ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিকভাষা কেন নয়? (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১২, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ও ব্যবহারিক ভাষা করার প্রস্তাব দীর্ঘদিনের। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, চেষ্টা চলছে। তবে কবে নাগাদ এটি হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয় বলেই জানান তিনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণ পরিষদে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব বাংলাদেশকেই আনতে হবে। এক্ষেত্রে অন্যান্য বন্ধু রাষ্ট্রের সমর্থনের প্রয়োজন হবে। সেই সাথে সংস্থাটির সকল নথি অনুবাদের বিশাল খরচও মেটাতে হবে বাংলাদেশকে। 

১৯১৩ সালে বিশ্ব কবির বাংলা সাহিত্যে নোবেল অর্জন, ১৯৫২ মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন, ২১শে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলি-ভাষার জন্যে শাহাদৎ বরণ, জাতিসংঘে ১৯৭৪ এর ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ, ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি।

বাংলাদেশ, ভারত, সিয়েরা-লিয়নসহ বিশ্বের কমপক্ষে ১৫টি দেশের ৩শ’ মিলিয়ন বা ত্রিশ কোটিরও বেশি মানুষের ভাষা বাংলা। সংখ্যার দিক থেকে ৬ষ্ঠ। সমৃদ্ধ সাহিত্য-ভান্ডার তার সাথে ভাষার মর্যাদা রক্ষায় সংগ্রামের ইতিহাস আছে বাংলার। তাই, একে জাতিসংঘের সপ্তম দাপ্তরিক ও ব্যবহারিকভাষা ঘোষণার প্রস্তাব বেশ পুরনো। 

যদিও সংস্থাটির দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা পেতে এখনও সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। এমনকি ১৯৪৫ সালের ইউএন চার্টারের গঠনতন্ত্রেও কোন নির্দেশনা ছিল না। শুরু থেকে এ পর্যন্ত আধুনিক স্ট্যান্ডার্ড-আরবি, অক্সফোর্ড বানানে ব্রিটিশ-ইংরেজি, ফরাসী-ফ্রেঞ্চ, সরলীকৃত চীনা বর্ণমালার চাইনিজ-মান্ড্যারিন, রাশিয়ান, স্প্যানিশ ছয়টি ভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিকভাষা হিসেবে গৃহীত হয়েছে।

তবে ওই ভাষাগুলো জনসংখ্যার ভিত্তিতে সঠিক প্রতিনিধিত্ব করে না। ভাষা হিসেবে অর্ন্তভূক্তির এই দৌড়ে আছে পর্তুগিজ, জার্মান, ইটালিয়ান, জাপানিজ, হিন্দি, উর্দুর মত ভাষা। এখানে কেউ কারো প্রতিদ্বন্ধী না হলেও সবারই আছে নিজস্ব যুক্তি। 

পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। সরকার ও সরকারের বাইরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাকে সপ্তম দাপ্তরিক ভাষা করার আনুষ্ঠানিক দাবি একাধিকবার তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংস্থাটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পেতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এবং পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভায় প্রস্তাবটির সমর্থনে একই ধরনের প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। সমর্থন মিলেছে, অন্যান্য ভাষাভাষী অঞ্চল থেকেও।  

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ভারত কিছুটা অগ্রসর হয়ে আসলো, আর কেউ অগ্রসর হয়নি। আমাদের বাংলা ভাষাভাষী অন্যান্য জায়গায় থাকলেও তারা সরকারে নেই।
 
জাতিসংঘের নথিপত্র সব ক’টি দাপ্তরিক ভাষায় ভাষান্তরিত বা অনুবাদ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোন নতুন ভাষা যুক্ত হলে আগের রেজুলেশনগুলোকে সেই ভাষায় নিতে বিশাল খরচের বিষয় রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খরচের যে পরিমাণটা আমাদের বললো তা আকাশচুম্বী খরচ, কয়েকশ’ কোটি টাকা বছরে। যেগুলো জরুরি তারও একটা হিসাব দিলো সেটাও প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকার মতো বছরে। সেটির বিষয়ে আমাদের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমাদের প্রচেষ্টা চালু রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু দাবি জানিয়ে বসে থাকলেই হবে না। আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি বাংলাদেশকেই সাধারণ পরিষদে তুলতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শিশির ভট্টাচার্য বলেন, বাংলা ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষা, এ ভাষার সাহিত্যের কোন কমতি নেই। কিন্তু আমরা নিজেরা এটি বিশ্বাস করছি না। বাংলার ক্ষেত্রে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া যাবে না। কানাডা কি ইংরেজিতে ছাড় দিচ্ছে, জাপান কি জাপানিতে ছাড়া দিচ্ছে? বাংলাদেশ একটি অদ্ভুত দেশ, এখানে বাংলাকে আমরা ছাড় দেই ইংরেজিকে প্রাধান্য দেই। এই যে দ্বিচারিতা, দেশের মধ্যে যদি এটার সমাধান না হয় জাতিসংঘে বাংলা ভাষা গেল কি না গেল তাতে কি এসে যায়।

তবে, বাংলাদেশের বাড়তি যুক্তি হতে পারে ইউরোপের চারটি ভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিকভাষা হয়েছে, তেমনি অফ্রিকার অনেক দেশ আরবি ভাষায় কথা বলে। এখন শুধু এশিয়ার একটি ভাষাকে দাপ্তরিকভাষা করা কেন নয়?
ভিডিও :

এএইচ/ এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি