেল পদে পদোন্নতি হয়। পরবর্তীতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আমি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি পাই।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘২০০৯ সালে ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসে। আমি তখন দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার অন্তর্গত খোলাহাটি ক্যান্টনমেন্টে ১৬ পদাতিক ব্রিগেড কমান্ডার এবং পাশাপাশি ষ্টেশন কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করছিলাম। জুন মাসে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন উ আহমেদ অত্যন্ত অপমানজনকভাবে আমাকে আমার পদ থেকে অপসারণ করে পদবিহীন অবস্থায় ঢাকা সেনানিবাসের সদর দপ্তর লজিস্টিক এরিয়ায় সংযুক্ত করে রাখেন।’
‘এর পর, ২৩ জুন ২০০৯ তারিখে এক সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে ২৪ জুন তারিখ ২০০৯ তারিখে আমাকে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে নজিরবিহীনভাবে `বরখাস্ত’ করা হয়। এই আদেশের দ্বারা আমার অবসরের আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য সকল সুবিধাদি থেকে আমাকে বঞ্চিত করা হয়। বিনা অপরাধে, বিনা অভিযোগে, বিনা তদন্তে ও বিনা বিচারে একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তো দূরের কথা একজন সৈনিককেও বরখাস্ত করার কথা নয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তো বটেই, পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার কোনো নজির আছে বলে জানা নেই।’
চিঠির শেষে তিনি লিখেছেন, ‘২৪ জুন ২০০৯ তারিখে আমাকে বরখাস্ত করা ন্যক্কারজনক আদেশ বাতিল করে গত ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে এক সরকারি প্রজ্ঞাপণ জারি করা হয়, যা সেনাসদর কর্তৃক ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে আমাকে অবহিত করা হয়। একই প্রজ্ঞাপনের দ্বারা ২৪ জুন ২০০৯ তারিখ হতে আমাকে অকালীন বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করে আমার অবসরের আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য সকল সুবিধাদি প্রদান করা হয়। আমার উপর যেই সীমাহীন যুলুম করা হয়েছে তার কোনো আর্থিক বা অন্য কোনো প্রতিদান কোনোদিনও সম্ভব নয়। আমার বৃদ্ধা, বিধবা ও অসুস্থ অসহায় মা প্রায় তিন বছর আমার শোকে কাঁদতে কাঁদতে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন।’
‘আমার বরখাস্তের আদেশ বাতিল করে আমাকে অবসর প্রদানের এই আদেশ প্রদানের জন্য আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধানকে আমার এবং আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এর জন্য মহান আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন এই দোয়া করি।’
এসএস//
আরও পড়ুন