বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে অসাধারণ সাফল্য অর্জিত
প্রকাশিত : ২২:৫২, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৮:২৭, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮
দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া এখন আর স্বপ্ন নয়। ইতোমধ্যে ৯২ শতাংশ মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছে। যা, ২০০৯ সালের আগে ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ।
সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করে। ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপ তৈরি করে।
এই রোডম্যাপ অনুযায়ী ইতোমধ্যেই দেশের ২৫১টি উপজেলাকে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আনা হয়েছে। আরো ৫৫টি উপজেলাকে শিগগিরই পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবাহের আওতায় আনা হবে। এছাড়া, বাকি ১৫৪টি উপজেলা ২০১৯ সালের মধ্যে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবাহের আওতায় আনার কার্যক্রম চলছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ খুব শিগগিরই বিদ্যুতে পুরোপুরি আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করবে।’
তিনি দেশবাসীকে জাতীয় এই সম্পদ সাশ্রয়ের জন্য আন্তরিকভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বর্তমানে ৯২ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছেন, যা ২০০৯ সালের আগে ছিলো মাত্র ৪৭ শতাংশ।’
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকার বর্তমানে দেশে ৯৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। ২০০৯ সালে যার সংখ্যা ছিল মাত্র ২৭টি এবং বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার ৪৩০ মেগাওয়াট এবং বিদ্যুৎ সংযোগের সংখ্যা ৩ কোটি ১৫ লাখ।
এছাড়া ৫৩ লাখ সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে দেশের দু’কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আনা হয়েছে এবং বর্তমানে ১৩ হাজার ৬৫৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ৫৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে।
এছাড়া ৭ হাজার ৪৬১ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ২৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য দরপত্র গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি সরকার ২০ হাজার ১৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন আরো ১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার একজন বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ২০০৯ সালের আগে মারাত্মক লোডশেডিং দেখেছি। আর এখন লোডশেডিং অদৃশ্য হয়ে গেছে।
সাজ্জাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সরকার সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৬২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে সঞ্চালন লাইন সম্প্রসারিত হয়েছে ১১ হাজার ২৯৩ সার্কিট কিলোমিটার। বর্তমানে বিতরণ লাইনের সংখ্যা ৪ লাখ ৭৬ হাজার এবং গ্রিড সাব স্টেশন (এমভিএ) এর ক্ষমতা ৩৬,৯১২-তে পৌঁছেছে।
সরকার প্রতিবেশী দেশ থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে এবং বর্তমানে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪৬৪ কিলোওয়াটে পৌঁছেছে।
এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থাকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে ছয়টি উৎপাদন, একটি সঞ্চালন এবং পাঁচটি বিতরণ সংস্থা রয়েছে।
টেকসই নবায়নযোগ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ টেকসই এবং পুনঃনবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উন্নয়নে সহযোগিতার ক্ষেত্রে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে।
বর্তমান সরকারের আন্তরিকতা ও নিরলস প্রচেষ্টার ফলে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ ২০০৯ সালের ১৭.৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে বেড়ে ২০১৮ সালে ২৭.০০ মিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে এবং গ্যাস ক্ষেত্রের সংখ্যা ২৩টি থেকে বেড়ে ২৭টিতে দাঁড়িয়েছে। সরকার তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ১৬ হাজার ৬৯৬ লাইন কিলোমিটার, দ্বিমাত্রিক জরিপ পরিচালনা করেছে এবং ৫ হাজার ২৩৬ বর্গ কিলোমিটার ত্রিমাত্রিক জরিপ এবং ১৯ হাজার ৪১২ লাইন কিলোমিটার ভূতাত্ত্বিক জরিপ সম্পন্ন করেছে।
বর্তমানে সরকার ১২ কেজি পর্যন্ত এলপিজি’র মূল্য ১৪৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ৮৫০-৯০০ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এলপিজি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা পাঁচটি থেকে ১৮ টিতে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার ছোট ছোট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে।
তাছাড়া, সরকার ইতোমধ্যেই মহেশখালীতে ফ্লোটিং স্টোরেজ এবং রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) ভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করেছে এবং ২০১৫ সালের এপ্রিল মাস নাগাদ কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে এই ধরনের আরেকটি স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে, যার ধারণ ক্ষমতা ৫০০ এমএমসিএফডি।
পাশাপাশি, সরকার জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশের গ্যাস সরবরাহ সহজতর করতে ভূমি ভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। বাসস
এসি