ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

দি ডক্টরস্ (ভিডিও)

বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের প্রসার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:০৪, ২২ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১০:১৫, ২৪ এপ্রিল ২০১৮

বাংলাদেশের ঔষধ শিল্প খাত অন্যতম সফল এবং প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রগামী একটি খাত। এই শিল্প দেশের এক গর্ব। বর্তমানে দেশে ৩০০টির অধিক ঔষধ কোম্পানি রয়েছে। আমাদের দেশে মাত্র তিন শতাংশ ঔষধ আমদানি করা হয়। আর বাকি ৯৭ শতাংশ দেশীয় কোম্পানি যোগান দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো বিশ্বের অসংখ্য দেশে পণ্য রপ্তানি করে থাকে। রপ্তানি পণ্যর মধ্যে ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, HFA ইনহেলার, নাসাল স্প্রে, আই ভি ইনফিউসন উল্লেখযোগ্য।

মূলত দেশের ওষুধ শিল্পের প্রকৃত উন্নয়ন শুরু হয় ১৯৮২ সালে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ জারি হবার পর। অসামঞ্জস্য ওষুধের উপর বিধিনিষেধ দেশীয় কোম্পানিকে নিজস্ব পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করেছিল এবং এই অধ্যাদেশ স্থানীয় কোম্পানির উন্নয়ন ত্বরানিত করেছিল। পেশাজীবিদের দৃঢ় মনোভাব, জ্ঞান এবং নতুন আধুনিক চিন্তা এই শিল্পের উন্নয়নের পেছনে কাজ করেছে।

একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) দি ডক্টরস্ অনুষ্ঠানে আজকের আলোচনার বিষয়- বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের প্রসার’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন- মোঃ এবাদুল করিম (ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ)।

দি ডক্টরস্ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন- অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ

শ্রুতিলিখন করেছেন- সোহাগ আশরাফ

প্রশ্ন : আপনাদের সকলের অক্লান্ত পরিশ্রমে বাংলাদেশে এখন অনেক ঔষুধ কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একজন ডাক্তার রোগী দেখার পর তার জন্য যখন ঔষুধ লেখেন তখন কি তার কাছে কোন দ্বিধা কাজ করে যে- আমি যে ঔষুধটি লিখছি তার মান কতটুকু, রোগি এই ঔষুধে সুস্থ হবে কি না? মানে আমি দেশের ঔষুধের মানের কথা জানতে চাই।

উত্তর : একজন চিকিৎসকের জন্য রোগীর নিরাপত্তা ও নিরাময় বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি বাংলাদেশের ঔষুধের মান নিয়ে কথা বলার আগে একটু পেছনের কথা টানতে চাই। ১৯৮২ সালের ঔষধ নিয়ন্ত্রণ অ্যাধাদেশ জারি হবার আগ পর্যন্ত আমরা জানি যে বাংলাদেশে উৎপাদিত ঔষুধের প্রায় ৮০ ভাগই মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানী নিয়ন্ত্রণ করতো। এমনকি ভিটামিন সিরাপ থেকে শুরু করে অ্যান্টাসিড পর্যন্ত এই মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীগুলো প্রডিউস করতো এবং তারাই মার্কেটিং করতো। ড্রাগ পলিসির পর বাংলাদেশের ফার্মা ইন্ডাস্ট্রির লোকাল এন্টারপ্রেনার যারা তারা এগিয়ে আসলেন। ওই সময় লোকাল কোম্পানিগুলো বেশ সুযোগ পায়। ধীরে ধীরে তারা তাদের সক্ষমতা বাড়াতে থাকে। তখন চিকিৎসকদের মনে একটা ভয় কাজ করতো। আমাদের ঔষুধগুলো কাজ করবে কিনা? চিকিৎসকদের মধ্যে আস্থা অর্জটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই সময় সহজেই চিকিৎসকরা আমাদের ঔষুধ হাতে নিতে না। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েই লোকাল কোম্পানিগুলোকে আস্থা অর্জন করতে হয়েছে।

আর আজকের প্রেক্ষাপট যদি বলি- এখন ৯৮ ভাগই আমাদের লোকাল কোম্পানিগুলো থেকে সাপ্লাই দেওয়া হয়। এতো বিপুল পরিমাণে ঔষুধ আমাদের রোগীরা গ্রহণ করছেন এবং আমাদের চিকিৎসকরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই তা লিখছেন।

প্রশ্ন : উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ, এই দুই দেশের মধ্যে যদি তুলোনা করি, আমরা তো এখন উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি, আমাদের ঔষুধ শিল্পের মান এবং সক্ষমতা কতটুকু বলে মনে করেন?

