ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪

বাবা-মায়ের কবরের পাশে শায়িত হলেন কবি মোহাম্মদ রফিক

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৪:৪২, ৭ আগস্ট ২০২৩ | আপডেট: ১৪:৪৩, ৭ আগস্ট ২০২৩

বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের চিতলী-বৈটপুর গ্রামে নিজ বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি মোহাম্মদ রফিক। 

সোমবার (৭ আগস্ট) বেলা ১১টায় চিতলী-বৈটপুর এলাকায় উদ্দিপন বদর সামছু বিদ্যা নিকেতনে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে কবির দাফন সম্পন্ন হয়।

এর আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে রোববার (৬ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি মোহাম্মদ রফিক। মৃত্যকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি দুই ছেলে, নাতী-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

কবির শেষ বিদায়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি এ্যাটর্নী জেনারেল বশির আহমেদ, কবির বোন জামাই শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আমিনুল হক, কবির বোন গাইনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সেলিনা পারভীন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সবিতা ইয়াসমিন, কবির ভাই প্রকৌশলী মোঃ শফিক, কবির ছোট ছেলে অধ্যাপক ড. শুদ্ধস্বত্ত্ব রফিক, কবির বিভিন্ন স্বজন, লেখক অধ্যাপক প্রশান্ত মৃধা, সামছউদ্দিন নাহার ট্রাষ্টের প্রধান সমন্বয়ক সুব্রত কুমার মুখার্জীসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি, উদ্দিপন বদর সামছু বিদ্যা নিকেতনসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ কবির গুণগ্রাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রিয় কবিকে হারিয়ে শোকাহত হয়ে পড়েন কবির শিক্ষার্থী, স্বজন ও স্থানীয়রা। কবির ভাই প্রকৌশলী মোঃ শফিক বলেন, আমাদের আট ভাইবোনদের মধ্যে কবি মোহাম্মদ রফিক ভাই সবার বড় ছিলেন। তিনি শুধু আমাদের বড় ভাই ছিলেন না, তিনি সকলের অভিভাবক ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমরা অভিভাবক শূন্য হলাম।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মমিনুল ইসলাম বলেন, স্যার একজন ভাল নিরহঙ্কার মানুষ ছিলেন। দেশের জন্য তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। দেশের জন্য তার কলম চলত সব সময়। স্যারের অবদান ভোলার নয় দাবি করেন সাবেক এই শিক্ষার্থী।

নামাজে জানাজা ও দাফন শেষে বাবার জন্য সকলকে দোয়া করার অনুরোধ করেন কবির ছোট ছেলে অধ্যাপক ড. শুদ্ধসত্ত্ব রফিক।

ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলন ও কবিতায়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে কাব্যিক রসদ যুগিয়ে বিখ্যাত হয়ে আছেন কবি মোহাম্মদ রফিক।

মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করার পর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি দীর্ঘ সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের প্রধান ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৯ জুন তিনি অবসরে যান। অবসরের পর কবি মোহাম্মদ রফিক রাজধানীর মোহাম্মাদপুরে বসবাস করতেন। 

কবি মোহাম্মদ রফিক ঢাকায় থাকলেও, এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়ন পৈত্রিক ভিটায় সকল ভাইবোনরা মিলে সামছউদ্দিন নাহার ট্রাস্ট নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। কবি মোহাম্মদ রফিক সামছউদ্দিন নাহার ট্রাষ্টি বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি আমৃত্যু সামছউদ্দিন নাহার ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন।

তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগসহ বিভিন্ন শরীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। গেল সপ্তাহে কবির ছোট ছেলে অধ্যাপক ড. শুদ্ধসত্ত্ব রফিকের সাথে কবি গ্রামের বাড়িতে আসেন। গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের চিতলীতে অবস্থানকালে রোববার সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তখন প্রথমে বাগেরহাট এবং পরে বরিশাল নেওয়া হয় কবিকে। 

বরিশালের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে বিভিন্ন পরীক্ষার পর কবির হার্টের সমস্যাসহ বেশি কিছু শারীরিক জটিতলা ধরা পড়লে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা নেওয়ার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যরা কবিকে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা রওনা হওয়ার পর পথেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি