‘বাবা তোমার স্বপ্ন আজ সত্যি হয়েছে’
প্রকাশিত : ২২:১১, ১৭ জুন ২০১৮ | আপডেট: ২২:১৭, ১৭ জুন ২০১৮
সবসময় বাবার কথা মনে পড়ে। বিশেষ করে বাবার অনুপ্রেরণা এবং উৎসাহ আমার হৃদয়কে নাড়া দেয়। বাবা সব সময় বলতেন তোমার বিজয় হবেই। তার অনুপ্রেরণাই আমাকে আজকে এতদূর আনতে সাহায্য করেছে।
বাবা সুলতান মুন্সী ছিলেন তার ভাইদের মধ্যে সবচেয়ে শান্তসৃষ্ট ও ভদ্র। তিনি এত সহজ-সরল ছিলেন যে, আমাদের জমির ভেতরে এসে যদি কেউ আইল বাঁধত অথবা চাষ করত তবুও তিনি এর জবাব দিতেন না। আমরা যদি কিছু বলতাম, বাবা বলত তোদের আল্লাহ পাকই দেবে। এ নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।
বাবার অন্যতমগুণ হলো তিনি শিশুদের খুব ভালোবাসতেন। বাবার কাছে এসে কোনো শিশু খালি হাতে গেছেন এমনটা কোনো দিন দেখেনি। তার কাছে সবসময় লজেন্স ও বিস্কুট থাকত। যে শিশুই আসত তাকে তিনি আদর করতেন এবং খাবার জাতীয় কিছু একটা দিতেনই। বাবা যদি বাজার থেকে বাড়িতে আসতেন শিশুরা তাকে ঘিরে ধরত। তিনিও তাদের আদর করে সঙ্গ দিতেন।
এবার আসি আমার শিক্ষার হাতেখড়ি নিয়ে। বাবা দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলেন। তবে বাবা ইংরেজি বিষয়ে খুব ভালো ছিলেন। তার উচ্চারণ ছিলো অনেকটা ব্রিটিশদের মতো। তিনি অর্নগল ইংরেজি বলতে পারতেন। তার কাছে থেকেই আমার শিক্ষার হাতেখড়ি হয়। তবে আমার ভাইদেরকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল আমার বাবার। বাসায় গৃহশিক্ষক রাখলেও তারা ভালো করে লেখাপড়া করেনি।
আমি হলাম বাবা-মায়ের সবচেয়ে ছোট সন্তান। তাই তারা আমাকে খুব বেশি ভালোবাসতেন। বিশেষ করে বাবা আমাকে একটু বেশিই ভালোবাসতেন। তিনি আমাকে নিয়ে গর্ব করতেন। মুক্তব ও প্রাইমারি স্কুলের পড়া শেষ করার পর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আমার পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো হতে শুরু করে। এতে আমার লেখাপড়া নিয়ে বাবার আগ্রহও বৃদ্ধি পায়।
এরপর বাবার উৎসাহে ক্লাসের পারফরমেন্স ভালো হতে থাকে। আমাকে নিয়ে বাবার স্বপ্নও বাড়তে থাকে। তিনি স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে আমি একজন ভালো মানুষ হবো, মানুষের সেবা করব। সর্বপরি একজন সুশিক্ষিত ও সুনাগরিক হবো।
তিনি সবসময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গল্প করতেন। বলতেন দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য এই মানুষটি আত্মত্যাগ করেছেন। তুমি বড় হয়ে এরকম মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করবে।
যখনই কোনো মানুষ বাবার কাছে কিছু চেয়েছে তখনই তিনি তা দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে যেতেন।
তিনি বলতেন, মানুষকে ভালোবাসো এবং মানুষের জন্য উৎসর্গ কর তাতেই জীবনের স্বাদ পাবে। কিন্তু এই প্রাণবন্ত মানুষটি ২০০৮ সালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চির বিদায় হন। পরকালে আমার বাবা যেন জান্নাতবাসী হন সেই দোয়াই করছি। সকলের কাছে আমার বাবার জন্য দোয়াপ্রার্থী।
এমএইচ/