বাথরুমে ৯ মাস ধরে আটকে রাখা যুবককে উদ্ধার
প্রকাশিত : ১০:২৯, ১ মে ২০২৪
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে বাথরুমে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে আটকে রাখা সুজিত দাস (৩৩) নামে এক যুবককে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় সোমবার দুপুর তিনটার দিকে উপজেলা সদরের কাশিপড়ার বাড়ি থেকে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সোহাগ রানা এই যুবককে উদ্ধার করেন।
বন্দিদশা থেকে উদ্ধার হওয়া যুবক সুজিত উপজেলার সদর ইউনিয়নের কাশিপড়ার মৃত নরেন্দ্র দাসের ছেলে। পেশায় তিনি জেলে ছিলেন। সুজিত মানসিক ভারসাম্যহীন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ৭-৮ বছর আগে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে সুজিতের ছুরিকাঘাতে তার চাচা নিহত হন। ওই ঘটনায় সুজিতের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা হয়। সেই মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারেও ছিলেন সুজিত। জেল থেকে বের হওয়ার পর পরিবারের লোকজন তাকে বাড়ির পাশেই একটি শৌচাগারসহ একটি ঘরে আটকে রাখেন।
সুজিতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সুজিত এক সময় পেশায় জেলে ছিলেন। নিয়মিত নদীতে মাছ ধরতেন। থানা থেকে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ গজ দূরত্বে অবস্থিত সুজিতের বাড়ি। প্রায় ৯-১০ বছর আগে সুজিতের বিয়ে হয়। এরপর থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে এই যুবক।
২০১৮ সালে মানসিক ভারসাম্যহীন সুজিতের ছুরিকাঘাতে তার চাচা মতি লাল দাসের (৫০) নিহত হন। ওই ঘটনায় তার চাচী সুমিত্রা রানী হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যার পরপর গ্রেপ্তার হলে পৌনে চার বছর জেলা কারাগারে ছিলেন এই যুবক। ২০২২ সালের শেষের দিকে জেল থেকে ছাড়া পান তিনি।
মা আরতী রানী ও একমাত্র বড় ভাই অনিল দাস পাঁচ থেকে ছয় মাস বিভিন্ন জায়গায় তার চিকিৎসা করান। কিন্তু কোনোভাবেই তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না তারা। এক পর্যায়ে নিজেরসহ প্রতিবেশীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাড়ির বসতঘরের সামনে একটি শোচাগার এবং শৌচাগারের পাশে একটি ছোট ঘর নির্মাণ করে পরিবারের লোকজন। শৌচাগারের পাশের কক্ষের দরজার নিচে কথাবর্তা বলতে এবং খাবার দিতে আরেকটি ছোট দরজা নির্মাণ করেন।
প্রায় ৯ মাস আগে মা ও ভাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে সুজিতকে ওই শৌচাগার ও পাশের কক্ষে আটকে বাইরে থেকে দরজা তালাবদ্ধ করে দেন। মূলত দরজার নিচের ওই অংশ দিয়ে সুজিতের সঙ্গে পরিবারের লোকজন কথাবর্তা বলত এবং সুজিতকে তিনবেলা খাবার দিত।
সম্প্রতি স্থানীয় বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সোহাগ রানা। সোমবার দুপুর তিনটার দিকে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের লোকজনকে সাথে নিয়ে কাশিপাড়ায় যান ওসি। পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে শৌচাগারের তালা খুলে সুজিত বন্দীদশা থেকে বাইরের আলোতে নিয়ে আসেন।
পরে তাকে গোসল করানো হয়। উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবার সাথে কথা বলে সুজিতকে পরিবারের জিম্মায় রাখেন নাসিরনগর থানা পুলিশ।
সুজিতের মা আরতি রানী জানান, সুজিত মানসিক ভারসাম্যহীন। যে কোনো সময় যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই নিরুপায় হয়ে তাকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। এর বিকল্প কোনো রাস্তা বা উপায় তাদের ছিল না।
সুজিতের বড় ভাই অনিল দাস বলেন, পৌনে চার বছর জেলা কারাগারে ছিল আমার ভাই। পাঁচ থেকে ছয় মাস বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করানো হলেও তার কোনো উন্নতি হয়নি। বাধ্য হয়ে তাকে আটকে রাখতে হয়েছে। বন্দীদশা থেকে বের হয়ে কাউকে যদি খুন করে তাহলে তার দায়িত্ব কে নিবে।
এ ব্যাপারে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহাগ রানা বলেন, স্থানীয়রা জানিয়েছেন শৌচাগারে ৯ মাস যুবককে বন্দি করে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সেখান থেকে ভেসে আসত তার কান্নার শব্দ। ঘটনাটি শুনে অমানবিক মনে হয়েছে। তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে শৌচাগারের তালা খুলে ওই যুবককে মুক্ত করেছি।
তাকে জেলার প্রত্যাশা পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান ওসি।
এএইচ
আরও পড়ুন