ফ্ল্যাট কিনতে গেলে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি
প্রকাশিত : ১৬:৩৩, ১৬ জুন ২০২০
বর্তমান সময়ে রাজধানীতে জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ করা অনেকটা দুরূহ ব্যাপার। একে তো জমির আকাশ ছোঁয়া মূল্য আবার চাহিদামত জমি পাওয়াও খুব সহজ নয়।
তাই স্বল্প খরচের মধ্যে, সাধ ও সাধ্যের মিল রেখে নাগরিক সুবিধা উপভোগ করতে অনেকেই ঝুঁকছেন ফ্ল্যাট ক্রয়ের দিকে। কিন্তু এর মধ্যেও প্রতারিত হওয়া, যথা সময়ে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দেওয়া সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে। তাই কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করার আগে একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে এ ধরনের সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
প্রথমেই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে জায়গায় কোন ভেজাল বা মালিকানাতে কোন সমস্যা আছে কিনা এ বিষয়ে। এছাড়া আপনি মূল মালিকের সঙ্গে লেনদেন করছেন কিনা তাও। একটু সচেতন থাকলে সেগুলো খুব সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
আপনি জমি বা ফ্ল্যাটটি নিজে সরেজমিনে গিয়ে দেখে আসুন। জমির দলিল, পরচা এবং মিউটেশন দেখবেন। জমির মালিকের পরিচয়পত্রের নামের সঙ্গে জমির দলিল বা খাজনার সঙ্গে মিল আছে কিনা তা চেক করুন। ফ্ল্যাট কেনার সময় দেখতে হবে, ভবনের নকশা রাজউক অনুমোদিত কি না। কেননা, নকশা অনুযায়ী ভবন তৈরি না হলে রাজউক সেই ভবনের অবৈধ অংশ ভেঙে দিতে পারে।
বিল্ডিং প্ল্যানের অনুমোদন, বাড়ির কমপ্লিশন সার্টিফিকেট (সিসি), সম্পত্তি করের এনওসি যাচাই-বাছাই করে নিন। বাড়ি/ফ্ল্যাটের ড্রেনেজের অনুমোদন, পানির লাইন, ইলেকট্রিক লাইন এবং মিটারের সক্ষমতা এই বিষয়গুলো ক্রয় করার জেনে নিন।
যাবতীয় তথ্য ভালো করে দেখে নিন। আপনি যে ফ্ল্যাটটা কিনতে যাচ্ছেন সেটা যে জমির ওপর তার মাটির একটা পরীক্ষা করিয়ে নিন। মাটিটা কতটা শক্তপোক্ত সেটা দেখা দরকার। কেননা ইদানিংকালে ঢাকার অনেক পুকুর/জলাশয় ময়লা ফেলে ভর্তি করে বিক্রি অথবা ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে। এসব ক্ষেত্রে মাটির ভাল স্তর পাওয়া না গেলে ঝুঁকি থেকে যায়। তাই এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিন।
বিল্ডার্স বা ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানুন। ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ফ্ল্যাট কেনার সময় অবশ্যই চেষ্টা করবেন প্রথম শ্রেণির কোনো ডেভেলপার নির্বাচন করার। একটু বেশি খরচ হলেও এদের থেকে ফ্ল্যাট কেনার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অভিজ্ঞতা, জনবল দক্ষতা, কাজের তত্ত্বাবধায়ন, উন্নত কাঁচামালের ব্যবহার, অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী, হস্তান্তর পরবর্তী সেবা ও ইন্সটলমেন্ট সুবিধা।
স্থান বা লোকেশন সম্পর্কে ধারণা নিন। যে এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে চাচ্ছেন সেখানের যাতায়াত ব্যবস্থা কি রকম, নাগরিক সুবিধার (হাসপাতাল, ব্যাংক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, পার্ক, খেলার মাঠ) সহজলভ্যতা রয়েছে কিনা তাও দেখে নেওয়া উচিত। সেখানকার নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। আশপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও দূষণ মুক্ততাও বিবেচনায় রাখা উচিত।
যদি গৃহ ঋণ বা ইন্সটলমেন্টে নিতে চান, তবে ভালো করে যাচাই করুন সুদের হার। দরকারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন। সুদের হারে ফাঁকফোকর রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে দামের অনেক তারতম্য রয়েছে। সবদিক ভালভাবে খতিয়ে নিন।
ফ্ল্যাট কেনার সময় টাকা ক্যাশে না দিয়ে যতটা সম্ভব চেকে দেওয়া উচিত। ক্যাশে দিলে সঙ্গে সঙ্গে মানি রিসিপ্ট নিতে ভুলবেন না। আর সেই সঙ্গে আইনগত দিকগুলো ঠিকঠাক যাচাই করে নিলে ঠকার ভয় থাকে না।
বুকিং মানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল হয় চল্লিশ শতাংশ টাকা দিয়ে এগ্রিমেন্ট রেজিস্ট্রি করে নেওয়া। ফ্ল্যাট-প্লট কিনতে ক্রেতার অবশ্যই কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকতে হবে। টিআইএন ছাড়া ফ্ল্যাট-জমি নিবন্ধন করা যাবে না। আর সেই টিআইএনের বিপরীতে নিয়মিত বার্ষিক কর বিবরণী জমা দিতে হবে। ফ্ল্যাট বরাদ্দের নির্দিষ্ট সময় এবং সব শর্তগুলো ভালো করে বুঝে নিতে হবে।
কিস্তিতে ফ্ল্যাট নিলে শেষ কিস্তি পরিশোধের আগেই তার এক মাসের মধ্যে ফ্ল্যাট রেজিষ্ট্রশন দলিল বুঝে নিবেন। তবে যদি কোনো কারণে আপনার কিস্তির সময়সীমা বর্ধিত করতে হয়, তাহলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আগেই আলোচনা করে নিবেন নতুবা আপনি ঝামেলাতে পড়তে পারেন।
ফ্ল্যাট ক্রয়ের চুক্তিতে অবশ্যই যেসব উপকরণ ব্যবহার করা হবে তার বিবরণ থাকতে হবে। প্রণীত অনুমোদিত নকশা আবাসন নির্মাতা দিতে বাধ্য থাকবেন। চুক্তির ভিত্তিতে পছন্দসই ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেবেন এবং আপনার বিনা অনুমতিতে বরাদ্দ করা প্লট বা ফ্ল্যাট পরিবর্তন করতে পারবেন না। চুক্তিতে উল্লিখিত শর্তের বাইরে অতিরিক্ত কোনো অর্থ দিতে আপনি বাধ্য থাকবেন না। যদি কোনো উন্নতমানের সরঞ্জাম সংযোজনের দরকার হয়, তবে দুই পক্ষের পারস্পরিক সম্মতিতে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া যেতে পারে।
এএইচ/
আরও পড়ুন