উত্তর : ঔষুধের মানের কথা যদি বলি- এক এক দেশের রেগুলেশন এক এক রকম। আমরা ধরে নেই যে ইউএসএফডিএ অর্থাৎ সর্বচ্চ মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার স্বীকৃতি আমরা পেয়েছি। এটি পাওয়া মানেই বিশ্বমানের কাছে চলে যাওয়া। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ উৎপাদনকারী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিজস্ব পলিসি আছে। তাদের ড্রাগ রেজুলেশন আছে। জাপানের আছে। চীনের নিজস্ব আছে। বাংলাদেশেরও নিজেস্ব রেগুলেশন রয়েছে। বাংলাদেশ ডাব্লিউএইচও এর রেগুলেশন ফলো করে। আমরা বিশ্বের প্রায় ১০০টির বেশি দেশে আমাদের ঔষুধ রপ্তানি করে থাকি।

প্রশ্ন : বাংলাদেশে ঔষুধ শিল্পকে প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। এতে করে এই শিল্পটার উপর কি প্রভাব পড়বে এবং সরকারের এ বিষয়ে কি করার আছে?

উত্তর : আমি বলবো- সরকার অত্যান্ত ভালো একটি কাজ করেছে। যখন সরকারের দৃষ্টি কোন একটি সেক্টরের উপর পড়ে তখন সেই সেক্টরটি খুব সহজেই এগিয়ে যেতে পারে। এর আগে সরকার পোশাক শিল্পকে বেশ সাপোর্ট দিয়েছে। আর সেজন্যই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আমাদের সরকার চামড়া শিল্পকে সাপোর্ট দিয়েছে। তারাও ভালো করছে। ঔষুধ শিল্প নিজে নিজেই যথেষ্ট উন্নয়ন করেছে। কিছু বিষয় আছে যে দিকে নজর ‍দিলে আরও সাফল্য অর্জন করা যাবে। সর্বপরি সরকার যে উদ্যোগটি নিয়েছে তা খুবই প্রশংসনিয়। এখানে সরকারের অনেক কিছুই করার আছে।

প্রশ্ন : আমাদের দেশের অনেক রোগীই আছে যারা দেশীয় ঔষুধ খেতে চায় না। এ অবস্থায় আস্থা অর্জনের জন্য আপনারা কি করছেন?

উত্তর : এ বিষয়ে আমাদের অনেক কিছুই করার আছে। আস্থা অর্জনের জন্য আমরা কাজও করছি। তবে আমি বলবো- আমাদের পণ্যের মান কিন্তু অনেক ভালো।

যদিও একটা সমস্যা আছে। আমাদের মধ্যে একটা প্রবণতা হচ্ছে আমরা বিদেশী পণ্যের প্রতি বেশ আগ্রহী। যেমন ধরুণ আমাদের পোশাক কিন্তু বিশ্বের উন্নত দেশে রপ্তানি হচ্ছে। তারপরও আমরা বিদেশ প্রিতি দেখাই। মেড ইন বাংলাদেশ অনেকেরই পছন্দ না। এ জায়গা থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে।

প্রশ্ন : বাজারে কিন্তু অনেক ভেজাল, নকল ঔষুধ রয়েছে। তাদের বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?

উত্তর : এটা একটি বড় ইস্যু। সম্প্রতি আমরা দেখেছি সরকার প্রায় ২৮টির মত কোম্পানিকে উৎপাদনের লাইসেন্স বাতিল করেছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণ যদি আরও কঠর এবং বিস্তৃত হয় তবে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে। তাছাড়া এই সেক্টরে সরকারের লোকবলও কম রয়েছে। আমার বিশ্বাস সরকার এই বিষয়টি মাথা রেখে লোকবল নিয়োগ দিবে।

বিস্তারিত দেখতে নিচের ভিডিওটি ক্লিক করুন :

 

এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি