ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন: কঠোর পর্যবেক্ষণ জরুরী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৫৪, ১৫ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ২১:৫২, ১৫ মার্চ ২০২০

করোনাতঙ্কে কাঁপছে বিশ্ব। উৎপত্তিস্থল চীনে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও বিশ্বজুড়ে এটি মহামারি আকার ধারণা করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বের ১৩২টি দেশে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি ভাইরাসটিতে নতুন করে ৪২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৯৫ জনে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও প্রায় ১০ হাজার মানুষ। আমাদের দেশে প্রথম তিন জন আক্রান্ত হলেও তাদের সবাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু নতুন করে আবারও দুজন আক্রান্ত হয়েছেন। এদিকে বিশ্বব্যাপী নানান সুরক্ষা গ্রহণ করা সত্যেও আমাদের দেশে এখন প্রবাসীদের প্রবেশ থামছে না। ফলে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশ ফেরতদের কোয়ারেন্টিনের রাখার ব্যবস্থা করলেও তা মানসম্মত নয় এবং সেখানে প্রবাসীরা থাকতেও চাইছেন না। ফলে অনেকেই হোম কোয়ারেন্টিনে থাকছেন। কিন্তু তা কতটা ঝুঁকি মুক্ত- এটাই এখন চিন্তার বিষয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন- করোনাভাইরাসের উৎপত্তি আমাদের দেশে নয়। ফলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দেশের বাইরে থেকেই আসছে, আসবে। এই অবস্থায় বিদেশ থেকে কেউ ভাইরাসটি নিয়ে আসছেন কি না, তা চিহ্নিত করার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। শুরুর দিকে যে তিনজন আক্রান্তের খবর এসেছে, তাদের দুজন বিদেশ থেকে আগত। একজন তাদের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ প্রথমবার স্ক্রিনিংয়ে তাদের চিহ্নিত করা যায়নি। তাই বিদেশ থেকে আগতদের মাধ্যমে যাতে ভাইরাসটি ছড়াতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। 

এ বিষয়ে বিএসএমএমইউ সাবেক উপাচার্য, ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘চীনসহ বিভিন্ন দেশ আক্রান্তদের বিচ্ছিন্ন করে, স্বল্প সময়ে বিপুল রোগীর জন্য হাসপাতাল প্রস্তুত করতে পেরেছে। আমাদের সেই সক্ষমতা নেই। তাই সতর্কতাই আমাদের জন্য সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা।’

তিনি বলেন, ‘এখন বিদেশ থেকে আগতদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে, লক্ষণ দেখা দিলে কোয়ারেন্টিন করা হচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে যেভাবে বাসায় কোয়ারেন্টিন করা হচ্ছে, সেটা পুরোপুরি আশ্বস্ত হওয়ার মতো নয়।’

তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে বা সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টিন করতে পারলে ভালো। বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে এ ধরনের অবকাঠামো এখনো প্রস্তুত করা যায়নি। তাই বাসায় যে কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা চালু আছে, তা কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার। এই বিষয়ে কোনো হেলাফেলা করা যাবে না। কেউ নির্দেশনা ভেঙে বাইরে বের হচ্ছে কি না, সেটা দেখতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যাঁদেরকে কোয়ারেন্টিন করার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে, তারা নিজেরাও যাতে খুব দায়িত্ব নিয়ে সেটা পালন করেন। আবার সরকারের বিভিন্ন দপ্তরকেও নজরদারি করতে হবে। কারও মধ্যে ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থাৎ ব্যক্তি, স্বজন এবং সরকার—সবাইকেই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হওয়ার পর বিভিন্ন দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশেও কিছুদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। কারণ, বাচ্চারা বাইরে থেকে ভাইরাস বহন করে বাসায় নিয়ে যেতে পারে। এতে বাচ্চাদের নিজের এবং পরিবারের সদস্যদেরও আক্রান্ত করতে পারে। কিছুদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখলে বড় কোনো ক্ষতি হবে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা চাইলে নিজেদের আবদ্ধ করে ফেলতে পারি। এতে হয়তো ঝুঁকি কমে যাবে। তবে এটা করা ঠিক হবে না। বাংলাদেশে আগতদের বেশির ভাগই এ দেশের নাগরিক। তারা বিভিন্ন দেশে কাজে বা পড়াশোনার জন্য গেছেন। তারা প্রয়োজন ছাড়া না এলে ভালো। কিন্তু প্রয়োজনে কেউ এলে তো আর বাধা দেওয়া যাবে না; বরং দেশে আগতরা যাতে করোনাভাইরাস ছড়াতে না পারেন, সেটা নিশ্চিত করাই সঠিক কাজ হবে। এর জন্য কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। পারলে সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টিন করার চেষ্টা করতে হবে। এটা হয়তো সময় লাগবে। এরপরও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি