বিলিয়ন ডলার পাচ্ছেন, নাকি প্রতারিত হচ্ছেন?
প্রকাশিত : ২২:০২, ২৭ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ১৩:১৭, ২৮ জুলাই ২০১৭
যাদের ইমেইল একাউন্ট আছে তাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অফার পাওয়ার অভিজ্ঞতাও আছে। পূর্বে নিজেকে কিছুটা অসহায় দেখিয়ে পিতা কিংবা স্বামীর টাকা হস্তান্তরের অফার আসত অপরিচিত কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে। বর্তমানে সে পদ্ধতি পাল্টে ইমেইলের পাশাপাশি মোবাইল ফোনে ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের প্রস্তাব আসছে। অনেকে প্রতারক চক্রের দেওয়া এসব লোভনীয় প্রস্তাব লুফে নিতে গিয়ে উল্টো নিঃস্ব হচ্ছেন। আর দেশি-বিদেশি চক্রগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার এমনই একটি প্রতারক চক্রকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। বুধবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চার নাইজেরিয়ানসহ সাত প্রতারককে আটক করে ডিবি উত্তর বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম। আটক ব্যক্তিরা হলো- জন আগডি ইউজিও, লিজা আক্তার, আফেজ, মহসিন শেখ, তাসমিয়া পারভীন, মাইকেল ইউজিনি ব্রাউন ও নামডি কেলভিন।
বাংলাদেশে অবস্থানকারী কারও সঙ্গে ফোন বা মেইলে সম্পর্ক স্থাপনের পর বিশাল অংকের টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয় এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা। আর সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে টাকা পেতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকে। নাইজেরিয়ান প্রতারকদের সঙ্গে এ কাজে হাত মিলিয়েছে দেশীয় কিছু চক্র। এভাবে দিনের পর দিন মানুষকে ঠকানোর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
এদিন ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, ‘মেইল বা মেসেজে বাংলাদেশিদের সঙ্গে প্রথমে যোগাযোগ স্থাপন করে নাইজেরিয়ান প্রতারকরা। এরপর তাদের কাছে প্রচুর টাকা আছে জানিয়ে দেশে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়। বিষয়টিকে অনেকে সত্য বলে ভেবে নেন।‘
তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে সেই টাকা উত্তোলন করতে গেলে বলা হয়, এর জন্য কিছু টাকা দিতে হবে। সরল বিশ্বাসে টাকা দিলে প্রতারণার শিকার হতে হয়। আর এই ফাঁদে অনেক বাংলাদেশিকে ফাঁসিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা।’
আবদুল বাতেন বলেন, ‘সম্প্রতি কামরুজ্জামান নামে একজনের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় প্রিসকা খালিফা নামের এক বিদেশি নারীর। সেই নারী জানায়, তার বাবা ড. ডেভিড উইলসন খালিফার নামে লন্ডনের একটি ব্যাংক একাউন্টে ৩.৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার জমা আছে। এগুলো তোলার জন্য বিশ্বস্ত লোক ও কিছু টাকা প্রয়োজন। প্রিসকা খালিফার ফাঁদে পা দিয়ে আটক লিজা ও মহসিনের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে কয়েক ধাপে ২৫ লাখ ৪৪ হাজার ১৪৪ টাকা জমা দেন। যা পরবর্তীতে এই প্রতারক চক্র আত্মসাৎ করে।’
মহানগর পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, ‘প্রতারক প্রত্যেকের একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। কারও কারও ১০-১২টি অ্যাকাউন্টও রয়েছে। এদের মধ্যে লিজার একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গত এক মাসে কোটি টাকার ওপরে ট্রানজেকশন হয়েছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর এসব টাকা দেশের বাইরে পাচার করতে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে। কখনও দামি পণ্য কিনে সেটা বিদেশে নিয়ে বিক্রি করে টাকা নিচ্ছে, কখনও হুন্ডি করে টাকা দেশের বাইরে পাচার করছে। এদের সঙ্গে বেশ কিছু অসাধু মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর যোগসাজশ রয়েছে। ’
এরা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে জানান ডিবির যু্গ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন।
তিনি বলেন, ‘এদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পাসপোর্ট ছিড়ে ফেলে বা লুকিয়ে ফেলে। ফলে আটক করা পর তাদের পরিচয় নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায় না। এছাড়া কোনো মামলার সাজা হলেও ছাড়া পাওয়ার পর তাদের নতুন ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায় না। একইভাবে তারা নতুনভাবে প্রতারণার কাজে জড়িয়ে পরে। আর এদের সহায়তা করছে দেশীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি।’
ডব্লিউএন