ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বাঘ বিধবাদের দুঃখ কষ্টের খবর রাখে না কেউ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:১৩, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ | আপডেট: ১৫:২৯, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

খুলনার কয়রা’র কয়েকজন বাঘ-বিধবা- সংগৃহীত

খুলনার কয়রা’র কয়েকজন বাঘ-বিধবা- সংগৃহীত

বাঘের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাদের জীবনপঞ্জি। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আক্রমণে যাদের স্বামীর প্রাণ যায়, তারা বাঘ-বিধবা নামে পরিচিত। বন লাগোয়া গ্রামগুলোতে তাদের বসবাস। কুসংস্কারের কারণে এ সব নারীকে অলক্ষ্মী বা অপয়া বলে মনে করা হয়। এক ঘরে হয়ে দুর্ভোগকবলিত জীবনযাপনে বাধ্য হতে হয় তাদের।

খুলনার কয়রা উপজেলায় বাঘ বিধবা আছেন ৭৫০ জন। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় বাঘ-বিধবার সংখ্যা ১ হাজার ১৬৫। এ ছাড়া বনসংলগ্ন বাগেরহাটের মোংলা, মোড়েলগঞ্জ এবং শরণখোলা এবং খুলনার দাকোপ উপজেলায় বাঘ-বিধবা থাকলেও সঠিক পরিসংখ্যান নেই। স্বামী হারানো এসব নারীর সবার অবস্থাই শোচনীয়।

২০০৮ সালে সুন্দরবনে মাছ শিকারে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হয় খুলনার কয়রা উপজেলার আব্দুল গফ্ফারের। বাঘ-বিধবা হওয়ায় দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে পারেননি তার স্ত্রী রোকেয়া খাতুন। লাঞ্ছনার এখানেই শেষ নয়। তার কপালে জোটেনি সরকারি বিধবা ভাতাও। সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে দিনমজুরি পর্যন্ত করতে হয়েছে রোকেয়াকে। বাঘ বিধবার তকমা নিয়ে এমন দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার হাজারো নারীকে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, সুন্দরবন অঞ্চলে বাঘের আক্রমণে স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় বিধবা হওয়ার হার কমেছে। তবে আগে বাঘ-বিধবা হওয়া নারীদের দুর্দশা ঘোচানো যায়নি। সেলাই প্রশিক্ষণ দেয়াসহ বিভিন্নভাবে তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে।

বাঘ-বিধবা নামে পরিচিত নারীরা জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে সংসার চালানো ও সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য কঠিন জীবনসংগ্রাম করতে হচ্ছে তাদের। নদী-খালে মাছের পোনা ধরা, দিনমজুরি কিংবা অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে টেনেটুনে সংসার চলছে।

রোকেয়া বেগম বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মেয়ে ও ছেলেকে মানুষ করতে হচ্ছে। কখনও নদীতে মাছ ধরেছি, কখনও দিনমজুরিও করেছি।’ কয়রার আরেক বাঘ-বিধবা আম্বিয়া খাতুন বলেন, ‘২২ বছর আগে আমার স্বামী আমজাদ হোসেন সরদার সুন্দরবনে মাছ শিকারে গিয়েছিলেন। বাঘের হামলায় তিনি মারা যান। এরপর তিন মেয়েকে নিয়ে শুরু হয় নতুন যুদ্ধ, যা এখনও চলছে।’ এ পর্যন্ত তিনি বা আশেপাশের কোনও বাঘ-বিধবা নারী সরকারি ভাতা পাননি।

সূত্র জানায়, বনজীবীরা এখন আর আগের মত অবাধে সুন্দরবনে যেতে পারছেন না। সুন্দরবনেও বাঘের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এখন বাঘের আক্রমণে বনজীবী মৃত্যুর ঘটনাও কমেছে। এ কারণে সুন্দরবন অঞ্চলে বাঘ-বিধবা হওয়ার হার কমেছে। দেরিতে হলেও কতিপয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ও সংগঠন বাঘ-বিধবাদের ভাগ্য বদলানোর কাজে এগিয়ে এসেছে। এর একটি হলো ইনিশিয়েটিভ ফর কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট (আইসিডি)। সম্প্রতি এই সংগঠনটি রোকেয়া বেগমসহ ৪০ জন বাঘ-বিধবাকে মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন ও কাপড় দিয়েছে। শ্যামনগর উপজেলায় বাঘ-বিধবাদের নিয়ে কাজ করছে আরও একটি এনজিও।

আইসিডির প্রতিষ্ঠাতা আশিকুজ্জামান জানান, বাঘ-বিধবাদের জন্য কিছু করার চিন্তাভাবনা থেকেই তারা এ উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে কয়রায় কার্যক্রম সূচিত হয়। এর অংশ হিসেবে বাঘ-বিধবাদের সেলাই প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন দেয়া হয়েছে। 
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো: বশির আল মামুন বলেন, ‘বর্তমানে সুন্দরবনে বনজীবীদের প্রবেশে অনেক বিধিনিষেধ রয়েছে। তারা জঙ্গলে সহজে ঢুকতে পারে না। তাই এখন বাঘের আক্রমণের শিকার হওয়ার তেমন তথ্যও পাওয়া যায় না। সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি ও বাঘের অবাধ বিচরণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।’ কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ূন কবির বলেন, ‘বাঘ-বিধবাদের তালিকা তৈরির কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বাঘ-বিধবাদের পুনর্বাসন করা হবে।’
(বাসস)

এমএস/


 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি