বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবের ১০ম দিনে জেলাভিত্তিক পরিবেশনা
প্রকাশিত : ২৩:৫৬, ১২ জানুয়ারি ২০২০
জাতীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টির উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রসারের মাধ্যমে শিল্প-সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বহুমূখী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ৩ থেকে ২৩ জানুয়ারি ২০২০ দ্বিতীয়বারের মতো ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২০’ আয়োজন করেছে। দেশের ৬৪টি জেলা, ৬৪টি উপজেলা এবং জাতীয় পর্যায়ের পাঁচ হাজারের অধিক শিল্পী ও শতাধিক সংগঠনের অংশগ্রহণে ২১ দিনব্যাপী একাডেমির নন্দনমঞ্চে এই শিল্পযজ্ঞ পরিচালিত হবে। ঐহিত্যবাহী লোকজ খেলা, লোকনাট্য ও সারাদেশের শিল্পীদের বিভিন্ন নান্দনিক পরিবেশনার মাধ্যমে সাজানো হয়েছে এই উৎসবের অনুষ্ঠানমালা।
১২ জানুয়ারি উৎসবের ১০ম দিন বিকাল ৪টায় নন্দনমঞ্চে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। এরপরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনায় বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করে শিল্পী সাফিন, শুপ্ত, শুসমি, মেহজাবিন ও জাবের। একক আবৃত্তি করেন শিল্পী নায়লা তারান্নুম কাকলী। র্যাতসেল প্রিয়াংকা প্যারিস এর পরিচালনায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে গৌড়ীয় নৃত্য সারথী। সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে বাংলাদেশ নজরুল সংগীত সংস্থা।
মাদারীপুর জেলার পরিবেশনায় জেলা ব্রান্ডিং ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, ‘বারোমাসে তের পার্বন এবং বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ গানের কথায় ২টি সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পী তনিমা, নূরজাহান, যুথি, পুষ্পিতা, দীবা, রিপন, নাঈমা, শহিদুল, ইমাম ও স্বপন। মাদারীপুর জেলার অঞ্চলিক গান এবং নোঙ্গর ছাড়িয়া গানের কথায় ২টি সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী শুক্তি, নন্দিনী, অংকিতা, মল্লিকা, রূমা, হুমায়ুন, ইয়াকুব, রনি ও মাহাবুব। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী হুমায়ুন খান-বুজিব বাইয়া যাওরে এবং শিল্পী মোহিত খান-কতদিন দেখা হয়না মা। ভূপালী রাগের আলাপে যন্ত্রে সুর তোলেন যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী মিলন নাগ, নিরঞ্জন বালা, লিয়াকত সরদার ও আরিফ হোসেন।
রংপুর জেলার পরিবেশনার শুরুতে জেলা ব্রান্ডিং ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী আহসান হাবীব হারামাইন, উজ্জ্বল, নারায়ণ চন্দ্র বর্মণ ও এখলাস মিয়া দুলু। ‘রঙ্গ রসে ভরপুর হামার বাড়ি রংপুর এবং বাও কুমটা বাতাস যেমন’ গানের কথায় 2টি সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পী নীর মিশু, ইউষা, হিয়া, বর্ণ, শান্ত, জয়দেব, সৌরভ, রুবেল ও পলাশ।‘পূর্ব দিগন্তে সূয উঠেছে এবং শেখ মুজিব শেখ মুজিব’ গানের কথায় ২টি সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী ইসবাহ, বর্ষা, পুতুল, লামিয়া, অপর্ণা, রাকিব, আপেল, রতন, আলমগীর ও দুর্লভ। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী এস এক শানু এবং উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী লুবনা ইয়াসমিন দোয়েল।
পাবনা জেলার পরিবেশনার শুরুতে জেলা ব্রান্ডিং ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী সঞ্জীব দাস নন্দ, প্রিয়তোষ কুণ্ডু, অর্ণব সরকার, সৃষ্টি স্যান্যাল ও আকুশুর রহমান নাজমুল। ২টি সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী প্রদীপ দাস, শফিক উদ্দিন আহমেদ, আমিরুল ইসলাম, সমীর দাস, হালিম বয়াতি, ফুলরেণু রায়, তোজা ফাহমিদা চাঁদনী, তুনশ্রী দাস, শ্যামলী সরকার ও পূজা সরকার। মুন্তাকিম মো: ইব্রাহীম তন্ময় এর পরিচালনায় ‘দেশাত্ববোধক এবং নাইম আহমেদ এর পরিচালনায় পাবনার আঞ্চলিক গানের কথায় ২টি সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পী আজামা শানুহু মৃন্ময়ী, ইসমা উল হুসনা, রিমা আক্তার, রেশমা আক্তার, তানিয়া খাতুন, নাইম আহমেদ, সায়র সিঞ্চন আশিক ও হামিম শেখ। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী পূজন দাস এবং উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী ফুলরেণু রায়। জেলার অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি জন জনাব মুকিত হায়দার।
একাডেমি প্রাঙ্গণে রাত ৮টায় দর্শনীর বিনিমেয়ে মঞ্চস্থ হয় শ্রী মঙ্গলু চন্দ্র রায়ের পরিচালনায় দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী ‘পালাটিয়া’ । বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শ্রী মঙ্গঁলু চন্দ্র রায়, সুমন চন্দ্র রায়, করুণা চন্দ্র রায়, বাবু রাম রায়, নিত্য চন্দ্র রায়, বিরেশ চন্দ্র রায়, তাপস চন্দ্র রায়, কার্তীক চন্দ্র রায়, জলেন চন্দ্র রায় ও গোপাল চন্দ্র রায়। যন্ত্রে সহযোগিতা করেছেন আশারু চন্দ্র রায়, হর কুমার রায়, ধিমান ও প্রভাত।
উৎসবে প্রতিদিন ৩টি জেলা, ৩টি উপজেলা, জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী ও সংগঠনের পরিবেশনা থাকবে। এছাড়াও একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে একটি লোকনাট্য পরিবেশিত হবে। লোকনাট্য উপভোগ করতে টিকিটি বুকিংয়ের জন্য ভিজিট করুন facebook.com/shilpakalaPage
আগামীকাল ১৩ জানুয়ারি ২০২০ বিকেল বিকাল ৪টা থেকে একাডেমির নন্দনমঞ্চে পরিবেশিত হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পিরোজপুর ও কক্সবাজার জেলার সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং রাত 8টায় একাডেমি প্রাঙ্গণে দর্শনির মিনিময়ে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী ‘পুতুলনাট্য’।
গত ৩ জানুয়ারি ২০২০ শুক্রবার বিকেল ৫টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এম. এ. মান্নান; উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, এনডিসি। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন একাডেমির সচিব মো. বদরুল আনম ভূঁইয়া।
বাংলাদেশ হাজার বছরের বর্ণিল ও বিচিত্র সংস্কৃতির অপরূপ লীলাভূমি। হাজার বছরের সেই ঐতিহ্যকে অবলম্বন করে আজও নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে দেশব্যাপী পরিচালিত হচ্ছে আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ। লোকজ সংস্কৃতি আমাদের অন্যতম শক্তি যা বিশ্বব্যাপী আমাদের স্বাতন্ত্রকে জানান দেয়। বাঙালি সংস্কৃতির রূপ, নির্মিত ও পরিবেশনা কৌশল আসলে মিশ্র প্রকৃতির; বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত বিভিন্ন শাসনব্যবস্থা, ভাষা ও প্রকরণের সমন্বয় ঘটে আমাদের সংস্কৃতি আজকের জায়গায় পৌঁছেছে।
২১ দিনব্যাপী বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবের পরিবেশনার মধ্যে রয়েছে সমবেত সংগীত, যন্ত্রসংগীত, ঐতিহ্যবাহী লোকজ খেলা, পালা, একক সংগীত, বাউল সংগীত, ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য, যাত্রা, সমবেত নৃত্য, অ্যাক্রোবেটিক, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা, পুতুল নাট্য, একক আবৃত্তি, শিশুদের পরিবেশনা, বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সংগীত ও নৃত্য, নাটকের কোরিওগ্রাফি, বৃন্দ আবৃত্তি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সম্প্রদায়ের পরিবেশনা, আঞ্চলিক ও জেলা ব্রান্ডিং বিষয়ক সংগীত ও নৃত্য এবং জেলার ঐতিহ্যবাহী ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী।’
আরকে//