বনানীর হোটেলে ধর্ষণের অভিযোগ তরুণীর
প্রকাশিত : ১০:৪৩, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৪:৫২, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭
রাজধানীর বনানীতে একটি আবাসিক হোটেলে ফের ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এবার এক তরুণী (৩২) ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। গত ১৩ ডিসেম্বর এ ব্যাপারে বনানী থানায় মামলা করেন তিনি। তবে মামলার বিষয়টি প্রকাশ পায় গতকাল সোমবার। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে সংগীতশিল্পী আনুশেহ আনাদিলের ভাই কুশান ওমর সুফিকে (৩৮)। যদিও এ বিষয়ে আনুশেহর পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো বক্তব্য মেলেনি।
বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবদুল মতিন গণমাধ্যমকে বলেন, মামলার এজাহারে ওই তরুণী বলেছেন, তিনি বনানীর একটি হোটেলে গত ২০ নভেম্বর ধর্ষণের শিকার হন।
সুফির সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। তাকে বিয়ের প্রলোভনে ওই হোটেলে নিয়ে যান সুফি। পরে সেখানে তরুণীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের পর ওই তরুণীকে বিয়ের আশ্বাসও সুফি দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন ওই তরুণী।
কিন্তু এখন সূফির পরিবার তা অস্বীকার করার পাশাপাশি সুফিকে বিদেশ পাঠিয়ে দিতে চাইছে। এজন্য তরুণী মামলা করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন। সুফির পরিবারের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও করেন ওই তরুণী।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ওই তরুণীর সঙ্গে কুশান ওমর সুফির প্রায় দেড় বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাই প্রায়ই কুশানের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেতেন ওই তরুণী। কুশানের বাসায়ও বেড়াতে যেতেন তিনি। একপর্যায়ে ওই তরুণীকে কুশান বিয়ে করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন এবং বাসায় নিয়ে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। গত জুন মাসে কুশান দেশের বাইরে যান এবং সেপ্টেম্বর মাসে দেশে ফিরে ওই তরুণীকে বিয়ে করার আশ্বাস দেন। দেশে ফেরার পর বিয়ের ব্যাপারে কথা বলার জন্য গত ১৯ নভেম্বর ওই তরুণী কুশানের বাসায় যান।
ওই তরুণীর অভিযোগ, এ সময় কুশানের বোন আনুশেহ তাঁকে (তরুণী) বাসায় প্রবেশ করতে নিষেধ করেন। এ সময় কুশান ওই তরুণীকে বাইরে গিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেন। পরে একটি রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়া শেষে রাতে বনানীর একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যান।
ওই তরুণীর অভিযোগ, ওই হোটেলের একটি কক্ষে কুশান তাঁকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ওই খবর পেয়ে কুশানের চাচা পাপ্পু সুফি থানায় আসেন। এরপর ওই তরুণী, তাঁর স্বজনসহ একাধিক ব্যক্তির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন কুশান। পরদিনই ওই তরুণীকে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন।
এজাহারে ওই তরুণী জানান, বিয়ের দিন ধার্য হওয়ায় তিনি ঘটনার বিষয়ে থানায় আর কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি। ওই সময় উপস্থিত সবার সামনেই বিষয়টির মীমাংসা হয়।
তরুণীর অভিযোগ, মীমাংসার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরদিন ২১ নভেম্বর কুশানের বাসায় যান তিনি। কিন্তু কুশানের বোন আনুশেহ আনাদিল, তাঁর স্বামী পান্ডুরাঙা ব্লুমবার্গ ও সাজলী নামে কুশানের এক আত্মীয় তাঁকে (তরুণী) মারধর ও হুমকি দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেন। ওই তিনজন কুশানকে অন্যত্র সরিয়ে দেন এবং আগামী দু-তিনদিনের মধ্যে কুশানকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেবেন বলে জানিয়ে দেন।
এজাহারের শেষে ওই তরুণী আরো অভিযোগ করেন, কুশান তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। এ ছাড়া কুশান যেকোনো সময় দেশ ত্যাগ করতে পারেন বলেও উল্লেখ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান ওই তরুণী।
বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল মতিন এ বিষয়ে জানান, মামলাটির তদন্ত চলছে। ধর্ষণের আলামত পরীক্ষার জন্য ওই তরুণীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া অভিযুক্তকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না।
তার এই অভিযোগের বিষয়ে সুফির পরিবারের কোনো বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। তার বোন আনুশেহর মোবাইল ফোনে সোমবার রাতে কল করেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ব্যবসায়ীর ছেলে সাফাত আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আসার সাত মাসের মধ্যে কামাল আতাতুর্ক সড়কের আরেকটি হোটেলে একই ধরনের ঘটনার অভিযোগ এল।
/ এআর /
আরও পড়ুন