বয়সের ছাপ কি দূর করতে পারে প্লাস্টিক সার্জারি?
প্রকাশিত : ১৫:২৪, ২ জুন ২০২২
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের মধ্যে সৌন্দর্য সচেতনতা অনেক বেড়েছে বলে চিকিৎসকরা বলছেন। একারণে তাদের সৌন্দর্য চর্চা শুধুমাত্র নানা উপকরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, তাদের অনেকে জন্ম থেকে শরীরের কোনো খুঁত সারাতেও শল্য চিকিৎসকের দ্বারস্থ হচ্ছেন।
বাংলাদেশের চিকিৎসকরা বলছেন, এখন নারী ও পুরুষ উভয়েই তাদের শারীরিক সৌন্দর্যের ব্যাপারে নানারকম পদ্ধতির আশ্রয় নিচ্ছেন।
এক সময় এসব চিকিৎসার সুযোগ বাংলাদেশে না থাকলেও এখন দেশেই এসব সেবা পাওয়া যাচ্ছে।
প্লাস্টিক সার্জারি হলো শরীরের কোনো একটি অংশ এমনভাবে ঠিক করা যাতে সেই অংশে কোনো ক্ষত বা ত্রুটি থাকলে সেটা সংশোধন করা যায়। এই প্লাস্টিক সার্জারির দুটি অংশ হচ্ছে কসমেটিক ও অ্যাসথেটিক সার্জারি।
গ্রীনলাইফ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের অ্যাসথেটিক প্লাস্টিক সার্জন ডা. তাসলিমা সুলতানা জানান, প্রধানত মেয়েরা তাদের কাছে আসছেন। শুধুমাত্র ঢাকা নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে, বিভিন্ন শ্রেণির নারীরা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য চিকিৎসকদের কাছে আসছেন।
তিনি আরও বলেন, ''প্রেগনেন্সির পরে দেহে যে পরিবর্তন আসে, সেটার কারণে হয়তো দেখতে বেশি ভালো লাগছে না বা অনেক কাপড় পরতে পারছেন না, ব্রেস্ট হয়তো একটু ঝুলে গেছে, পেটে হয়তো অতিরিক্ত চর্বি জমে গেছে এসব কারণে তারা আমাদের কাছে আসছে।''
সাধারণত স্তন বা পেটের অতিরিক্ত চর্বি সরিয়ে ছোট করা হয়। আবার সিলিকন ইমপ্ল্যান্ট বসিয়ে স্তনের আকার বড় করা হয়। কেউ কেউ নিতম্বের আকার বাড়াতেও আগ্রহী হচ্ছেন। সেক্ষেত্রে শরীরের কোন স্থানের চর্বি নিয়ে নিতম্বে স্থাপন করে দেয়া হয়।
নারীরা যেসব সমস্যা নিয়ে তাদের কাছে আসছেন, তার মধ্যে রয়েছে স্তন বড় বা ছোট করা অথবা টাইট করা, পেটের চর্বি কমানো, চামড়া ঝুলে গেলে বা মাসল ঝুলে গেলে সার্জারি করে বা মেশিনের মাধ্যমে ঠিক করা হয় বলে জানান সার্জন ডা. তাসলিমা সুলতানা।
তবে পশ্চিমা দেশগুলোতে স্তন বড় করার প্রবণতা বেশি থাকলেও বাংলাদেশে নারীদের ক্ষেত্রে এই চিত্র উল্টো। এখানে অনেক নারী স্তনের আকার কিছুটা ছোট করার জন্য চিকিৎসকদের সহায়তা নেন।
আবার কারও কারও ক্ষেত্রে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মুখের চামড়ায় যেসব পরিবর্তন হয়, চামড়া বেশি ঝুলে যাওয়ার মতো সমস্যার ক্ষেত্রে সার্জারি করে ঠিক করে দেয়া হয়।
চিকিৎসক সূত্রে জানা যায়, যারা চিকিৎসা নিতে আসছেন, তাদের সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং খানিকটা উচ্চবিত্ত শ্রেণির।
চলুন দেখে নেওয়া যাক চিকিৎসা করে বয়সের ছাপ কতটা ঠেকানো যায়-
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বা সামাজিক মাধ্যমে সেলিব্রেটিদের সম্পর্কে অনেক সময় লেখা হয় যে, তারা নানা প্রক্রিয়ায় বয়সের ছাপ ঠেকিয়ে রেখেছেন। সাধারণ নারীদের মধ্যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে পরিবর্তন দেখা যায়, তাদের চেহারা বা শরীরে সেটা দেখা যায় না।
কারও কারও ক্ষেত্রে প্লাস্টিক সার্জারি বা কসমেটিক সার্জারির মাধ্যমে বয়সের ছাপ কমিয়ে আনার কথাও বলা হয়ে থাকে।
ডার্মাটোলজি অ্যান্ড অ্যাসথেটিক প্রাকটিশনার ডা. শারমিন রেজা বুবলি গনমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বয়সের ছাপ পুরোপুরি লুকানো বা ঠেকানো যায় না, কিন্তু কিছু অংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
''আগে থেকে সচেতন হলে, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে পারলে বয়সের ছাপ অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়। কিন্তু যারা একটু দেরি করে আসেন, যাদের চেহারায় বা শরীরে অলরেডি বয়সের ছাপ চলে এসেছে, তাদের ক্ষেত্রে সময় বা ট্রিটমেন্ট একটু বেশি লাগে।''
তিনি আরও যোগ করে বলেন,''বাংলাদেশের মানুষ সবসময়েই সৌন্দর্য-প্রিয় ছিল, এখন সেটা আরও বেড়ে গেছে। আমাদের কাছে সবাই আসে সুন্দর এবং হেলদি স্কিন পেতে। সবার একটি কমন চাহিদা থাকে যে কীভাবে তারা উজ্জ্বল সুন্দর স্কিন পেতে পারে।''
এজন্য তারা নানারকম থেরাপি, লেজার ট্রিটমেন্ট, অ্যান্টিএজিং ট্রিটমেন্ট করে থাকেন।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিষয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, চিকিৎসা শাস্ত্র অনুসরণ করে যেসব থেরাপি বা অস্ত্রোপচার করা হয়, সেখানে খুব একটা নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায় না। কিন্তু যারা সেটি অনুসরণ করেন না, তাদের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বিশেষ আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে পুরুষরা এসব চিকিৎসা কতটা নিচ্ছেন তা জানাবার-
ঢাকার একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান জানাচ্ছেন, তারা মাথার চুল প্রতিস্থাপন, ছেলের স্তনের আকার ছোট করা (লাইপোসেকশন) বা পেটের ভুঁড়ি কমানোর চিকিৎসা দিয়ে থাকে।
এই প্রতিষ্ঠানের একজন সার্জন বলছিলেন, এখন অনেক ছেলে নিজেদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে উঠেছেন।
তিনি আরও বলেন, "অনেকেই বড় স্তন বা ভুঁড়ির চর্বি কমানোর জন্য, টাক মাথায় চুল লাগানোর জন্য আমাদের কাছে আসে। আগে এসব চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হতো। কিন্তু এখন আমরাই করছি। আমি বলবো, ছেলেরাও এখন শারীরিকভাবে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনে সার্জারি করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।"
সূত্রঃ বিবিসি
আরএমএ