বিজয়ের মাসেও জাতীয় পতাকা অবমাননা
প্রকাশিত : ১৮:৪৫, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১১:১৩, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭
বিজয়ের মাসে যাত্রীদের সিটে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে প্রকাশ্যে পতাকার অবমাননা করছে খাজাবাবা পরিবহন
খাজাবাবা নামের একটি পরিবহন বিজয়ের মাসে জাতীয় পতাকা দিয়ে আসন তৈরি করে ধৃষ্টতার পরিচয় দিয়েছে। পরিবহনটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক লাল-সবুজ পতাকার আদলে যাত্রীদের আসনের কভার তৈরি করে গত কয়েকদিন ধরে সার্ভিস দিচ্ছে।
জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিধিমালা অনুযায়ী, এ ধরনের কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিধিমালায় যে কেউ ইচ্ছেমতো গাড়িতে পতাকা ব্যবহার করতে পারবেন না।
২০১০ সালের সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, কোনো অবস্থায় গাড়ি, রেল কিংবা নৌকার খোলে, উপরিভাগে বা পেছনে পতাকা ওড়ানো যাবে না। জাতীয় পতাকার অবমাননা হবে- এমন কোনো স্থানেও তা রাখা যাবে না।
বিধি অনুসারে, খাজাবাবা পরিবহনটি পতাকা দিয়ে কভার তৈরি করে গুরুতর অপরাধ করেছে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
খাজাবাবা পরিবহন রাজধানীর বিভিন্ন রুটে বাস সার্ভিস চালু রেখেছে। এর মধ্যে মিরপুর-যাত্রাবাড়ি রুটের ঢাকা মেট্রো-১৫-১৮৮০ নম্বর প্লেটের বাসটির সবগুলো আসনই জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ওই বাসের যাত্রী নির্মল রায় বলেন, স্ট্যান্ডে অনেক যাত্রী থাকায় আমি ভিড় ঠেলে বাসটিতে উঠি। কিন্তু সিটে বসতে গিয়েই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ি। একজন সচেতন নাগরিক হয়ে আমি জাতীয় পতাকাকে অবমাননা করতে পরি না। এ নিয়ে বাসের কন্ডাকটরের সঙ্গে কথা বললে তিনি আমার সঙ্গে বাজে আচারণ করেন।
এ বিষয়ে কথা হয় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জাতীয় পতাকা বিধিমালা অনুসারে সাধারণ জনগণ গাড়িতে সব সময় জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে পারে না। তবে চেতনার দিক বিবেচনায় বিজয় দিবস কিংবা স্বাধীনতা দিবসে গাড়ির সামনে পতাকা ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু পরে তা খুলে রাখতে হবে। তবে খাজাবাবা পরিবহনের এ কর্মকাণ্ড অপরাধমূলক। কারণ, জাতীয় পতাকা দিয়ে আসন তৈরি করা পতাকা অবমাননার পর্যায়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে অপরাধের পরিধি অনুসারে অপরাধীকে কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।’
জাতীয় পতাকা একটি রাষ্ট্রের পরিচয়, জাতীয়তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। এই পতাকা অর্জনের জন্য বহু আন্দোলন-সংগ্রাম, সশস্ত্র যুদ্ধ, আত্মদানের ঘটনা ঘটেছে। পতাকাকে মুক্তি ও স্বাধীনতার সর্বোচ্চ অহংকার বলে গণ্য করা হয়। ১৯৭১ সালে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা লাল-সবুজ পতাকার অধিকার লাভ করেছি। তাই বিজয়ের মাসে এ পতাকাকে অবমাননা করে খাজাবাবা পরিবহনটি বাঙালির সার্বভৌমত্বে আঘাত হেনেছে।
খাজাবাবা পরিবহনের এই গাড়িটির সিটেই জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়েছে। গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো-১৫-১৮৮০
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাজাবাবা পরিবহনটি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। সিটিং সার্ভিসের নামে লোকাল সার্ভিস চালু রেখেছে। রাস্তার যে কোনো জায়গায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তুলছে। তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো ভাড়ার তালিকা নেই। যাত্রীদের কাছে থেকে নিজেদের মতো করে ভাড়া তুলছে।
রাজধানীর পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও খাজাবাবা পরিবহনের সার্ভিস চালু রয়েছে। এ পরিবহনের বাসচালকদের অদক্ষতায় বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ বছরের ২৭ জুন রাজশাহীতে খাজাবাবা পরিবহনের রাজশাহী-ব-১৭৫৬ নাম্বারের বাসটি এক হোটেল ব্যবসায়ীকে চাপা দেয়। এতে ওই হোটেল ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। এছাড়া কয়েকদিন আগে রাজধানীর মিরপুরে এক যাত্রীকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুত্বর আহত হন।
/ এআর
আরও পড়ুন