ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়েই মরতে চান লুসি হল্ট

প্রকাশিত : ১৯:০৪, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

১৯৭১ সালে চিঠি লিখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার চিত্র জানিয়েছিলেন বিদেশিদের। নিজে ভিনদেশী হয়েও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়েছিলেন।

তিনি বৃটিশ নাগরিক লুসি হল্ট। বর্তমানে থাকেন বরিশালের অক্সফোর্ড মিশন চার্যের হোস্টেলে। যুদ্ধের পর তার দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও ভালোবেসে থেকে গেছেন এ মাটিতেই।

মুক্তিযুদ্ধের পর ৪৭টি বছর পেড়িয়ে গেলেও তিনি পাননি এদেশের নাগরিকত্ব। তার জীবনের শেষ আশা এদেশের নাগরিক হয়েই মরতে চান।

লুসি হল্ট জানান, ইংল্যান্ডের নাগরিক তিনি। স্বল্প সময়ের জন্য সামাজিক কাজ করতে এসেছিলেন বাংলাদেশে। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে যান বাংলাদেশে।

যশোরের ফাতেমা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় অংশ নিয়ে অবদান রেখেছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। গভীরভাবে ভালোবেসে ছিলেন বাংলাদেশকে। তাই এদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিদেশিদের সমর্থন চেয়ে স্বজনদের কাছে দিয়েছিলেন চিঠি।

তিনি জানান, ৭১ সালের ২ মে এই চিঠিটা লুসি তার মায়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন। মা মারা গেলে পরবর্তীতে লুসির বোন চিঠিটা ফেরৎ দেন লুসিকে। সে কারণেই সংরক্ষণে রয়েছে চিঠিটা। যেখানে লুসি উল্লেখ করেছিলেন বাঙালীরা পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ চায় না। পাকিস্তানি নয় বাঙালী হয়ে স্বাধীনভাবে বাচঁতে চায় তারা। যোগ্য নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে পেয়েছে বাঙালিরা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে একমত প্রকাশ করে লুসি আরও প্রকাশ করেছিলেন পাক বাহিনীর হাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলার ভয়াবহতার তথ্যও।

এ চিঠি পেয়ে সেময় লুসির পরিবার ইংল্যান্ডে ফিরতে বললেও যাননি লুসি। বরং অন্য দেশে থাকা বন্ধুদের চিঠিতে জানানবাংলাদেশ স্বাধীন হবার যৌক্তিকতা।

স্বাধীনতার পরেও যশোর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিরবে কাজ করেছেন মানবকল্যাণে। এসবের কোনো স্বীকৃতি পাননি তিনি।

লুসি জানান, বঙ্গবন্ধুর প্রেরণা ছিলেন স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা। যুদ্ধ শেষে মিসেস রহমানকে উপহার পাঠিয়েছিলেন লুসি। জবাবে ১৯৭৩ সালের ২০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ রেহানার সই করা একটি চিঠি পেয়েছিলেন বলে দেখান লুসি। সে চিঠিতে লুসিকে ধন্যবাদ জানান শেখ রেহানা।

স্মৃতি হিসেবে ধরে রেখেছেন এসব চিঠি। ৪৭ বছর পার হতে চললেও কাউকেই এগুলো দেখাননি তিনি। তার এখন একটি-ই চাওয়া বাংলা মাটিতে শেষ বিদায়। সে জন্য তিনি বরিশালের মাটিতে কবরস্থ করার জন্য নির্দিষ্ট স্থানও ঠিক করে রেখেছেন। তার প্রত্যাশা বাংলাদেশ তাকে দ্বৈত নাগরিকত্ব দিবে।

গত বছর বরিশালের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ডক্টর গাজী মো: সাঈফুজ্জামান তার সঙ্গে দেখা করে পাশে দাড়াঁনোর প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এই একবছরেও সমাধান হয়নি তার নাগরিকত্বের আবেদনের।

এ প্রসঙ্গে বর্তমান জেলা প্রশাসক মো: হাবিবুর রহমান জানান, তিনি বরিশালে নতুন এসেছেন। তাই এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন তিনি। দিনি আরও জানান, দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে ইংল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি রয়েছে।তাই এবিষয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আগামী মার্চের মধ্যে তার নাগরিকত্বের বিষয়টি সমাধান হবে।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি