বাচ্চার পজিশন উল্টো হলে কী করবেন: ডা. কাজী ফয়েজা(ভিডিও)
প্রকাশিত : ১৬:৪৭, ২ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ২০:০০, ২ অক্টোবর ২০১৮
ডা. কাজী ফয়েজা অাক্তার
গর্ভকালে অন্ত:স্বত্ত্বার বাচ্চার উল্টো থাকার কথা আমরা প্রায়ই শুনি। এমন ক্ষেত্রে কখনো কখনো স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করানো সম্ভব হলেও পরিস্থিতি বুঝে অনেক সময় নিতে হয় সিজারের সিদ্ধান্ত।
বাচ্চার পজিশন কেন উল্টো হয়, এক্ষেত্রে করণীয় কী, বাচ্চার পজিশন উল্টো হলো মাকে কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়, কখন ডাক্তার সিজার করতে বাধ্য হন- এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ইমপালস হাসপাতালের কনসালটেন্ট, গাইনী, প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন, গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার (এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমসিপিএস)। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইনের প্রতিবেদক আলী আদনান।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বাচ্চার পজিশন উল্টো বলতে আমরা কী বুঝব?
ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার: আমরা জানি, মায়ের পেটে বাচ্চার পা উপরের দিকে ও মাথা নিচের দিকে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি উল্টোটা হয়, অর্থাৎ মাথা উপরের দিকে ও পা নিচের দিকে থাকে তাহলেই চিন্তার বিষয়। এই উল্টো বাচ্চা ডায়াগনোসিস হয় আলট্রাসাউন্ড দিয়ে।
তবে এই আলট্রাসাউন্ড কবে করা হয়েছে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধরুন, কোনো অন্তঃস্বত্ত্বা নারী তার অন্তঃস্বত্ত্বার পাঁচ মাসকালে আলট্রা সাউন্ড করল। তখন সেটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
কেননা তখন গর্ভস্থ শিশু নড়াচড়া অবস্থায় থাকে। দেখা গেল এখন হয়তো উল্টো। কিছুক্ষণ পর সে ঘুরে সোজা হয়ে গেল। কিন্তু যদি ৩৭ সপ্তাহের পরে মাকে আলট্রাসাউন্ড করে দেখা যায় বা মায়ের পেটে হাত দিয়ে আমরা ( ডাক্তার) বুঝতে পারি বাচ্চার পা নিচে মাথা উপরে। এমনটি হলে বুঝে নিতে হবে বাচ্চার পজিশন উল্টো।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বাচ্চার পজিশন উল্টো কেন হয়?
ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার: গর্ভের যে ফুল তা জরায়ুর উপরের দিকে অবস্থান নেয়। সেই ফুল যদি কোনো কারণে উপরে জায়গা না নিয়ে নিচে জায়গা নেয় তাহলে বাচ্চার পজিশন ঠিকভাবে বসার সুযোগ পায় না। তখন সে তার মতো করে বসতে গিয়ে উল্টো হয়ে বসে। যেহেতু তার মাথার পজিশনটা অলরেডি ফুল দখল করে নিয়েছে।
আরেকটা বিষয় হতে পারে মায়ের জরায়ুটা জন্মগত ভাবেই ঠিক জায়গায় নাই। যার ফলে বাচ্চা তার আরামদায়কভাবে নিজের অবস্থান করে নিতে গিয়ে উল্টো হয়ে যায়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চারা কোনো কারণ ছাড়াই উল্টো পজিশন নেয়।
তবে আমি আবারো বলছি, ৩৭ সপ্তাহের আগে যদি বাচ্চার পজিশন উল্টো হয় তাহলে সেটা নিয়ে ঘাবড়ানোর দরকার নেই। তবে ৩৭ সপ্তাহের পর যদি বাচ্চার পজিশন উল্টো হয়, তাহলে নিশ্চিত হতে হবে বাচ্চার পজিশন উল্টো এবং এটা আর ঘুরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বাচ্চার পজিশন যদি উল্টো হয় তখন ডাক্তার হিসেবে আপনারা কী পদক্ষেপ নেন?
ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার: এক্ষেত্রে প্রথমে আমরা প্রথমে দেখি এটা কী তার প্রথম ডেলিভারী কেস নাকি দ্বিতীয় বা তৃতীয় ডেলিভারী। আগের বাচ্চাগুলো কী স্বাভাবিক প্রসবে হয়েছে নাকি সিজারিয়ান। যদি এটা প্রথম ডেলিভারি হয় এবং বাচ্চার পজিশন উল্টো থাকে তাহলে আমরা মাকে একটু কাউন্সেলিং করি যে ডেলিভারিতে হালকা একটু সমস্যা হতে পারে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বাচ্চার পজিশন উল্টো হলে মাকে কী ধরনের সমস্যায় ভুগতে হয়?
ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার: প্রথম বাচ্চা উল্টো তার মানে এই নয় যে বাচ্চা নরমাল ডেলিভারি হবে না। তবে এখানে কিছু ঝুঁকি আছে। একটা হতে পারে, সময়ের আগেই মায়ের ব্যথা উঠতে পারে। সময়ের আগে মায়ের পানি ভেঙ্গে যেতে পারে। তখন আমরা বাচ্চার ফুসফুসের ম্যাচুরিটির জন্য একটা ইনজেকশন পুশ করি।
মায়ের চলাফেরা একটু নিয়ন্ত্রণ করতে বলি। তবে এখানে একটা রিস্ক আছে। সেই রিস্ক হচ্ছে বাচ্চা ডেলিভারী করতে গিয়ে মায়ের স্পেস ছিঁড়ে যেতে পারে বা ইনজুরি হতে পারে। বিভিন্ন ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে।
আবার বাচ্চার পা, হাতসহ হয়তো পুরো শরীর চলে আসবে। কিন্তু বাচ্চার মাথা এসে আটকে যেতে পারে। যদিও বা মাথা বের করে আনার জন্য বই পুস্তকে কিছু পদ্ধতির কথা উল্লেখ আছে তথাপি বাচ্চা খারাপ হয়ে যাওয়ারও একটা চান্স থাকে। এসব বিষয় আমরা মাকে জানাই। এরপরও যদি মা রিস্ক নিতে চায় তখন আমরা দেখি মায়ের স্পেস নরমাল ডেলিভারির উপযুক্ত কি-না। এটা প্রথম ডেলিভারীর ক্ষেত্রে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডেলিভারীর ক্ষেত্রে?
ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার: দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডেলিভারীর ক্ষেত্রে আমরা আগের কেস হিস্ট্রি দেখি। যদি দেখি, আগের কেসগুলোতে বাচ্চার পজিশন উল্টো থাকার পরও মায়ের নরমাল ডেলিভারি হয়েছে তাহলে বুঝে নিই, নরমাল ডেলিভারি হওয়ার মতো মায়ের স্পেশ যথেষ্ট প্রস্তুতি রাখে। তখন মাকে কাউন্সেলিং করে আমরা নরমাল ডেলিভারির জন্য এ্যালাউ করি।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কিন্তু এরকম কেসে আমরা অনেক সময় সিজারের কথা শুনি।
ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার: হ্যাঁ, এমন পরিস্থিতিতে অনেকক সময় মা নরমাল ডেলিভারির রিস্ক নিতে চান না। দ্বিতীয়ত, মায়ের স্পেস যদি বড় না হয়, যদি ইনজুরি হওয়ার, ক্ষত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে আমরা ( ডাক্তার) সিজারের সিদ্ধান্ত নিই।
অা অা/ এআর