বাংলাদেশের পতাকা বিশ্বের কাছে তুলে ধরছেন নাজমুন
প্রকাশিত : ২৩:১২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৯:৪৩, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮
নাজমুন নাহার সুপরিচিত একটি নাম। বিশেষ করে ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে। সারা বিশ্ব ভ্রমণের উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি একের পর এক দেশ ভ্রমণ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরেছেন সারা বিশ্বে। তিনি বিশ্বাস করেন- ‘স্বপ্ন দেখলে আর তার জন্য কাজ করলে পৃথিবীতে সবই সম্ভব’।
ইতোমধ্যে তিনি শতাধিক দেশ ভ্রমণ করেছেন। পৃথিবীর বাকি দেশগুলোও ভ্রমণের স্বপ্ন দেখেন তিনি। সম্প্রতি তার সঙ্গে কথা হয় একুশে টেলিভিশন অনলাইনের।
তার জন্ম ১৯৭৯ সালের ১২ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার গঙ্গাপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। ব্যবসায়ী বাবা মোহাম্মদ আমিন ২০১০ সালে পৃথিবী ছেড়ে গেছেন। মা তাহেরা আমিন। তিন ভাই এবং পাঁচ বোনের মধ্যে নাজমুন নাহার সবার ছোট।
ছোটবেলা থেকেই নাজমুন নাহার মেধাবী এবং বিনয়ী হিসাবে সবার কাছে পরিচিত। নন্দনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাশের পর কৃতিত্বের সহিত জেলা বৃত্তি নিয়ে উত্তীর্ণ হন। দালাল বাজার নবীণ কিশোর (এনকে) উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে এসএসসি এবং লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে কিছু দিন সাংবাদিকতা করেন। পরে ২০০৬ সালে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য সুইডেনে যান। সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এশিয়ান স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন!
এক আদর্শ পরিবারের ছোট সন্তান হিসেবে নাজমুনের বেড়ে ওঠা। বাবার উৎসাহ ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তিনি থেমে নেই লাল সবুজের পতাকা হাতে চলছেন দুর্বার গতিতে। বুকে তার বাংলাদেশে। হাতে লাল সবুজের পতাকা। বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি বাংলাদেশের কথা, মানবতার কথা, বিশ্ব শান্তির কথা। তিনি বিশ্বাস করেন `ওয়ান আর্থ ওয়ান ফ্যামিলি`!
নাজমুন নাহার এ পর্যন্ত ১০৮টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। সম্প্রতি তিনি ঘুরে এসেছেন সেন্ট্রাল এশিয়ার কয়েকটি দেশে। জর্জিয়া, আর্মেনিয়া কাজাখস্তান।
নাজমুনের ভ্রমণ যাত্রা এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে। তার ভ্রমণকৃত দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ম্যাজিক্যাল সংখ্যায়। এই যাত্রার মধ্যে দিয়েই নাজমুনের শেষ হবে পুরো সেন্টাল এশিয়া ভ্রমণ। ১১১তম ম্যাজিক্যাল সংখ্যার ভ্রমণ যাত্রায় উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতের আশাবাদ ব্যক্ত করেন নাজমুন।
ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, স্কুল, কলেজ ও সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনে তার মোটিভেশনাল স্পিসের মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া জমিয়েছেন। জনপ্রিয়তা ছুঁয়ে যাচ্ছে তার এই পৃথিবী ভ্রমণের গল্প। এযাবৎ তিনি পেয়েছেন বহু অ্যাওয়ার্ড। `ইন্সপেরেশন গ্লোবাল ফাউন্ডেশনের` মাধ্যমে তিনি তার এই উদ্যোগকে বাংলাদেশে শিশু কিশোর, তরুণ-তরুণীদেরকে তাদের স্বপ্নের যাত্রা পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য কাজ করে যাবেন। তরুণদের নিয়ে নাজমুনের এই অগ্রযাত্রার ভাবনা আলোকিত করবে আমাদের অনেক মানুষকেই। যে নারী মৃত্যু ভয়ে পিছিয়ে যাননি, বাংলাদেশের পতাকা হাতে জয় করে চলছেন এক এক করে প্রতিটি যাত্রা।
বাংলাদেশের পতাকা হাতে তিনি বিশ্ব শান্তির এক অনন্য দূত হিসাবেও কাজ করে যাচ্ছেন সারা বিশ্বে। ২০০০ সালে ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল এডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে তার প্রথম বিশ্বভ্রমণ শুরু হয়। সে সময় তিনি ভারতের ভুপালের পাঁচমারিতে যান। এটিই তার জীবনের প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। বিশ্বের ৮০টি দেশের ছেলেমেয়ের সামনে তখন তিনি প্রথম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। সেই থেকে বাংলাদেশের পতাকা হাতে তার বিশ্ব যাত্রার শুরু। ২০১৮ সালের ১ জুন নাজমুন একশ দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করেন পূর্ব আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়েতে। তিনি বাংলাদেশের পতাকা হাতে জাম্বিয়ার সীমান্তবর্তী লিভিংস্টোন শহরে অবস্থিত পৃথিবীর বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের ব্রিজের ওপর দিয়ে পায়ে হেঁটে জিম্বাবুয়েতে পৌঁছান। ইতিহাসে তার শততম দেশ ভ্রমণের সাক্ষী হয়ে রইলো এই ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত।
নাজমুন কাছে শততম দেশ ভ্রমণের সেই অনুভূতি। তিনি বলেন, সেই দিন বাংলাদেশের পতাকা হাতে যেন আমি একা হাঁটিনি সেই দিন হেঁটেছিলো বাংলাদেশের ষোলকোটি মানুষ আমারসঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারানো সমস্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা। সেই দিন শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেছি আমাদের মহান নেতা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে। শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেছি যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন পতাকা তলে বেড়ে উঠেছি সেইসব যোদ্ধাদের। আর তাদের জন্যই আমরা পেয়েছি একটি লাল সবুজের পতাকা।
এসএইচ/
আরও পড়ুন