বিনামূল্যে ১৪ বছর ধরে খাবার বিতরণ
প্রকাশিত : ২২:০০, ২৯ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ১১:৫৫, ৩০ জুলাই ২০১৭
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বিলাসবহুল টোকিও স্কয়ারের বিপরীতে সুপরিচিত প্রিন্স বাজার। মাগরিবের আযান হতেই প্রিন্স বাজার ভবনটির উত্তর ও পূর্ব দিকে জড়ো হন সারি সারি মানুষ। সবার চোখেমুখে হাসির ঝিলিক। উদ্দেশ্য বিনামূল্যে রাতের খাবার খাওয়া। রিক্সাচালক, পথচারী, স্থানীয় ছিন্নমূল শিশু- কিশোর, বয়স্ক মানুষজন। যে কেউই খেতে পারেন এই খাবার, কোনো বাধা নেই।
এই মহতী উদ্যোগ পরিচালনা করেন আলহেরা কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুব চৌধুরী। তিনি প্রিন্স বাজার ভবনের মালিক। এছাড়া তাঁর রয়েছে রিয়েল এষ্টেট ব্যবসা। পারিবারিকভাবে বেশ সচ্ছল তিনি । ২ বোন ১ ভাই প্রত্যেকে জেলা দায়রা জজ ছিলেন। বর্তমানে তারা কর্মজীবন শেষ করে অবসর জীবনযাপন করছেন। তাঁর কোনো সন্তান নাই।
একজন রিক্সাওয়ালা সারাদিন পরিশ্রম করে যখন ক্লান্ত হয়ে যান, তাঁর যে ক্ষুধা অনুভব হয়, সেই ক্ষুধার্ত পেটে সেই বিনামূল্যের খাবার আশীর্বাদস্বরূপ। যান্ত্রিক এই শহরে এক ফ্লাটের মানুষ যখন আরেক ফ্লাটের মানুষকে চেনে না তখন ছিন্নমূল শিশু কিংবা অসহায় মানুষের নির্ভরযোগ্য ঠিকানায় পরিণত হয়েছে প্রিন্স বাজার।
প্রিন্সিপাল মাহবুব চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন এম এ হাকিম ইটিভি অনলাইনের এই প্রতিবেদককে বলেন, `তিনি (মাহবুব চৌধুরী) মূলত আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য মা বাবার নামে গরীব -দুঃখী মানুষদের খাওয়ান। ২০০৩ সাল থেকে নিয়মিত সবার জন্য বিনামূল্যে খিচুড়ি, পায়েস; এর সাথে মৌসুমি ফল যেমন আম - কাঁঠাল খাওয়ানো হয়। নিজস্ব প্রয়োজনে কিছু গরু পালন করা হয়, নিজেরা খেয়ে যে দুধ অবশিষ্ট থাকে সেটা দিয়ে পায়েস রান্না করে গরীব দুঃখীদের খাওয়ানো হয়।’
দিনের আলো নিভে গেলেই নিদিষ্ট জায়গায় জমায়েত হতে থাকে আশপাশের রিক্সাচালক, পথচারী, ছিন্ন মূল ও পাশের বিহারি ক্যাম্পের দুস্থ মানুষজন। একটু আগেভাগে এসেই নিজের জায়গাটা ধরে রাখেন তারা।
প্রতিদিনের খাবার বিতরণের দায়িত্বে রয়েছেন বেশ কয়েকজন। কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা নেই। যারা খেতে আসেন, তারাও প্রায় সবাই এখানে নিয়মিত। লোকের সংখ্যা কমছে না বরং প্রতিদিন নতুন করে কেউ না কেউ যুক্ত হচ্ছে।
খিচুড়ি বিতরণের দায়িত্বে থাকা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের স্যার খিচুড়ি খাওয়ায় সেই ২০০৩ সাল থেকে। নিজের বাবা-মায়ের নামেই খাওয়ায়। স্যার যতদিন আছে খাওয়াইব।’
ভবনটির ভেতরে খুবই যত্ন সহকারে রান্না করা হয় এই খাবার। রান্নার হাড়ি ও পরিবেশনের প্লেট-গ্লাসের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা দেখে বলার অপেক্ষা রাখে না, এ খাবার স্বাস্থ্যঝুঁকিমুক্ত। এখানে যে কেবল গরিবদুঃখী খেতে আসে তা নয়, স্থানীয় নামজাদা লোকও মাঝে মাঝে এসে খেয়ে যান বিনামূল্যের এই খিচুড়ি।
খিচুড়ি খেতে আসা রিক্সাচালক তালেব বলেন, ‘আমি ২ বছর ধইরা এহানে নিয়মিত সন্ধ্যায় খাইতে আহি। আমার মতো বহু লোক এখানে খায়। খাইতে ভালা লাগে।’
ছোট গাড়ির হেলপার আমিন বলেন, প্রতিদিন এখানে খাইতে আসি, সবার সাথে বসে খাইতে মজা পাই, পেট ভরে খাইতে দেয়।’
কডিয়াল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র শুভ বলে, ‘আমার বন্ধু প্রথম আমারে কইছে এখানে খিচুরি খাওয়ায়, হের পর থাইকা খাইতে আহি। খিচুড়িডা মজা লাগে।’
এছাড়া মাহবুব চৌধুরী সমাজ উন্নয়নে ব্যাপক পরিসরে কাজ করেন। প্রচারবিমুখ এই নিভৃতচারী মানুষটি স্থানীয় মসজিদ, মাদ্রাসাতে প্রচুর দান খয়রাত করে থাকেন। এছাড়া প্রতিবছর নিজ খরচে কিছু লোককে পবিত্র হজ পালনে সহযোগিতা করে থাকেন।
আলহেরা কলেজের গরীব ছাত্র- ছাত্রীদের পড়ালেখার খরচ তিনি বহন করেন, এছাড়া কলেজের ভবনের ভাড়া তাঁর অর্থে পরিশোধ করা হয়।
কেআই/ডব্লিউএন
আরও পড়ুন