ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪

বিএনপি জোট ছাড়ছে ন্যাপ ও এনডিপি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩৫, ১৬ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ১১:৫৪, ১৬ অক্টোবর ২০১৮

নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি যখন সমমনা দল ও ব্যাক্তিদের নিয়ে জোটের পরিসর বাড়াতে ব্যস্ত তখন তাদের সঙ্গ ত্যাগ করছে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক বাংলাদেশ ন্যাপ ও এনডিপি। মূলত দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভ-মান-অভিমান ও গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগে জোট ত্যাগ করছে এই দুটি দল।

আজ মঙ্গলবার বিকালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে ছয় বছরের বেশি সময়ের সম্পর্ক ছিন্ন করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি। তার সঙ্গী হচ্ছেন এনডিপি চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজাও। বিকাল তিনটার দিকে গুলশানের হোটেল ইম্যানুয়েল-এর ব্যাংকুয়েট হলে সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তারা জোট থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেবেন। একইসঙ্গে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করবেন, কেন তারা  সম্পর্ক ছিন্ন করতে যাচ্ছেন।

বিকল্পধারা সভাপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, গণফোমার সভাপতি ড. কামাল, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাসদ সভাপতি আ স ম রবকে গুরুত্ব দেওয়ায় ২০ দলীয় জোটে মান অভিমান বাড়তে থাকে। এটি আরো বাড়তে থাকে জোট গঠনের দরকষাকষিতে ওইসব দল যখন নানা শর্ত জুড়ে দেয়। ২০ দলীয় জোটভূক্ত দলগুলো ধরে নেয় যে, বিএনপির কাছে তাঁদের গুরুত্ব নেই বলেই বি. চৌধুরী ও কামালদের সঙ্গী করতে মরিয়া বিএনপি। এ নিয়ে শুরু হয় মান অভিমান। বিষয়গুলো নিয়ে ২০ দলের শরিকরা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও জোটের বৈঠকে অনেকেই জোরালো বক্তব্য দিত।

তবে বি. চৌধুরী ও ড. কামালদের নিয়ে বিএনপির দৌঁড়ঝাপের কড়া সমালোচক ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক কর্নেল অলি আহমদ। তিনি প্রকাশ্যে সভা সমাবেশে বি. চৌধুরী ও তার ছেলের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিতেন। ড. কামাল. মান্নাদের নিয়ে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করায় ২০ দলের অনেকেই অখুশি।  বি. চৌধুরী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে এলে হয়তো অলি আহমেদও জোট ছেড়ে বেরিয়ে যেতেন। অলি আহমদের মান ভাঙাতে দুদিন আগে তাঁর বাসায় যান মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর রায় ও নজরুল ইসলাম খান। অলি আহমদ ২০ দলে থাকলেও বেশ কয়েকটি দল বেরিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে দুটি আজকেই জোট ত্যাগ করার ঘোষণা দিচ্ছে।

জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ন্যাপের সভাপতি জেবেল রহমাণ গাণি জানিয়েছেন, বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দিলেও আপাতত কোনও জোটে শরিক হবেন না।  এক্ষেত্রে আরও কিছুদিন তিনি তার দল ও এনডিপির সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

ন্যাপ ও এনডিপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা, তা এখনও অন্ধকারে। অন্যদিকে পর-পর দুই নির্বাচনে অংশ না নিলে আরপিও অনুযায়ী কোনও দল আবারও নির্বাচনে অংশ না নিলেও নিবন্ধন বাতিল হবে। এ কারণে দলদুটো চায়, প্রচলিত আইন মেনেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে।

জেবেল রহমান গাণির সঙ্গে কথা বলে স্পষ্ট যে, ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ১৮ দলীয় জোট গঠনের মধ্য দিয়ে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয় বাংলাদেশ ন্যাপ, এনডিপিসহ তাদের সমমনা আটটি দল। গত ছয় বছরের বেশি সময়ে তারা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অবিচল ছিলেন জোটে। আর বিএনপি থেকে বেরিয়ে আসার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো, গত ১৩ অক্টোবর বিএনপি, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ।

