ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

বইমেলায় বইছে উচ্ছ্বাসের আলোড়ন

মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ

প্রকাশিত : ১২:৩৫, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১৩:০৬, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

দিনে দিনে বইমেলায় পাঠকের পদচারণা বাড়ছে- সংগৃহীত

দিনে দিনে বইমেলায় পাঠকের পদচারণা বাড়ছে- সংগৃহীত

বর্তমানে একুশে টেলিভিশন’র নিজস্ব প্রতিবেদক। তিনি দৈনিক ইত্তেফাক, ডেইলি নিউএইজ, এনটিভি’র কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ছিলেন ও বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি’র নেতৃত্ব দিয়েছেন। একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৭’তে প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘আসমত আলীর অনশন’ প্রকাশিত হয়। তার বহু গবেষণা প্রবন্ধ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থাপিত হয়েছে।

দেশে সাহিত্য প্রেমিদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে। বাড়ছে লেখকের সংখ্যাও। প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় লেখক-কবিদের পাশেপাশি আগন্তুকের ভূমিকায় নতুন লেখকরাও তাদের সৃষ্টি নিয়ে হাজির হচ্ছেন। চলছে মাসব্যাপি অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০। বাংলা একাডেমির আয়োজনে মেলার স্থানিক আয়তন দিন দিন বাড়ালেও তাতে যেন কুলাচ্ছে না। শত সহস্র মানুষের পদচারণায় বিশাল মেলা প্রাঙ্গণকেও এক মুহূর্তেই ছোট মনে হয়। আজ ২২ ফেব্রুয়ারি, মেলার ২০ তম দিন। গতকাল ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর দিনভর জনস্রোত বয়ে যায় বইমেলায়।

শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে মেলা শুরু হয়ে চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত চলে শিশু প্রহর। মেলার এ সময়টা শিশুদের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে বলে এমন নাম দেওয়া হয়েছে। আজ সকাল ১১টায় মেলা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছোট ছোট পায়ের সম্মিলনে প্রাণোচ্ছ্বল হয়ে ওঠে সোহারাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমির অংশ। নিজেদের মতো করে যেন রাজ্য সাজিয়ে রাজা বনেছে শিশু-কিশোররা। অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন স্টল ঘুরে কিনছে পছন্দের বই। বাবার কাঁধে চড়ে শিশু-কিশোররা, কেউ বা মায়, বড় ভাই বা চাচা-মামার কড়ে আঙ্গুল ধরে এসেছে মেলায়। এ সংস্কৃতির এক অচ্ছেদ্ধ সুতার টান। 

শিশু পাঠকদের উপচে পড়া ভীড়ও আছে মেলায়- সংগৃহীত

এক একটা শিশু চেহারায় গাম্ভির্যের রেখা ফুটিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখছে পছন্দের বই। এ এক নন্দন কানন। মেলায় কথা হয় সুরাইয়া ফাতেমা নামের এক ৭ বছরের শিশুর সঙ্গে। মেলায় কেন এসেছো এমন প্রশ্নে বলে, ‘আমার ভালো লাগে। আমি প্রায়ই আসি।’ কি ভালো লাগে এমনটি জানতে চাইলে শিশু সুরাইয়া জানায়, তার সিসিমপুর দেখতে ভালো লাগে। ‘সিসিমপুর’, এক শিশু নাট্য। দেশের শিশুরা টেলিভিশনের পর্দায় দেখে। শিক্ষামূলক এ অনুষ্ঠানের প্রতিটি চরিত্র এখন সামনাসামনি মেলায় দেখা যায়। খুব আগ্রহ নিয়ে চরিত্রের প্রতিটি কর্মকাণ্ড দেখে শিশুরা। গায়ে হাত রেখে ছবিও তোলে। টুটটুকি, হালুম, ইকরিসহ এ অনুষ্ঠানের প্রতিটি চরিত্রের সঙ্গে শিশুদের দারুন মিল। কেউ ভালোবাসে ইকরিকে, কেউ বা হালুমকে। তবে কোন একটি চরিত্র ছাড়া অনুষ্ঠান অসম্পূর্ণ তা যেন শিশুরাও বোঝে।

মেলা কর্তৃপক্ষ জানায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার শিশুদের জন্য শিশু প্রহরের আয়োজন। এ দিনে শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক আয়োজন ‘সিসিমপুর’ সাথে সকাল সাড়ে ১১টায়, দুপুর সাড়ে ৩টায় এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। শিশুদের জন্য এক বিশাল উপভোগ্য অনুষ্ঠান। 

গতকালের মতো আজও বইমেলায় প্রচুর ভীড় হবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশ নয়, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেও দেখা মিলবে উপচেপড়া ভিড়। বইমেলার বাইরে দোয়েল চত্বর-টিএসসি থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে জনস্রোত। দুপুর সাড়ে তিনটার পরপরই বেড়েই চলবে লেখক-প্রকাশক ও পাঠকের এই সমাগম।

প্রকাশক-বিক্রেতারা বলছেন, বইমেলায় একুশে ফেব্রুয়ারির পর দিনও পাঠক-দর্শনার্থীদের স্রোত তৈরি হবে। গতকাল একুশে ফেব্রুয়ারিতে সবাই সাজে ও পোশাকেও ধারণ করেছিলেন একুশ। অনেকের হাতে-মুখে একুশের আলপনা, অনেকেই আবার মাথায় পরেছেন ‘অমর একুশে ফেব্রুয়ারি’ লেখা কাপড়ের ব্যান্ডানা। সাদা-কালো পোশাক তো ছিলই, অনেকের শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে লেখা ছিল ‘অ আ ক খ’ বর্ণমালা।

বই প্রেমীদের অনেকেই স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন লেখকদের সাথে। দলবেঁধে বইমেলার বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দিতে দেখা যায় পাঠক-লেখকদেরও। সোহরাওয়ার্দী  উদ্যান অংশের জলাধারের পাশে বসে প্রিয়জনের সাথে সময় পার করেন অনেক যুগল। উদ্যান অংশে দুপুরে কথা হয় ধানমণ্ডি থেকে আসা আহমদ ও কানিজের সঙ্গে। তারা দুজন পরেছিলেন বাংলা বর্ণমালা ছাপা শাড়ি ও পাঞ্জাবি। এই যুগল জানান, শহীদ মিনার ঘুরে বইমেলায় একটু দেরিতে এসে সারা দিন থাকছেন এখানে। পছন্দের বইগুলো কিনে তারপর বাড়ি ফিরবেন।

প্রতিদিনের মতো আজও পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজন, তরুণ-তরুণী দলবেঁধে হাজির হবেন বইমেলায়। সারাদিনই থাকবে মানুষের ঢল।

পাঠকদের পছন্দ বিভিন্ন লেখকদের নানা ধর্মী বই- সংগৃহীত

শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর, দোয়েল চত্বর অন্যদিকে স্মৃতির স্পর্শে ঘেলা নীলক্ষেত। সবদিক থেকেই মানুষের আগমন ঘটেছিল, আজচও ঘটবে। প্রবেশ পথ অনেকগুলো হওয়ায় দীর্ঘ সময় না হলেও, বেশ কিছুক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে তবেই প্রবেশ করতে হবে মেলা প্রাঙ্গণে। এত ভিড়ে গতকাল বই বিক্রিও নেহাত কম হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। আজও বই বিক্রয় ভালোই হবে বলে আশাবাদি প্রকাশকরা। 

তাম্রলিপি প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি কাজল রায় বলেন, ‘ছুটির দিন অনেকেই স্টলে আসেন। কেউ নির্দিষ্ট কোনো ধরনের বই সাধারণত নেয় না। অনেকেই স্টলে এসেই বই পছন্দ করে বই নিয়ে যায়।’ ছুটির দিনে বই বিক্রি হয় বলেও জানান তিনি। 

আজকের আয়োজন:

আজ মেলার দ্বার খুলছে সকাল ১১টায়। প্রথম দুই ঘণ্টা শিশুপ্রহর। শিশুদের জন্য সিসিমপুরের আয়োজন থাকছে আজও। পাশাপাশি আজ ১১টায় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর।

বিকেল ৪টায় হবে শামসুজ্জামান খান সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ: বহুমাত্রিক বিশ্নেষণ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

মেলায় ভাষা আন্দোলনের বই:

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ভাষা আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন স্টলে নানা বই বিক্রি হচ্ছে। ভাষা আন্দোলনের বই প্রকাশ নিয়ে গুরুত্বারোপ করে ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক ইত্তেফাককে বলেন, ভাষা আন্দোলনের তৃণমূল পর্যায়ের ইতিহাস প্রকাশ হওয়া প্রয়োজন। উনিশশো বায়ান্ন সালের অমর একুশের পর অনেকগুলো বছর চলে গেছে। আজ পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের জেলা পর্যায়ের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস প্রকাশিত হলো না।

বইমেলায় ভাষা আন্দোলনের বই তেমন একটা চোখে পড়ে না- সংগৃহীত

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে বাংলা একাডেমি বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। এরপর পরিকল্পিতভাবে ভাষা সংগ্রাম নিয়ে প্রকাশনা চোখে পড়ে না। ভাষা শহিদদের নিয়ে গ্রন্থমালাও বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে। এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমির স্টলে ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহিদ বিষয়ে ৪২টি বই বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ভাষা শহিদ গ্রন্থ হচ্ছে ১৪টি। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও গবেষণা বিষয়ে বই রয়েছে ১৯টি। বেশ কিছু রয়েছে একুশের প্রবন্ধ ও স্মারকগ্রন্থ।

এমএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি