বাঙালির অনন্য ঐতিহ্য ‘হালখাতা’
প্রকাশিত : ১২:৩৯, ১৩ এপ্রিল ২০২১
হালখাতা আবহমান বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতি। পুরনো হিসাবের খাতা বন্ধ ও নতুন হিসাবের খাতা খোলার আনন্দ-আয়োজন, সঙ্গে আপ্যায়ন ও আনুষ্ঠানিকতার নামই হালখাতা। প্রত্যেক চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সব খাজনা, মাসুল বা কর পরিশোধ করা হতো। এর পরের দিন পয়লা বৈশাখে ভূমির মালিকেরা নিজেদের অঞ্চলের প্রজা বা অধিবাসীদের মিষ্টি, মিষ্টান্ন, পান-সুপারি দিয়ে আপ্যায়ন করতেন। সময়-সুযোগ আর পরিবেশ মিলে যোগ-বিয়োগ ঘটে অনেক ঐতিহ্যের। কিছু ঐতিহ্যের শিকড় এত গভীরে যে আধুনিকতার শত ঝাঁপটায়ও টিকে থাকে প্রাচীন বটবৃক্ষের মতো। তেমনই একটি হলো হালখাতা।
সমাজের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব পালনে আড়ম্বরতায় ভাটা পড়েছে বটে, তবে কোথাও কোথাও এখনো বাঙালির চিরচেনা এ ঐতিহ্য টিকে আছে স্বমহিমায়। পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী মহলেও রয়েছে হালখাতার রীতি রেওয়াজ। বছরের প্রথম দিনে ক্রেতাদের আপ্যায়নের মাধ্যমে তারা খাতা হালনাগাদ করে বকেয়া আদায়ের এই প্রথাটি ধরে রেখেছেন।
এক সময় রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে ধুমধাম করে হালখাতা অনুষ্ঠিত হলেও অত্যাধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও নাগরিক জীবন যাত্রার পরিবর্তনে এ ঐতিহ্যের প্রভাব তেমন একটা নেই বললেই চলে। দেখা মেলে না নিত্য পণ্যের কোনো আড়তে ব্যবসায়ী-ক্রেতার সেতুবন্ধনের এ আনুষ্ঠানিকতা। বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী বছরের শেষ দিন ধুঁয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নানা জাতের ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলা হতো নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান। জুয়েলারিসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের সামনে ‘শুভ নববর্ষ, ‘শুভ হালখাতা’ ইত্যাদি লেখা ব্যানার-ফেস্টুন ঝুলিয়ে দিয়ে বর্ণিলরূপে রাঙিয়ে তুলতেন তাদের দোকান পাট। মাইকে বাজানো হতো- ‘যাবার আগে দোহাই লাগে একবার ফিরে চাও, আবার তুমি আসবে কবে আমায় কথা দাও ... ।’ ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, রইবোনা আর বেশিদিন তোদের মাঝারে... ।’ ‘হাওয়া মে উরতা যায়ে লাল দু পাট্টা মলমল...।’ ইত্যাদি গান।
বাংলা সন চালু হওয়ার পর নববর্ষ উদযাপনে নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে হালখাতা দ্বিতীয় বৃহৎ অনুষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দেনাদার ও পাওনাদারের মধ্যে বিশ্বাস, আস্থা ও গভীর সম্পর্কের প্রকাশ ঘটতো হালখাতার মাধ্যমে। এটা ছিল সৌজন্য প্রকাশের এক ঐতিহ্য। বাংলা নববর্ষ সাংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হিসেবেই বারে বারে ফিরে আসে বাঙালির দুয়ারে। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানের হিসাব আনুষ্ঠানিক হালনাগাদের এ প্রক্রিয়ায় নেই আগের জৌলুস। রং ফিকে হয়ে এলেও এখনও রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে, গ্রামে ও গঞ্জে ছোট পরিসরে পালন করেন কিছু কিছু ব্যবসায়ী।
যেভাবে এলো হালখাতা
বাংলা নববর্ষ নিয়ে বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের প্রবন্ধ, মোবারক হোসেনের সম্পাদনায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে উৎসব, নববর্ষ, সাদ-উর রহমানের ‘উৎসবের ঢাকা’ বই এবং ঢাকা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, মোগল আমলে খাজনা আদায় করা হতো হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে। কিন্তু হিজরি বর্ষপঞ্জি চন্দ্র মাসের হিসাবে চলার কারণে এখানে কৃষি খাজনা আদায়ে অসুবিধা হতো। খাজনা আদায়ের শৃঙ্খলা আনা ও প্রজাদের অনুরোধে মোগল সম্রাট আকবর বিখ্যাত জ্যোতিষবিদ আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজীকে বাংলা সালের সংস্কার আনার নির্দেশ দেন। তিনি সেই নির্দেশ অনুসারে হিন্দু সৌর ও হিজরি পঞ্জিকা বিশ্লেষণ করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম নির্ধারণ করেন।
বাংলা সনের ইতিহাস সুস্পষ্টভাবে জানা না গেলেও অধিকাংশ ঐতিহাসিক ও পণ্ডিত মনে করেন, ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০-১১ মার্চ সম্রাট আকবরের বাংলা সন প্রবর্তনের পর থেকেই ‘হালখাতার প্রচলন হয় তৎকালীন ভারতবর্ষে। পুরনো বছরের হিসাব বন্ধ করে নতুন হিসাব খোলা হয় যে খাতায়, তাই ‘হালখাতা’নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গেও এ অনুষ্ঠানটি বেশ ঘটা করে পালন করা হয়।
আধুনিক গবেষকদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, আকবর সর্বভারতীয় যে ইলাহী সন প্রবর্তন করেছিলেন তার ভিত্তিতেই বাংলায় তার কোনো প্রতিনিধি বা মুসলমান সুলতান বা নবাব বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। সে জন্য একে ‘সন’ বা ‘সাল’বলা হয়। ‘সন’কথাটি আরবি, আর ‘সাল’ হলো ফারসি। প্রথমে এ সালের নাম রাখা হয়েছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা নববর্ষ হিসেবে পরিচিতি পায়। এরপর চৈত্র মাসের শেষ দিনে (সংক্রান্তি) জমিদারি সেরেস্তারা প্রজাদের কাছ থেকে কৃষি ও রাজস্ব কর বা খাজনা আদায় করতেন।
একই ধারাবাহিকতায় ১৬১০ সালে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নির্দেশে ঢাকায় সুবেদার ইসলাম খান চিশতি তাঁর বাসভবনের সামনে প্রজাদের শুভ কামনা করে মিষ্টি বিতরণ ও উৎসবের আয়োজন করতেন। খাজনা আদায় ও হিসাব নিকাশের পাশাপাশি চলতো মেলা, গান বাজনা ও হালখাতার অনুষ্ঠান। পরবর্তী সময় ব্রিটিশ আমলে ঢাকার মিটফোর্ডের নলগোলার ভাওয়াল রাজার কাচারিবাড়ি, ফরাশগঞ্জের রূপলাল হাউস, পাটুয়াটুলীর সামনে প্রতিবছর পয়লা বৈশাখে পুণ্যাহ অনুষ্ঠান হতো।
নিমন্ত্রণের কার্ড
চারদিকে সাজ-সাজ রব আর উৎসবের আমেজ, নববর্ষ- হালখাতা উপলক্ষে আত্নীয়-স্বজনদেরকে দাওয়াত করে নিয়ে আসা হতো। এভাবেই আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী হালখাতা দোলা দেয় বাঙালির সৃজনশীল মননে। হালখাতা উৎসবের জন্য কার্ড ছাপা হতো। কার্ডে হিন্দু ব্যবসায়ীদের জন্য মাটির সরাতে কলাগাছের পাতা, ডাব এবং উপরে হিন্দু দেবতা গণেশের ছবি থাকতো। অনুরূপভাবে মুসলিম ব্যবসায়ীদের কার্ডে থাকতো মসজিদের মিনার। এ উভয় রীতির মধ্যেও ছিল হালখাতার আমন্ত্রণ। কিন্তু এখন আর গ্রাম-গঞ্জে হালখাতার কার্ড ছাপা হয় না আগের মতো।
আপ্যায়ন
বংশানুক্রমে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রথানুযায়ী আগে বছরের প্রথম দিন নতুন খাতা খোলার জন্য হালখাতার আয়োজন ছিলো উৎসব অনুষ্ঠানের মত। উৎসবে মিষ্টিমুখ করানো হতো ক্রেতাদের, এ সময় তাদেকে লুচি আর রসগোল্লা, জিলাপি, বালুসাই বা রসগ্গজা, খাজা ইত্যাদি দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। এখন আর সেই দিন নেই। তবে এ ঐতিহ্য মেনে কোথাও কোথাও হালখাতা হয়। কিন্তু ক্রেতারা আগের মতো সাড়া দেন না। কেউ ব্যাংকে কিংবা বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দেন। উৎসব হয় না আগের মতো। তবে এ সময়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিপণ্য কম্পিউটার দখল করে নিয়েছে এ খাতার জায়গা। তবে পুরান ঢাকার অনেক ব্যবসায়ী তাদের ক্রেতার সঙ্গে সম্পর্ককে আজও অমলিন করে রেখেছেন। হালখাতার রীতি অনুসরণ করেই বৈশাখের প্রথম দিনে উৎসব বাঙালির অনন্য ঐতিহ্য ‘হালখাতা’ উদযাপন করেন। তারা প্রতিবছর বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিশেষ করে জুয়েলারি ও মুদি দোকানিরা ক্রেতাদের কাছ থেকে বকেয়া আদায়ের জন্য হালখাতার আয়োজন করেন।
হালখাতার বর্তমান হাল-হাকিকত
বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খানের মতে, বাংলা সন চালু হওয়ার পর নববর্ষ উদযাপনে নানা আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পয়লা বৈশাখের দ্বিতীয় বৃহৎ অনুষ্ঠান ছিল ‘হালখাতা’। অনুষ্ঠানটি করতেন ব্যবসায়ীরা। কৃষিভিত্তিক সমাজ ফসল বিক্রি করে হাতে নগদ পয়সা পেত। ধান-পাট ছিল নগদ পয়সার উৎস। ফসলের মৌসুমে ফসল বিক্রির টাকা হাতে না এলে কৃষকসহ প্রায় কেউই নগদ টাকার মুখ খুব একটা দেখতে পেতেন না, ফলে সারা বছর বাকিতে জিনিসপত্র না কিনে তাদের কোনো উপায় ছিল না।
পয়লা বৈশাখের হালখাতা অনুষ্ঠানে তাঁরা দোকানিদের বাকির টাকা মিটিয়ে দিতেন। অনেকে আংশিক পরিশোধ করেও নতুন বছরের খাতা খুলতেন। তারা পণ্য বাকিতে বিক্রি করতেন। সবাই সবাইকে চিনতেন বলে বাকি দেওয়ার বিষয়ে দ্বিধা থাকত না। টাকা কেউ মেরে দেবে না বলেই বিশ্বাস করতেন তাঁরা।
শামসুজ্জামান খানের প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, এক সময় পয়লা বৈশাখে নবাব ও জমিদারেরা ‘পুণ্যাহ’ উৎসব পালন করতেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল খাজনা আদায়। মুর্শিদাবাদের নবাবদের পাশাপাশি বাংলার জমিদারেরাও এ অনুষ্ঠান করতেন। প্রজারা ওই দিন এসে খাজনা মিটিয়ে দিতেন এবং মিষ্টিমুখ করে যেতেন। এখন মানুষের হাতে নগদ অর্থের অভাব নেই। এখন আর আগের মতো পরিস্থিতি নেই। সমাজের বিশাল বিবর্তন ঘটেছে। গ্রাম-বাংলার জনজীবনেও ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। কেউ কাউকে চেনেন না। কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে সরে গিয়ে নগরভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠেছে, শিল্প বিকশিত হচ্ছে। সবার হাতে কম-বেশি নগদ অর্থ আছে এখন। তাই হালখাতা পালনের ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিচর্চার প্রতিষ্ঠান ‘ঢাকা কেন্দ্র’-এর পরিচালক পুরান ঢাকা বিশেষজ্ঞ আজিম বখশ ষাট-সত্তর দশকে তাঁর তরুণ বয়সে দেখা হালখাতার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এভাবে- ‘এটা মূলত ব্যবসায়ীদের অনুষ্ঠান। পুরান ঢাকায় হিন্দু ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশ আড়ম্বরে হালখাতা করার প্রবণতা ছিল। এটা বেশ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করা হতো। সারা বছরের লেনদেনের পর পয়লা বৈশাখে হিসাবের খাতাটি হালনাগাদ করা হতো। সেটি ছিল লাল সালু কাপড়ের মলাটে মোড়ানো লাল রঙের একটি খাতা। দুই-তিন ভাঁজ দিয়ে ফিতা দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। সেই খাতায় পুরোনো হিসাব চুকিয়ে নতুন হিসাব খোলা হতো। যাঁরা বাকিতে পণ্য নিয়েছিলেন, তাঁরা সেই দিন দল বেঁধে এসে বাকি পরিশোধ করতেন এবং নতুন বছরের জন্য অগ্রিম অর্থ দিয়ে যেতেন।’
আজিম বখশ বলেন, ‘আমি দেখেছি, হিন্দু ব্যবসায়ীরা পুরোনো খাতা বাদ দিয়ে পয়লা বৈশাখে হালখাতা শুরুর আগে নতুন খাতাটি নিয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যেতেন পূজা দিতে। পূজারিরা সিঁদুরের মধ্যে কাঁচা পয়সা ডুবিয়ে সেই পয়সা সিলমোহরের মতো ব্যবহার করে নতুন খাতায় ছাপ মেরে তা উদ্বোধন করতেন। পয়সাকে লক্ষী হিসেবে বিবেচনা করে ব্যবসায় লাভবান হওয়ার আশায় এই আচার পালন করতেন তাঁরা। পুরান ঢাকায় মুসলিম ব্যবসায়ীদের আধিক্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই উৎসব ফিকে হতে শুরু করে।’
আজিম বখশ আরও বলেন, পুরান ঢাকায় এখন বনেদি ব্যবসায়ী নেই বললেই চলে। শহরের বিস্তারের সঙ্গে এই ঐতিহ্য রং হারাতে শুরু করেছে। তবে এখনও স্বর্ণকারের মধ্যে হালখাতা করার প্রবণতা রয়ে গেছে। ছোটখাটো করে হলেও তাঁরা হালখাতার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। শাঁখারীবাজার, তাঁতিবাজার, ফরাশগঞ্জ, বাদামতলী, ইমামগঞ্জ, চকবাজারে ব্যবসায়ীরা ছোট পরিসরে হলেও হালখাতা করেন। বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ এটা অনুসরণ করে চলেছেন।
হালখাতার হালে পানি
‘হালখাতা’ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান পুরান ঢাকার লোকনাথ বুক এজেন্সির পরিচালক আসিফুজ্জামান ইহাম বলেন, বছরজুড়ে হালখাতা বিক্রি হলেও পয়লা বৈশাখের আগে এর বিক্রি বেড়ে যায়। অনেক প্রতিষ্ঠানের হিসাব এখন কম্পিউটারাইজড। তবে পুরান ঢাকার বেশির ভাগ ব্যবসায়ী খাতাপত্রেই হিসাব তুলে রাখেন। পুরান ঢাকার স্বর্ণব্যবসায়ী, শ্যামবাজারের আড়তদারেরা তাঁদের প্রধান ক্রেতা। তবে নতুন ঢাকায় ব্যবসা করছেন এমন অনেক স্বর্ণ ব্যবসায়ী তাঁদের তৈরি এই খাতা কিনে থাকেন। বর্তমানে প্রায় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই কম্পিউটার রয়েছে। খাতার কাজ এখন কম্পিউটারই করছে। আগে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির জন্য ক্রেতাদের হাতে লেখা টালি (স্লিপ) দেওয়া হতো। এখন প্রযুক্তির আবিস্কার কম্পিউটারাইজড স্লিপ দেওয়া হয়। ফলে খাতা রাখার খুব একটা প্রয়োজন হয় না। হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলা নববর্ষের প্রাণ এ উৎসব। তবে নিছক ঐতিহ্য হিসেবে পয়লা বৈশাখে নতুন হিসাবের পাতা খোলা গ্রামে-গঞ্জে আগে বেশ ঘটা করেই হালখাতা উৎসব হতো। দোকানে সাজ-সজ্জার পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা তাদের পাওনাদারদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা আদায় করে নতুন হিসাবের খাতা খুলতেন।
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ব্যবসায়ীদের বাপ-দাদার বংশ পরম্পরায় পাওয়া আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবে এখন আর আগের মতো বর্ণিল নয়। ব্যবসায়ীদের চিরায়ত সংস্কৃতির ঐতিহ্য ‘হালখাতা’ প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে ।
এএইচ/