ন্যাপ ও এনডিপির নেতারা মনে করেন, এই ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে ২০ দলীয় জোটকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা হবে। আর এর মধ্য দিয়ে বিএনপিই মূলত জোটকে বিলুপ্ত করে দিতে চাইছে। যদিও সোমবার  রাতে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। জোটের সেই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানানো হয়, ঐক্যফ্রন্টকে স্বাগত জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০ দলীয় জোট। একইসঙ্গে ঐক্যফ্রন্টে চারটি দলকে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। 

জেবেল রহমান গাণি বাংলাদেশ ন্যাপের চতুর্থ চেয়ারম্যান। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৫৭ সালে দলটি গঠিত হয়। এরপর ৭৬ সালে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন মশিউর রহমান যাদু মিয়া, যিনি গাণির দাদা (বাবার বাবা)। এরপর তার নেতৃত্বেই জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টে যোগ দেয় ন্যাপ। এরপর ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ এ ন্যাপ যুক্ত হয়।

জেবেল রহমান গাণি জানান, বিএনপি গঠনের পূর্বে ন্যাপকে স্থগিত করেন মশিউর রহমান যাদু মিয়া। বিএনপি গঠনের প্রক্রিয়ার সময় ন্যাপের বিভাজন হয়। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যেতে রাজি না হয়ে আলাদা হন নাসের খান ভাসানী, সেটা ছিল একটি ক্ষুদ্র অংশ। মূল ন্যাপ নিয়ে যাদু মিয়া ধানের শীষ প্রতীকের সঙ্গে বিএনপি গঠন করেন।

গাণি বলেন, ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে আমার পিতা শফিকুল গণি স্বপন ন্যাপকে পুনরুজ্জীবিত করেন। ২০০৮ সালে ন্যাপ তার নেতৃত্বেই নিবন্ধন লাভ করে। তার মৃত্যুর পর ২০০৯ সালের আগস্ট ২৩ আগস্ট আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং ২০১০ সালের প্রথমার্ধে নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব শুরু করি।

বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে আসার পেছনে অনেকগুলো কারণ পাওয়া গেছে দলটির কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে। তাদের ভাষ্য, বিএনপির পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচন নিয়ে ২০ দলীয় জোট থেকে কোনও উদ্যোগ বা সংলাপ করেনি। যদিও  জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করতে গিয়ে ড. কামাল হোসেন, আসম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে আসনের বিষয়ে বিএনপির আলোচনা প্রকাশ্যে এসেছে। এক্ষেত্রে বিএনপির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন আছে ন্যাপের। এছাড়া, বিএনপির পক্ষ থেকে কখনও ন্যাপের চেয়ারম্যানকে সংসদীয় আসন দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত বা সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। ২০১৫ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ন্যাপ চেয়ারম্যানের নির্বাচনী এলাকা নীলফামারী-১ ( ডোমার-ডিমলা)  আসনে বিএনপির সমর্থন চেয়েও প্রত্যাখ্যাত হন গাণি।

জোট ছেড়ে নতুন কোনও জোটে যাওয়ার চিন্তাভাবনা আছে ন্যাপ ও এনডিপির। এক্ষেত্রে বি. চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট বা অন্য কোনও জোটে দেখা যেতে পারে দল দুটিকে। এ বিষয়ে জেবেল রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে যেকোনও রাজনৈতিক মেরুতে ঐক্যবদ্ধ আপত্তি থাকবে না।’

সদ্য গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে জেবেল রহমান গাণির প্রতিক্রিয়া, আমি ব্লাইন্ডলি ড. কামাল ও ব্যারিস্টার মইনুলদের নেতৃত্ব মেনে নিতে পারছি না। মইনুল হোসেন নির্বাচন করবেন কিনা, থাকবেন কিনা। এমন  অনেকেই আছেন, রাজনৈতিক জোটে সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের আনতে চান। তাহলে আরও অনেক বড় উদার মন নিয়ে করা উচিৎ ছিল। বিএনপির মতো উদার রাজপথের দলকে একজন-দুজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখছে কেন? আমরা অধ্যাপক এমাজউদ্দীনকে দেখতে চেয়েছিলাম। জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া, ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে হামলার পর। তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন এমাজউদ্দীন আহমদ। তাহলে ওই সময় তারা কেন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্য করেননি? এই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে প্রশ্ন আছে।

কী প্রশ্ন আছে, এমন ব্যাখ্যা হয়তো মঙ্গলবার বিকালে সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরবেন জেবেল রহমান গাণি।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি