ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

বাসার ছাদে একোয়াপনিক্স পদ্ধতিতে মাছের সঙ্গে সবজি চাষ

ড. এম এ সালাম

প্রকাশিত : ১৮:৩৭, ২৭ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ২৩:০৬, ২৭ জুলাই ২০২০

বাসার ছাদে সমন্বিত সবজি ও মাছ চাষে সফল ড. এম এ সালাম।

বাসার ছাদে সমন্বিত সবজি ও মাছ চাষে সফল ড. এম এ সালাম।

সারাবিশ্বে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন যেখানে দিন দিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে সম্ভাবনাময় একটি আধুনিক কৃষি পদ্ধতি হতে পারে বাসার ছাদে একোয়াপনিক্স সিস্টেমে সমন্বিত মাছ ও সবজি চাষ। একোয়াপনিক্স মূলত মাছ চাষ ও হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতিতে মাটি ছাড়া সবজি চাষের একটি সমন্বিত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে গাছের জন্য আলাদা কোন সারের প্রয়োজন হয় না। মাছের ময়লা তথা দূষিত পানিই গাছের সার হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং স্বচ্ছ পরিষ্কার পানি পুনঃরায় মাছের ট্যাংকে ফিরে আসে। অর্থাৎ একই পানি বার বার ব্যবহৃত হয়। 

এই পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী বহুল প্রচলিত এবং ব্যবহৃত একটি পরিবেশ বান্ধব ও বাস্তবসম্মত পদ্ধতি। এই পদ্ধতি দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা, ক্ষুদ্র বা বৃহৎ যে কোনো পরিসরে এর বাস্তবায়ন সম্ভব। এই পদ্ধতি মাছ, গাছ এবং ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে সেতু বন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে পুনঃসঞ্চালন প্র্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয়। এই পদ্ধতিতে যেহেতু মাটি ছাড়াই শাক-সবজি উৎপাদন করা যায়, তাই উর্বর মাটির প্রয়োজনীয়তাও থাকে না। 

এখানে আরও উল্লেখ্য যে, এই পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া পানিতে দ্রবীভূত সমস্ত বর্জ্য এবং ময়লা তাৎক্ষণিকভাবে ভেঙ্গে গাছের জন্য খাদ্য উৎপাদন করে প্রাণীর কিডনি ও লিভারের মতো কাজ করে। এই পদ্ধতি স্থাপনও খুব কঠিন বা ব্যয়বহুল নয়। তবে এই পদ্ধতি স্থাপন এবং পরিচালনার জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। একোয়াপনিক্সের অনেকগুলো পদ্ধতির মধ্যে মিডিয়া বেড পদ্ধতি স্থাপন ও পরিচালনা করা নতুন ছাদ বাগানীদের জন্য খুব সহজ। 

একোয়াপনিক্স পদ্ধতি স্থাপনের জন্য বেশ কিছু উপকরণের প্রয়োজন। যেমন- মাছের ট্যাংক, সবজির পাত্র এবং পাত্রে গাছ রোপণের জন্য ইটের খোয়া বা নূড়ি পাথর, পানি সরবরাহের জন্য পাম্প ও পাইপ, মাছের অক্সিজেন সরবরাহের জন্য এরেটর, স্টোন ও টিউবিং, বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য তার, সুইচ, সুইচ বোর্ড এবং সবজির পাত্র স্থাপনের জন্য মাচা।  

এবার নিম্নোক্ত ছবির মত করে স্থাপন করে মাছ ছেড়ে গাছের চারা/বীজ লাগালেই পদ্ধতি শুরু হয়ে গেল। এখানে সিমেন্ট নির্মিত চার কোণা লম্বা সবজির পাত্রে ঝামা ইটের খোয়া দিয়ে টমেটোর চারা রোপণ করা হয়েছে। অতঃপর উক্ত পাত্রে নীচের অর্ধড্রামের মাছের পানি একটি ছোট পাম্পের সাহায্যে পাম্প করে সরবরাহ করা হচ্ছে। 

এই সরবরাহকৃত পানি ইটের খোয়া এবং টমেটো গাছের শিকড়ের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পুনরায় মাছের ড্রামে ফিরে আসছে। এইভাবে পুনঃ পুনঃ এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এখানে পানির কোন অপচয় হয় না, শুধু বাষ্পায়িত এবং গাছে শোষণকৃত পানি ড্রামে নিয়মিত যোগ করতে হয়। এই পদ্ধতিতে মাটি বাহিত রোগবালাই উৎপাদিত সবজিতে আসতে পারে না বিধায় রোগের উপদ্রপ বেশ কম হয়। যেহেতু ইটের খোয়া বা নূড়ি পাথরের মধ্যে সবজি ফলানো হয় তাই আগাছাও জন্মায় না এবং তা পরিষ্কার করার দরকারও হয় না।

এই প্রক্রিয়ায় মাছের খাদ্য, বিদ্যুৎ খরচ ও শ্রম তুলনামূলকভাবে খুবই কম হয়। একই পদ্ধতি অবলম্বন করে অধিক ঘনত্বের মাছের পুকুরের পানি পাম্পের সাহায্যে উঁচুতে অবস্থিত সবজি চাষের ট্রে-এর মধ্যে সরবরাহ করে একোয়াপনিক্স স্থাপন করা যায়। এর ফলে মাছ এবং সবজি প্রাপ্তির পাশাপাশি চাষকৃত পুকুরের পানিও পরিশোধিত হবে এবং যথানিয়মে পুকুরের পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে, ফলে মাছের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। 

পরিবেশ বান্ধব এই পদ্ধতি অবলম্বন করে গ্রাম কিংবা শহরের ছাদ বাগানকারীগণ অতি সহজেই মাছের পাশাপাশি কীটনাশক বিহীন নানা রকম শাক-সবজি সারা বছরব্যাপী উৎপাদন করে একদিকে যেমন পারাবারিক চাহিদা পূরণ করতে পারবেন, অন্যদিকে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকিও হ্রাস করা সম্ভব হবে।

লেখক: অধ্যাপক, একোয়াকালচার বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি