বিএনপি-জামায়াতের কৌশলগত জোট
প্রকাশিত : ২০:০৪, ২ নভেম্বর ২০২৪
প্রায় দুই যুগ ধরে জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে বিএনপি ও জামায়াত। তবে বছর দুই আগে এই জোট বিলুপ্ত হলেও, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করেছে দল দুটি। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি বদলে গেছে। গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপি-জামায়াতের দূরত্ব বাড়তে থাকে। অনেকবার বাকবিতণ্ডায় জড়ান দুই দলের শীর্ষ নেতারা। তবে তা চরম আকারে পৌঁছায়নি। এছাড়া তৃণমূলেও দ্বন্দে জড়িয়ে পড়ছে দুই দলের ছাত্র সংগঠন। এমতাবস্থায় নিজেদের ঐক্যের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে চায় বিএনপি-জামায়াত। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও ভারত ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে চায়। দল দুটি মনে করছে বিএনপি ও জামায়াত ঐক্যবদ্ধ থাকলে সকল ষড়যন্ত্র ভেস্তে দেয়া সম্ভব। সম্ভব হবে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে ভবিষ্যত রাজনীতিতে কোণঠাসা করে রাখা।
এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ ও ভারতের আধিপত্যবাদ এক হয়ে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করেছিল। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে তার অবসান ঘটে। আওয়ামী লীগ এটা মেনে নিতে পারছে না। ভারতও মেনে নিতে পারছে না, তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের তা ফুটে উঠছে। ফ্যাসিবাদের হর্তাকর্তারা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। ষড়যন্ত্র, চক্রান্তের বিষয়ে দেশের মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোও সতর্ক ও সচেতন আছে। ঐক্যবদ্ধভাবে সকলে মিলে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত প্রতিরোধ করবো।
বিএনপি সূত্র বলছে, ধারণা করা হচ্ছিল ৫ আগস্টে রাজনীতির সকল হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। ক্ষমতার অংশীদার বিএনপি ও জামায়াত। রাজনীতিতেও প্রধান প্রতিপক্ষ এখন দল দুটি। জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে তা ফুটে ওঠে। কিন্তু সময় গড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে আওয়ামী লীগ।
পার্শ্ববর্তী দেশ তাদের সব রকম সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। তাদের এজেন্টরা এখনো দেশের মধ্যে সরব রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হলে লাভবান হবে পতিত আওয়ামী লীগ। সেই সুযোগ দিতে চায় না দল দুটি।
জামায়াতের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্বাস বলেন, হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার দোসররা এখনও রয়ে গেছেন। ওই দোসরদের রেখে দেশ এগুতে পারে না। ওরা ষড়যন্ত্র করছে। তবে জামায়াত ও বিএনপি একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে আর আওয়ামী লীগ আসতে পারবে না। দেশের স্বার্থে দুই দলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জামায়াত ও বিএনপি মিলে একসঙ্গে দেশ সাজাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, জামায়াতের সঙ্গে কৌশলগত জোট ছিল বিএনপির। জোট বিলুপ্ত হওয়ার পর সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনে কিছু কর্মসূচি বিএনপির সঙ্গে পালন করে তারা। আমরা এক হয়েছিলাম গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে, হাসিনার পতনের লক্ষ্যে। হাসিনার পতন হয়েছে। জামায়াত ও বিএনপির রাজনীতি এক না। তাদের রাজনীতি আলাদা, আমাদের রাজনীতি আলাদা। এর মানে জামায়াত বিএনপির মধ্যে বিশাল ফাটল বিষয়টি তেমন না। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। একটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আরেকটা রাজনৈতিক দলের যে সম্পর্ক থাকে, তেমনি জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির এ সম্পর্ক কৌশলগত।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সুসম্পর্ক রয়েছে। জামায়াতের প্রোগ্রামে বিএনপির নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। তারা আসছেন, কথা বলছেন।
তিনি বলেন, জনগণের ঐক্য অটুট থাকলে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না। আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি জনতার ঐক্যের। ছাত্র-জনতার ঐক্যের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে, ছাত্র-জনতার ঐক্যের মাধ্যমে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হবে।
এসএস//
আরও পড়ুন