বাবা, আপনের মা আছে ঘরে?
প্রকাশিত : ১১:২২, ৪ আগস্ট ২০২০ | আপডেট: ১৮:৩২, ২০ অক্টোবর ২০২০
প্রতিকী ছবি
বাবা, আপনের মা আছে ঘরে?
যতটা সম্ভব উচ্চকণ্ঠে প্রশ্নটা করলেন বৃদ্ধা। ল্যাপটপ থেকে মাথা তুলে তাকালাম। তিনি ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে। মাথায় সাদা পুটলি। হাতেও একটা। বৃদ্ধার ক্লান্তিমাখা মুখ। ঈদের দিন, অথচ পোশাক মলিন। তাঁকে দেখে আমি চুপসে পেলাম। হয়তো একটু মাংসের জন্য এসেছেন।
-মা, এবার তো আমরা কোরবানি...।
:না বাবা, মাংসের লাগগি না। আপনের মা আছেনি ঘরে। আমার পুতটার লাগগি একটু মাংস থুইতাম আপনেরার ফিরিজে। আমার পুতটা রোগীলা, সিলেট থাহে। ফেরির কাম করে (ফেরিওয়ালা)। ঈদে আইছে না। পুতটারে থুইয়া মাংসডা কেমনে মুহে দেই!
ক্লান্ত কণ্ঠে বলে চলেন বৃদ্ধা। তাঁর চোখ ছলছল। ঘরে আসতে বললাম। আসবেন না। জানালেন, এই বিকেল পর্যন্ত গোসল করা হয়নি। সকাল থেকে এ বাড়ি ও বাড়ি কোরবানির মাংস সংগ্রহ করে বেড়িয়েছেন। ছেলের জন্য ফ্রিজে একটু মাংস রাখতে পারলে শান্তিতে বাড়ি ফিরবেন। তাঁর বাড়ি পাশের গ্রামে। ফ্রিজওয়ালা কয়েক বাড়ি ঘুরে মাংস রাখতে ব্যর্থ হয়ে এখানে এসেছেন বড় আশা নিয়ে।
পুত্রস্নেহে বিগলিত একজন বৃদ্ধা সামনে দাঁড়িয়ে। নাম-পরিচয় কিছু জানিনা। ‘তাঁর মাংস রাখা ঠিক হবে কি না’-ঢাকার বাসায় থাকলে এই চিন্তা করতেই হতো আমাকে। কিন্তু এটা তো গ্রাম। অচেনা মানুষকে বিশ্বাস করা যায়। তাঁর চোখে কোনো শঠতা নেই, বরং ছেলের জন্য একটু মাংস সংরক্ষণ করা নিয়ে শঙ্কা কাজ করছে।
প্রতিকী ছবি
আম্মা এই মুহূর্তে বাড়িতে নেই। আমাদের পুরানবাড়িতে (একটু দূরের পাড়ায়) গেছেন চেনা মানুষদের দেখতে। আব্বা বাজারে গেছেন একটা কাজে। আমার স্ত্রী তার বাবার বাড়িতে। ছোটবোন শ্বশুরবাড়িতে, গর্ভাবস্থায় সহযোগিতা লাগবে বলে অপর ছোটবোনকে নিয়ে গেছে সঙ্গে। ছোটভাই ঢাকায় তার কর্মস্থলে। বাড়িতে আমি একা। ফ্রিজ খালি কি না জানি না। কিন্তু এই মানুষটিকে না করি কোন মুখে! বললাম, আম্মা ঘরে নাই। একটু আমাদের পুরান বাড়িতে গেছেন। আপনি মাংস রেখে যান।
বৃদ্ধার ক্লান্ত মুখ হাসিতে ভরে উঠলো। তিনি পুটলি থেকে ছোট একটা পলিথিনের ব্যাগ বের করলেন। কেজি দুয়েকের মতো মাংস, উপরে কয়েকটি আম পাতা। নিজের মাংস চেনার জন্য আম পাতা ভরেছেন ব্যাগে।
আমি মাংসটা হাতে নিলাম। বৃদ্ধার চোখ আবার ছলছল। ‘বাবা, উপকার করলাইন।’
-এ তেমন কোনো উপকার নয় মা। মাংসের পুটলা ফেরত নেবেন কখন?
:আমার পুতটা আইলেই নিমু গা বাবা। দুয়েকদিন পরেই আওয়ার কথা।
আমি মুখ ঘুরিয়ে চোখ আড়াল করলাম। সব জায়গায় আবেগ দেখাতে নেই!
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করা হয়, আল্লাহ কি পশুর মাংস খান? উত্তরটা সহজ, তিনি পশুর মাংস খান না।
কোরবানির পশুর মাংস খায় মানুষ। আল্লাহ দেখেন মন।
এমবি//