বান্দার তওবায় বেশি খুশি হন আল্লাহ
প্রকাশিত : ০৮:৫৩, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯
তওবা হলো ফিরে আসা বা প্রত্যাবর্তন করা। তথা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে তাঁর নৈকট্য লাভ করাই হলো তওবা। গোনাহের কারণে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় এবং আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে সরে যায়। ফের আল্লাহপাকের এ নৈকট্য ফিরে পাওয়ার জন্য বান্দার প্রতি অশেষ দয়াবশত মহান রাব্বুল আলামীন তওবার ব্যবস্থা রেখেছেন এবং মোমিনদের প্রতি তওবার আদেশ জারি করেছেন।
মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় হাবীবকে অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যতের ক্ষমার সুসংবাদ জানিয়ে দিয়েছিলেন। তারপরও রাসূল (সা.) প্রতিদিন অনেকবার করে তওবা করতেন। যদিও জীবনে তিনি একটি পাপও করেননি। এ থেকেই বোঝা যায় তওবার কত গুরুত্ব।
মানুষ গোনাহ করবে এটাই স্বাভাবিক প্রকৃতি। তাই গোনাহ করাটা তারপক্ষে স্বাভাবিক। আর আল্লাহ হলেন গফুরুর রাহিম, ক্ষমাশীল, দয়ালু। প্রত্যেক মানুষের প্রতি রয়েছে মহান আল্লাহ তায়ালার সীমাহীন দয়া। মানুষ অতি জঘন্য ও ছোট-বড় যত অপরাধই করুক না কেন, আল্লাহর কাছে তওবা করলে আল্লাহ তায়ালা তার সব পাপ ক্ষমা করে তাকে আপন করে নেন। ইসলামের বিধান মতে গোনাহের জন্য তওবা করা ওয়াজিব।
আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, ‘বলুন, হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা জুমার : ৫৩)। ‘তিনিই তো আপন বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপগুলো ক্ষমা করেন।’ (সূরা শূরা : ২৫)।
মানুষের যত ধরনের গোনাহ আছে, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, ছগিরা, কবিরা, জাহেরি, বাতেনি সব গোনাহ থেকেই তওবা করা ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন, ‘হে মোমিনরা! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো, খাঁটি তওবা।’ (সূরা তাহরিম : ৮)। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘হে মোমিনরা! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা করো। তবেই তোমরা নিঃসন্দেহে সফলতা লাভ করবে।’ (সূরা নূর : ৩১)।
আল্লাহপাক তওবাকারীর প্রতি অত্যন্ত খুশি হন এবং গোনাহ মাফ করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হও, বান্দার তওবায় আল্লাহ তারচেয়েও বেশি খুশি হন।’ (বোখারি : ৬৩০৯) রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘প্রত্যেক আদম সন্তান ত্রুটিশীল ও অপরাধী, আর অপরাধীদের মধ্যে উত্তম লোক হলো যারা তওবা করে।’ (তিরমিজি : ২৬৮৭)।
গোনাহ যদি আল্লাহ ও বান্দার মাঝে হয়ে থাকে, অন্য কোনো মানুষের হকের সঙ্গে সম্পর্কিত না হয় তাহলে এই তওবার জন্য তিনটি শর্ত। যথা- পরিপূর্ণভাবে গোনাহ বর্জন করা, ওই পাপ কাজের ওপর লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া, পুনরায় আর কখনো না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। এই তিনটির কোনো একটি শর্ত যদি ছুটে যায় তবে তওবা সহিহ হবে না।
আর গোনাহ যদি অন্য কোনো মানুষের হকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় তবে চতুর্থ আরেকটি শর্ত যোগ হবে। তাহলো, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হক থেকে নিজেকে দায়মুক্ত করতে হবে। মাল, ধন-সম্পদ ইত্যাদি নষ্ট বা আত্মসাৎ করলে ফেরত দিতে হবে। অপবাদজনিত শাস্তি বা এ ধরনের কিছু হলে তার থেকে মাফ করিয়ে নিতে নেবে, গিবত করলে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।
বান্দা যখন আল্লাহর কাছে নিজের অপরাধ, ভুলত্রুটি স্বীকার করে খাঁটি মনে তওবা করে তখন আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে পরিপূর্ণভাবে ক্ষমা করে দেন এবং বান্দার গোনাহগুলো নেকির দ্বারা পরিবর্তন করে দেন।
প্রত্যেক মানুষের উচিত প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে তওবা করা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহর রাসুল বেশি বেশি তওবা করে উম্মতকে তওবার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে লোক সবাই! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। আমি দিনে ১০০ বার তওবা করি।’ (মুসলিম : ৭০৩৪)।
মানুষকে গোনাহের প্রতি ধাবিত করতে শয়তান উঠেপড়ে লেগে আছে। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে কেউ গোনাহ করে ফেললে সঙ্গে সঙ্গেই তওবা করে নিতে হবে। কেননা প্রত্যেক মানুষের মৃত্যু সুনিশ্চিত। কার কখন মৃত্যু হবে কারও জানা নেই। এ জন্য গোনাহ হলেই তওবা করতে হবে। কেননা মৃত্যু এসে গেলে তখন আর তওবা কবুল হবে না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা মন্দ কাজ করতে থাকে, এমনকি যখন তাদের কারো সামনে মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন সে বলে আমি এখন তওবা করলাম। এদের তওবা গ্রহণযোগ্য নয়।’ (সূরা নিসা : ১৮)। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘মৃত্যুর যন্ত্রণা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা বান্দার তওবা কবুল করেন।’ (তিরমিজি : ৩৮৮০)।
এএইচ/