বাবু খাইছো...?
প্রকাশিত : ১৯:৪০, ৩ অক্টোবর ২০২০ | আপডেট: ১৯:৫৩, ৩ অক্টোবর ২০২০
বেলায়েত বাবলু
বাবু একটি নাম। অনেক সময় সম্মানের জায়গা থেকেও কাউকে কাউকে বাবু সম্বোধন করা হয়। সনাতন ধর্মের বয়স্কদের আমরা বাবু মশাই বলেই সম্বোধন করে থাকি। ফজলুর রহমান বাবু ভাই আমাদের দেশের একজন শক্তিমান অভিনেতা। তেমনি, বাবু আমাদের দেশের একটি প্রচলিত শব্দ। সন্তান দুষ্টুমি করলে শুনি- এই বাবু দুষ্টুমি করোনা, মনোযোগ দিয়ে পড়ো।
আগে জানতাম, মা-বাবা তাদের সন্তানকে আদর করে বাবু সোনা বলে ডাকে। এখনও যে ডাকেনা তা কিন্তু নয়, তবে এখন মেয়ে বন্ধু তার ছেলে বন্ধুকে বাবু বলে ডাকে বলে জেনেছি। যেমন- আমাদের বাড়িওয়ালা তাঁর সহধর্মিনীকে ভালোবেসে বেগম বলে ডাকতেন।
বাবু খাইছো? কথাটি লোক মুখে শুনতে শুনতে আমিও মাঝে মধ্যে আমার গিন্নির মান ভাঙাতে ঢংয়ের সুরে বলি- বিবি খাইছো? গিন্নি আমার সঙ্গে রাগ করে থাকলেও ঢংয়ের সুরে বিবি ডেকে যখন তার খাবারের খোঁজ নেই, তখন হয়তো সে মুচকি হেসে মনে মনে বলে ওঠে- যাহ দুষ্টু...!
আসলে বাবু নিয়ে যুগে যুগে অনেক কবিতা, গান রচিত হয়েছে। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর বিখ্যাত লিচু চোর কবিতায় প্রথমাংশেই লিখেছেন -
বাবু'দের তাল পুকুরে,
হাবুদের ডাল কুকুরে
সেকি বাস করলো তারা,
বলি থাম একটু দাঁড়া...।
এ কবিতায় বাবুদের বলতে কোন এক গ্রামের প্রভাবশালীদের কথাই বলা হয়েছে। আরেক স্বনামধন্য কবি সুকুমার রায় তাঁর বিখ্যাত আবোল তাবোল কবিতায় লিখেছেন-
বাবুরাম সাপুড়ে,
কোথা যাস বাপুরে?
আয় বাবা দেখে যা,
দুটো সাপ রেখে যা।
পল্লী কবি জসিমউদদীন তাঁর পদ্মাপাড় কবিতায় লিখেছেন-
বাবু সেলাম বারে বার,
আমার নাম গয়া বাইদ্যা বাবু,
বাড়ি পদ্মাপাড়।
পরে এ কবিতাটি গানেও রুপান্তর হয় এবং একটি বাংলা চলচিত্রেও গানটি শোনা গেছে। আরেকটি কবিতা এবং কবির নাম এ মুহূর্তে মনে করতে পারছিনা। তবে ওই কবিতাটি পড়ে আমি শ্রমের মর্ম কথাটি উপলব্ধি করতে পেরেছি। কবিতাটির শেষের কয়েকটি লাইনতো বেশ হৃদয় স্পর্শী। তাতে লেখা আছে-
আমরা শিশু শ্রমিক
শুধু ভাত চাই,
শিশুশ্রম তুলে দিলে
পেটে ভাত নাই।
আগে দাও ভাত বাবু,
পরে তুলো শ্রম,
পেট বড় যম বাবু,
পেট বড় যম।
ইতিহাস ঘাটলে বাবু শব্দটি নিয়ে এরকম আরো কত শত কবিতা, গানের কথা হয়তো জানা যাবে। সাম্প্রতিককালে সেই বাবু নিয়েই একটি সংলাপ বা একটি গান বলতে গেলে সবার মুখে মুখে। রীতিমত ভাইরাল! দেখিনাই, তবে শুনেছি কোনও এক বাংলা নাটকে গানটি ব্যবহার করা হয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে প্রায় সব বয়সী মানুষের মুখেই শুনছি- ‘বাবু খাইছো’?
অলিতে-গলিতে, অফিসে, পাড়াতে সব জায়গায় শোনা যাচ্ছে- বাবু খাইছো? এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে তোলপাড়। বাবু খাইছো'র জবাবে কেউ কেউ লিখেছেন- তুমি না কইলেও খামু। কেউ লিখেছেন- খাই আর না খাই তোর দরকার কি?
‘বাবু খাইছো’ নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে চলা আলাপচারিতায় শোনা যাচ্ছে- এটা হচ্ছে পুরুষদের পটানোর একটা ঢঙ্গি সংলাপ। এর মাধ্যমে খাওয়ার বিষয়ে যতটা না খোঁজ নেয়া হয়, তার চেয়ে কিছু খসানোর মতলবেই বলা হয় বেশী। আসলে কে, কোন মতলবে এটা বলছে- সেটা মুখ্য বিষয় না। মতলব হোক আর যাই হোক, এই উছিলায় একজন তো আরেকজনের খাবারের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে! তাও বা কম কিসে?
আমার মনে হয়- আমরা বাবুরা (বয় ফ্রেন্ড) খাইছে কিনা, সেই খোঁজ নেয়ার পাশাপাশি যদি আমারা প্রতিবেশী গরিব মানুষগুলো খাইছে কিনা- সেই খোঁজ নেই, তাহলে কিন্তু না খেয়ে থাকা মানুষের সংখ্যা হয়তো অনেকাংশেই কমে যাবে। আসুন না, এখন থেকেই চর্চাটা শুরু করি। কোনও মতলব ছাড়াই মন উজাড় করে গলা ছেড়ে বলা শুরু করি...
আফা খাইছো, খালা খাইছো, চাচা খাইছো, বুবু খাইছো, বুয়া খাইছো...??
লেখক- সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়ন।
এনএস/
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।