বাউল দর্শনকে ভয় পেয়েই বার বার হামলার ঘটনা (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১৪:৪১, ২৪ নভেম্বর ২০২২
মূলোবোধের অভাব, ধর্মীয় গোড়ামি ও পরমত অসহিষ্ণুতার কারণে বার বার বাউলদের উপর হামলা হচ্ছে বলে মনে করেন শিল্পীরা। ধর্মান্ধরা ভুল ব্যাখা দিয়ে সাধারণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে দিচ্ছে সাধকদের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাউল দর্শনকে ভয় পেয়েই মূলত এইসব হামলা চালাচ্ছে একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী।
সূফি-সাধক, আউল-বাউলের চারণভূমিতেই রক্তাক্ত হচ্ছে ভাববাদী সাধকরা। লালন-হাছন আর রবীন্দ্রনাথের অসাম্প্রদায়িক দর্শন, হাজার বছরের সম্প্রীতি আর সৌহার্দে্যর পত্তন করে যারা লালন করছেন মা, মাটি আর মানুষের প্রেম- তাদেরই লাঞ্ছিত করে মৌলবাদের আতুড়ঘর বানাতে চাইছে ধর্মান্ধরা!
সাম্প্রতিক সময়ে কুষ্টিয়াসহ বেশকিছু এলাকায় আসর বসাতে বাঁধা দেয়া হয়েছে বাউলভক্ত-সাধক-অনুসারিদের। হামলা করা হয়েছে বাড়িঘরে। রক্তাক্ত করা হয়েছে নারী-পুরুষদের। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার সূচনা ১৯৪২ সাল থেকেই। শুধু বাউলই নয়- সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেরও বিরোধী এই গোষ্ঠী।
ভক্তি আর প্রেমের বাণী ছড়িয়ে মানুষের ভালোবাসার জয়গান যারা গাইছেন- যারা বিশ্বাস করেন মানুষই প্রেম ও প্রার্থনার আঁধার বার বার তাদেরকেই কেন টার্গেট করছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি!
বাউল ডলি মণ্ডল বলেন, “সনাতন থেকে বৈষ্ণব হয়ে বাউল, আরেকটি হলো ইসলাম থেকে সূফি হয়ে বাউল। দুটি মোহনা এক জায়গায় হয়ে একটি শক্তি সৃষ্টি হচ্ছে। যারা মৌলবাদ তারা ভয় পায়।”
ধর্মের নামে ভণ্ডামি আর সমাজের লুকিয়ে থাকা যে সাম্প্রদায়িক পোকার বাস- তারাই নষ্ট করছে দেশের সম্প্রীতি।
প্রখ্যাত বাউল শফি মণ্ডল বলেন, “সত্য পদ যদি অবলম্বন করি, সেটা সব ধর্মেই বলবে। একজন বাউল কখনো সমাজে খারাপ কিছু চায় না। সৃষ্টির সেরা জীব তাকে যদি আমরা ভালো না বাসি তাহলে আল্লাহকে কি করে ভালোবাসবো।”
সাম্প্রদায়িকতার কবল থেকে বাঙলার সংস্কৃতিকে বাঁচাতে হলে ভাববাদি দর্শনের আরও প্রসার দরকার বলে মনে করেন এই বাউল।
শফি মণ্ডল বলেন, “মানুষকে জোর করা, মারা, আঘাত করা, রগ কেটে দেয়া এটা কোনো ধর্ম হতে পারে না। ভালো থাকার ম্যাসেজগুলো যখন মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে তখন ধর্মান্ধ মানুষরা বিপদে পড়ে যাবে।”
তবে হামলা-নির্যাতন যতই প্রবল হোক- বাঁধা অতিক্রম করেই চলবে সাধনা, এমনই মত তাদের।
এই বাউল আরও বলেন, “না পারি সংসারে যেতে, না পারি অন্য কোথাও যেতে। এই পথ বেছে নিয়েছি, আমরা এই পথেই আছি। ওরা মেরে ফেললো আমরা এই পথেই থাকবো।”
এএইচ