বহির্বিশ্বে দক্ষ জনশক্তির ব্র্যান্ডিং করতে হবে : আলমাস কবির
প্রকাশিত : ২২:৫৮, ৩ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১১:৫২, ৭ এপ্রিল ২০১৮
তথ্য ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সরকারি পদক্ষেপও দৃশ্যমান। যার ধারাবাহিকতায় স্কুলগুলোতে সংযোজন করা হচ্ছে কম্পিউটারসহ বিভিন্ন উপকরণ। প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতেও জোর দেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর। এমনই একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হলো বিআইটিএম, যেখান থেকে হাজারো শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে দেশে ও দেশের বাইরে ভালো ক্যারিয়ার গড়েছেন। তাই বিআইটিএমকে একটি বিশেষ ইউনিভার্সিটি পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বেসিসের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আলমাস কবির।
সরকারের নানা উদ্যোগ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের প্রথম সারিতে আছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস)। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে এসেছেন নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আলমাস কবির। যিনি মেট্রোরেল বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তথ্য প্রযু্ক্তির নানা বিষয় জানতে সম্প্রতি তার মুখোমুখি হয় একুশে টেলিভিশন। টেলিভিশনে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকার হুবহু পাঠকের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো।
একুশে টেলিভিশন: প্রথমেই তথ্য ও প্রযুক্তি খাত নিয়ে কথা বলতে চাই। দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে যদি বলতেন?
সৈয়দ আলমাস কবির: আপনারা জানেন আমাদের সকরারের একটা প্রতিজ্ঞা আছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। যার ধারাবাহিকতায় সরকারের বেশ ভাল নজর আছে আমাদের ইন্ডস্ট্রির প্রতি। সে কারণে ইন্ডাস্ট্রিতে এখন অনেক উদ্দীপনা, অনেক উৎসাহ। উৎসাহ ও উদ্দীপনার কারণে কাজও হচ্ছে অনেক। সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায়ে কাজ হচ্ছে। একটা আশার দিক হলো তরুণ–তরুণীরা এখানে উদ্যোক্তা বা চাকরিজীবি হিসেবে খুবই ভালো করছে। তাই সর্বোপরি এটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটা ভালো সময় বলা যায়।
একুশে টেলিভিশন: পরিচালনা পর্ষদের আগেও আপনি ছিলেন। আবারও নতুন দায়িত্বে এসেছেন। সেক্ষেত্রে নতুন লক্ষ্যগুলো সম্পর্কে যদি বলতেন?
সৈয়দ আলমাস কবির: সর্বপ্রথম আমি বেসিসের মধ্যে একটি গ্রোথ ইকোসিস্টেম তৈরি করতে চাই। এই গ্রোথ ইকোসিস্টেমটা এমনি একটা পদ্ধতি যেটার সহযোগিতা নিয়ে এ সেক্টরের যে ছোট ছোট কোম্পানি বা সদস্য আছে, তারা তাদের ব্যবসাকে প্রসারিত করতে পারবেন। যেমন একটি নতুন কোম্পানির জন্য জায়গা থেকে শুরু করে অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। তার জন্য বিনিয়োগের দরকার হয়। ব্যবস্থাপনা দক্ষতা দরকার হয়। সেটার জন্য ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের ব্যাপার আছে। তার আইনি সহায়তার দরকার আছে। এসব সহযোগিতা বা সহায়তা যদি একটি কোম্পানি বেসিস থেকে পায় তবে সে কোম্পানি ব্যবসায়িকভাবে অনেক এগিয়ে যেতে পারবে। আমাদের লক্ষ্য এ সহযোগিতাগুলো নিশ্চিত করা। এই গ্রোথ ইকোসিস্টেমটা যদি নিশ্চিত করা যায় তবে ছোট ছোট কোম্পানিগুলো সমৃদ্ধ হবে। তাতে পুরো আইসিটি সেক্টর সম্প্রসারিত হবে। আমি আগেও প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় এ কাজ শুরু করেছিলাম। এখন সে কাজ আগামী দুই ‘কোয়ার্টারের’ মধ্যে শেষ করতে চাই।
একুশে টেলিভিশন: আইসিটি খাতে ব্যপক কর্মসংস্থানের জায়গা তৈরি হয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা দক্ষ জনশক্তি কতটুকু করতে পেরেছি?
