বর্ষায় হাওরবিলাস
প্রকাশিত : ১৭:৩৫, ৯ আগস্ট ২০১৭ | আপডেট: ১৪:৪২, ১০ আগস্ট ২০১৭
সবুজ পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে ভেসে চলা কার্পাস তুলোর মতো মেঘ। সঙ্গে রয়েছে ঝর্ণার পানিতে এলিয়ে দেয়া ক্লান্ত শরীর, বৃষ্টিস্নাত চা বাগানে গজিয়ে ওঠা নতুন কুঁড়ি। প্রকৃতির এমন মোহনীয় অপরূপ দৃশ্য রয়েছে মৌলভীবাজারে। আর বর্ষাকালে হাকালুকি হাওরের বিল ও নদীগুলো একীভূত হয়ে রূপ ধারণ করে সাগরের ন্যায়। যা আপনাকে দেয় নতুন এক অনুভূতি।
বর্ষাকালে হাওরের পার ও জলাভূমি, বন পানির নিচে ডুবে সৃষ্টি করে ডুবন্ত বন। যা ব্যবহৃত হয় মাছের আশ্রয়স্থল হিসেবে। জেলেরা মেতে ওঠে মাছ ধরার উৎসবে। হাওরপারে বসবাসরত মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা হয় সহজ। সৃষ্টি হয় অন্য রকম উন্মাদনা। যোগাযোগের বাহন হিসেবে স্থান করে নেয় দেশীয় দাঁড়বাহী ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা। বিভিন্ন প্রকার সামাজিক অনুষ্ঠান এই সময় অনুষ্ঠিত হয়। হাওরের জীববৈচিত্র্যের ভাণ্ডারও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ ও প্রাণী পাওয়া যায় এই হাওরে।
জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এ হাওরে নানা প্রজাতির মাছ রয়েছে। বর্ষায় থইথই পানিতে নিমগ্ন হাওরের জেগে থাকা উঁচু স্থানগুলোতে অনেক পাখি আশ্রয় নেয়। আর শীতের সময়ে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখিমেলা বসে হাওরের বুকে। এরপর আপনি হয়তো এগিয়ে চলছেন বৃষ্টিস্নাত মহাসড়ক বেয়ে দূরের পাহাড়ের দিকে, পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে ভেসে চলা কার্পাস তুলোর মতো মেঘ, বৃষ্টির জলে এলিয়ে দেওয়া নাগরিক জঞ্জালে ক্লান্ত শরীরে স্নেহের পরশ বুলিয়ে যাবে আপনার শরীর।
হাকালুকি হাওর মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার পাঁচটি উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত। ২৩৮টি বিল ও নদী মিলে তৈরি হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার একরের এ হাওর। হাওরের ৪০ শতাংশ অংশ বড়লেখা, ৩০ শতাংশ কুলাউড়া, ১৫ শতাংশ ফেঞ্চুগঞ্জ, ১০ শতাংশ গোলাপগঞ্জ ও ৫ শতাংশ বিয়ানীবাজার উপজেলার অন্তর্গত। হাওরের আয়তন ২০ হাজার ৪০০ হেক্টর। ২৪০টি বিল নিয়ে গঠিত হাকালুকি হাওরের বিলগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
পানির মধ্যে ও চারিধারে জেগে থাকা সবুজ ঘাসের গালিচায় মোড়া কিঞ্চিৎ উঁচুভূমি বিলের পানির প্রতিচ্ছবি ফেলে সৃষ্টি করেছে অপরূপ দৃশ্যের। পড়ন্ত বিকেলে রক্তিম সূর্যের আলো আরেক দিকে ত্রিপুরা রাজ্যের ছোট-বড় পাহাড়ের ঢালে লালচে আকাশ। রাখালিয়ারা গরু নিয়ে বাড়ি ফেরা। কোথাও জেলেরা তীরে নৌকা ভিড়াচ্ছে। একদল জেলে নৌকার বৈঠা কাঁধে একপ্রান্তে জাল, অন্যপ্রান্তে মাছের ঝুড়ি বেঁধে গাঁয়ের বাজারের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। পাখির দল এ প্রান্ত হতে ও প্রান্তে ছুটোছুটি। আর কিছুক্ষণ পরেই ডুবে যাবে লাল সূর্য। ঘনিয়ে আসবে সন্ধ্যা। আর আমাদের ঘরে ফেরার সময় হয়ে এলো।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ট্রেনে করে সরাসরি ঢাকা থেকে মাইজগাঁও চলে আশা। জনপ্রতি ৩৪০ টাকা দিয়ে চলে আসতে পারবেন। আর সেখান থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার, এর পরেই পাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের ঠিকানা। হাকালুকি যাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া উপবন এক্সপ্রেস উঠে যাওয়া। নামতে হবে মাইজগাঁও স্টেশনে। এটি সিলেটের ঠিক আগের স্টেশন। ভাড়া নেবে ৩৪০ টাকা। মাইজগাঁও থেকে দুটি উপায়ে যাওয়া যায় হাকালুকি।
ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার হয়ে মাইজগাঁও থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার, বাজারে নেমেই আল মুমিন রেস্টুরেন্টে বসে যাবেন। সেখানে ফ্রেশ হয়ে, হাত-মুখ ধুয়ে নাশতা করে সামনের নৌকাঘাটে চলে আসুন। এখান থেকে নৌকা দরদাম করে উঠে পড়ুন সারা দিনের জন্য। বড় গ্রুপ হলে (১০/১৫ জন) বড় ছইওয়ালা ট্রলার দিন। দিনপ্রতি ভাড়া নিতে পারে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা । কিছু খাবার এবং পানি কিনে নিন, কারণ হাওরে কোনো দোকানপাট পাবেন না। এবার নৌকায় উঠে কুশিয়ারা নদী পাড়ি দিয়ে হাওরে ঘুরে বেড়ান। কুশিয়ারা পাড়ি দিতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগবে।
খাবার-দাবার
আপনি ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারে নেমে আল মুমিন রেস্টুরেন্টে বসে গরম গরম পরোটা আর ডিম ভাজি দিয়ে নাশতা করতে পারেন। আর দূরের বন্ধুদের জন্য রয়েছে খুব কম খরচে পেট পূজার ব্যবস্থা। ৫০ টাকার ভেতরে ডাল, সবজি, মাছ (হাওরের টাটকা মাছ) অথবা মাংস দিয়ে সেরে নিতে পারেন আপনার আহার ক্রিয়া। খাবার শেষ করে আপনি চলে যেতে পারেন নৌকাঘাটে। তার পরে বড় ছইওয়ালা ট্রলার নিন।
//আর//এআর
আরও পড়ুন