বাঁশির টানে সমুদ্র ছেড়েছিলেন, আমৃত্যু পাশে চান বাঁশিকেই (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১২:৪০, ৬ মে ২০২২
জাহাজের ক্যাপ্টেন। সাগরের বুকে ভেসে নোঙ্গর করেছেন এদেশ থেকে ওদেশের বন্দরে। কিন্তু এ জীবন তাকে বেঁধে রাখতে পারেনি। মনের টানে নিজের একক প্রচেষ্টায় হয়ে গেলেন উপমহাদেশের নামকরা বংশীবাদক। তিনি বাংলাদেশের গৌরব চট্টগ্রামের বাসিন্দা একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম।
১৬ বছর বয়সে মায়ের আলমারি থেকে ১০ টাকা চুরি করে প্রথম ধ্রুপদী সঙ্গীত শেখেন ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম। সেটি ছিল ১৯৫৯ সালের দিকে। তখন তিনি চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র। আর্য সঙ্গীত সমিতিতে প্রিয়দারঞ্জন সেনগুপ্তের হাত ধরে ছিল তার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিক্ষায় যাত্রা। পরবর্তীতে ওস্তাদ বেলায়েত আলী খানের কাছে কিছুদিন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পাঠ নেন।
ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম বলেন, "ছেলেবেলা থেকে মেলার বাঁশি শুনতাম, ভাটিয়ালি গান যখন রেডিওতে হতো তখন আমি বাঁশির সূর শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম।"
সংস্কৃতিমনস্ক পারিবারিক আবহে বেড়ে ওঠার ফলে ছোটবেলা থেকেই ধ্রুপদী সঙ্গীত শোনার কান তৈরি হয়ে যায় এই শিল্পীর। ফলে ১৯৬২ সাল থেকে প্রায় এক যুগ মেরিন একাডেমিতে জাহাজে চাকরিরত অবস্থায়ও টেপ রেকর্ডারে নিয়মিত শুনতেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। পরম বন্ধুর ন্যায় থাকতো বাঁশি। নিয়ম করে করতেন বাঁশির রেওয়াজ।
ওস্তাদ আজিজুল ইসলামের ভাষায়, "প্রপার গাইডেন্স আমি পাইনি কিন্তু চর্চা করেছি। এটাই স্রষ্টা নিশ্চই দেখেছেন যে ছেলেটা অনেক কষ্ট করছে।"
বাঁশির টানেই একসময় নাবিকের চাকরি ছেড়ে তীরবর্তী এলাকায় চাকরি শুরু করেন ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম। ১৯৭২ সালের পর আর সমুদ্রে যাননি। যুক্ত হন নিবিড় সঙ্গীত সাধনায়। দেশে ও দেশের বাইরে ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, অষ্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের নামি-দামি বিভিন্ন আসরে সঙ্গীত পরিবেশন করেন তিনি। ভারতবর্ষের প্রথম সারির শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পীদের অংশ গ্রহণে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয় ডোভারলেন সঙ্গীত সম্মেলন।
ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম বলেন, "এটিই আমার জীবনের প্রথম বাইরের প্রোগ্রাম।"
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বাঁশির সাথে কাটাতে চান সঙ্গীতপ্রাণ এই শিল্পী।
বলেন, "আমি মনে করি আমার সারাজীবন সুস্থ থাকি, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেনো মৃত্যু পর্যন্ত সুস্থ থাকি এবং শেষ পর্যন্ত এই বাঁশি আমার সঙ্গে থাকে।"
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বিশ্ববিখ্যাত সরদবাদক ওস্তাদ বাহাদুর খানের শিষ্যত্ব নেন আজিজুল ইসলাম। পরে পন্ডিত পান্নালাল ঘোষের ঘনিষ্ঠ শিষ্য পন্ডিত দেবেন্দ্র মুর্দেশ্বর ও পন্ডিত ভি.জি. কার্নাডের কাছে তালিম নেন আজিজুল ইসলাম।
এসবি/
আরও পড়ুন