সৈয়দ আলমাস কবির: আগামী ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে যে জায়গায় দেখতে চাই সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রধান শর্ত হলো আমাদের জনবলকে দক্ষ করে তোলা। এ ব্যাপারে আমাদের গ্রোথ ইকোসিস্টেমের পাশাপাশি একটা বাজার গবেষণা দরকার আছে। কারণ আমরা জানি না যে এই মুহুর্তে বাজারে কত টাকার কাজ চলছে। বাজারে আমাদের কত টাকার চাহিদা আছে। কি পরিমাণ দক্ষতার অভাব আছে। গবেষণার মাধ্যমে এ ঘাটতিগুলো খুঁজে বের করতে হবে। তারপর বিভিন্ন সরকারি প্রজেক্ট ও বিআইটিএম’র মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যা আমরা এরই মধ্যে শুরু করেছি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে শুধু আমাদের এ প্রশিক্ষণে কাজ হবে না। তাই আমরা এরই মধ্যে ইউজিসিসহ কয়েকটা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি। আশা করছি তারা বুঝতে পারছেন যে এ ধরণের হাতে কলমের প্রশিক্ষণগুলো একাডেমিক পর্যাযে আনা দরকার।
তবে আমাদের সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করতে হবে দক্ষ জনশক্তির দেশ হিসেবে। স্বল্পমূল্যের শ্রমিকের দেশ হিসেবে চিহ্নিত করলে চলবে না। আমাদের দুই থেকে তিনটা বিষয় চিহ্নিত করতে হবে। আর সেক্ষেত্রেই সবাইকে দক্ষ করে তুলতে হবে। সে অনুযায়ী আমাদের এখন থেকে পরিকল্পনা নিতে হবে।
একুশে টেলিভিশন: কোন কোন ক্ষেত্রে আসলে আমাদের দক্ষতা বাড়ানো দরকার?
সৈয়দ আলমাস কবির: আমাদের চিহ্নিত করতে হবে যে আমাদের আপকামিং টেকনোলজি কি। এ মুহুর্তে হয়তো আমরা একটা টেকনোলজি নিয়ে কাজ করছি। যা নিয়ে বাইরের দেশেও কাজ হচ্ছে। কিন্তু এগুলো নিয়ে যখন ছেলে-মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বের করবো তখন হয়তো অন্য নতুন টেকনোলজি বের হয়ে যাবে। তাই আমাদের ভাবতে হবে এখন থেকে ৫ বছর পর বিশ্বে কী ধরণের টেকনোলজি আসছে। যেমন এখন হয়তো আমরা আইওটি নিয়ে কাজ করছি। আগামীতে আমাদের রোবটিকসহ নতুন কোন বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করা দরকার। আমাদের শিক্ষকদের নয় বরং ইন্ডাস্ট্রি থেকে আইডেন্টিফাই করতে হবে যে, আগামী ৫ বছরে কী ধরণের টেকনোলজি আসবে। সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সেগুলো বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদের পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের ইউনিভার্সিটির সিলেবাসে আনতে হবে। আশা করছি ইউজিসি এটাতে সম্মত হবেন। কারণ মাস খানেক আগে আমরা যে মিটিং করেছি তাতে তাদের একটা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া গেছে। আমরা বিআইটিএম থেকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি কিন্তু আমাদের লক্ষ্য হলো বিআইটিএমকে একটা ইউনিভার্সিটি পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। আগামী ২০২২ না হলেও ২০২৫ সালের মধ্যে এটাকে পূর্ণ ইউনিভার্সিটিতে নিয়ে যাওয়া আমাদের লক্ষ্য। যে ইউনিভার্সিটিটা হবে ইন্ডাস্ট্রির জন্য বিশেষ ইউনিভার্সিটি। যেটা দক্ষ মানবশক্তি গঠনে সহযোগিতা করবে।
একুশে টেলিভিশন: আমরা সফটওয়ার, আউট সোর্সিংয়ের কথা বলছি।এসব সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে সরকারের কোন কোন জায়গায় বেশি নজর দেওয়া দরকার?
সৈয়দ আলমাস কবির: দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে আমাদের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। আমাদের প্রাইমারি স্কুল পর্যায় থেকেই এ বিষয়ে জ্ঞান দিতে হবে। আমরা যদি টেকনোলজি ভিত্তিক জাতি তৈরি করতে চাই, এর সাথে সাথে অবকাঠামোর দিকে নজর দিতে হবে। আমাদের সারা দেশে ফাইবার অপটিক নিয়ে কাজ হচ্ছে। ফোরজি চালু হয়েছে। সরকারের অবশ্যই তথ্য-প্রযুক্তি খাতের আরও উন্নয়নের জন্য কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
একুশে টেলিভিশন: আগামী বাজেটে আপনাদের প্রত্যাশা কতটুকু?
সৈয়দ আলমাস কবির: আমরা বাজেট নিয়ে এরই মধ্যে একটা প্রস্তাবনা দিয়েছি। আরো বিস্তারিত নতুন একটা প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। এটা শুধু আমরা বেসিস একা নয়, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নিয়ে সমন্বিতভাবে একটি বাজেট দিবো। আমরা কয়েকটি বিষয়ে প্রস্তাবনা দিয়েছি। তার মধ্যে ইন্টারনেটের ওপরে ভ্যাট অন্যতম। ১৫ শতাংশ ইন্টারনেটের ওপর ভ্যাট অনেক বেশি। সফটওয়ার আমদানিতে ডিউটি প্রত্যাহারের আবেদন করেছি।
একুশে টেলিভিশন: আপনাকে ধন্যবাদ
সৈয়দ আলমাস কবির:একুশে টেলিভিশনকেও ধন্যবাদ
অনুলিখন-রিজাউল করিম
ভিডিও
/ এআর /
আরও পড়ুন