বিলুপ্তির পথে চিঠিপত্র
প্রকাশিত : ১৭:০৬, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাধিকার ও অনুষঙ্গিক উপাদান হলো চিঠি। যা বাঙলির যাপিত জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কাগজ আবিষ্কারের আগে মানুষ গাছের পাতায়, গাছের ছালে, চামড়ায়, ধাতব পাতে চিঠি লিখত। আর পাতায় বেশি লেখা হতো বলেই এর নাম হয় 'পত্র'। যোগাযোগের সবচেয়ে সহজ ও একমাত্র মাধ্যম ছিল এই চিঠি। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে টেলিফোন, টেলিগ্রাম, ওয়ারলেস, টেলেক্স, ফ্যাক্স, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ইত্যাদির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় খবরা-খবর মুহূর্তের মধ্যে অপরের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে বিধায় ধীরে ধীরে হাতে লেখা চিঠি হারিয়ে যাচ্ছে।
অথচ কিছুদিন আগেও এই চিঠিই ছিলো যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। আর চিঠিপত্র আদান-প্রদানের ব্যবস্থায় ছিলো পোষ্ট অফিস। ফলে সেই সময় পোষ্ট অফিসের সামনে দেখা যেতো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। হাতে-কলম লেখা পত্রগুলো পড়ে কখনো আনন্দে মুখে হাসি ফুটত, আবার কখনও চোখের পানি গড়িয়ে পড়ত। প্রযুক্তির যুগ আসার আগে এই চিঠি কখনও বিনোদনের খোরাক যোগাত, কখনও ব্যথাতুর হৃদয়ে কান্না ঝরাতো, কখনও উৎফুল্ল করত, কখনও করত আবেগাপ্লুত। কী যে সেই অদ্ভুত টান ছিল কালি ও কাগজে লেখা চিঠিতে। কিছু কিছু চিঠি বার বার খুলে পড়া হতো। যেন কোনদিনই পুরাতন হবেনা হৃদয়ের এই ভাষা। প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে সেসব আনন্দ আজ ম্লান।
নন্দিত সুপ্রাচীন যোগাযোগের মাধ্যম
পরিকল্পিত উন্নয়নের ছোঁয়াতে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বদলে যাচ্ছে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের তথ্য আদান-প্রদানের বৃহৎ মাধ্যম ডাকঘর। এরই মধ্যে বদলে গেছে ছোট্ট একটি শব্দ চিঠি এবং তার মাধ্যমে আদান-প্রদানের প্রচলনও। চিঠির প্রচলন ও ইতিহাস অনেক পুরোনো। চিঠিকে একজনের পক্ষ থেকে অন্যজনের কাছে লিখিত বার্তা বললেও ভুল হবে না। চিঠি বন্ধু এবং আত্মীয় স্বজনদের খুবই ঘনিষ্ঠ করতো, পেশাদারি সম্পর্ককে খুব উন্নয়ন করতো এবং আত্মপ্রকাশের সুযোগ প্রাণবন্ত করে তুলতো। কিন্তু নিজ হাতে চিঠি লেখার প্রচলন এখন নেই বললেই চলে। আধুনিক যুগের উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কাগজ-কলমের মাধ্যমটি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে।
স্ব-হস্তের লেখা চিঠির মধ্যেই হৃদয়ের শত সহস্র কথা ও তার আবেগ, আকুলতা এবং ব্যাকুলতা সব বিষয় প্রকাশ পেত। মা-বাবা তার সন্তানের হাতের লেখা চিঠি যখন পেতেন, ঠিক তখনই কোমল হৃদয় দিয়ে পড়ে নিতেন। চিঠির মধ্যেই বাবা-মা নিজের সন্তানের মুখটাও দেখতে পেতেন। অবচেতনে চিঠি বুকে জড়িয়েও আদর করতেন। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ চিঠি আদান-প্রদান করেছে, তা হিরোডোটাস ও থুসিডাইডিসের রচনাবলীতে উল্লেখ করাও আছে।
চিঠির বিবর্তন যুগে যুগে
চিঠির যুগে মানুষের ভাষাজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থাকলেও আন্তরিকতার বিন্দুমাত্র কমতি ছিল না চিঠির পাতায়। বানান ও ভাষাগত ভুলভ্রান্তি যেন চাপা পড়েছিল তাদের আন্তরিক ভালোবাসার আড়ালে। আগেকার দিনে চিঠি লিখে রাজা-বাদশারা এক রাষ্ট্রের সাথে অন্য যে কোনো রাষ্ট্রের সম্পর্ক স্থাপন করতো এবং দেশের কূটনীতিকদের মধ্যে খবর আদান-প্রদান করা হতো। স্ব-দেশের খবর দূর-দূরান্তে পৌঁছাতে ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে বা কবুতর কিংবা পাখির পায়ে চিঠি লিখে উড়িয়ে দেয়া হতো। প্রতু্ত্তরে অন্যান্য দেশের রাজারাও কবুতরের পায়ে চিঠি লিখে খবর পাঠিয়ে দিতেন।
জানা যায়, সম্রাট শের শাহের আমলে ঘোড়ায় চড়ে ডাক বিলির প্রথা চালু হয়। কালক্রমে জমিদাররাও এই প্রথা চালু রেখেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় চিঠি আদান-প্রদানের প্রচলন ঘটে। রানাররা পিঠে চিঠির বস্তাসহ এক হাতে হারিকেন অন্য হাতে বর্শা নিয়ে রাতের অন্ধকারে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছুটে যেতেন।
শত ফুল দিয়ে গাঁথা গল্প বা উপন্যাস
অশিক্ষিত লোকজন শুধুমাত্র চিঠি পড়া ও লেখার জন্যেই যেন স্বাক্ষরতা অর্জনের চেষ্টা করেছিল। সেই সময়ে শিক্ষার বিস্তারে বিশাল অবদান রেখেছে 'চিঠি'। আবার পারিবারিক চিঠিগুলো অনেক সময় খবরের কাগজের বিকল্প হিসাবেই যেন ব্যবহৃত হতো। চিঠিতে গ্রামের যে কোন ঘটনা ও আশা-ভরসার খবর, আবাদের খবর বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবরসহ বিভিন্ন খবর লেখা থাকত। আসলে হাতে লেখা চিঠি পরিবারের মধ্যে যেন নিবিড় সম্পর্ক ও ভালবাসার গভীরতার সেতুবন্ধন সৃষ্টি করতো।
প্রেম ভালোবাসার চিঠিগুলো ছিল একেকটি কালজয়ী বৃহৎ প্রেমের ইতিহাস। প্রচলিত চিঠির যুগে সকল প্রেমিক-প্রেমিকারা হৃদয়ের আকুলতা-ব্যাকুলতা কিংবা প্রতীক্ষার প্রহরের খুঁটিনাটি সহজ সরল ভাষায় মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখতেন। যা পড়ে পুলকিত হওয়ার পাশাপাশি তা সংগ্রহ করে রাখতেন প্রিয়জনেরা। চিঠিগুলোর ভাষা ও ভাবকে মনে হতো শত ফুল দিয়ে গাঁথা একটি গল্প বা উপন্যাস।
চিঠি ও আবেগ
একটা সময় ছিল সেটা সম্ভবত নব্বইর দশকে। অফিসের খাকি পোশাকের পিয়ন দরজায় কড়া নেড়ে যখন উচ্চস্বরে হাক দিত চিঠি চিঠি.... বলে। তখন কে আগে চিঠি নেবে এজন্য ঘরের শিশুদের মাঝে দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেতো। মা-বাবা তার সন্তানের হাতে লেখা চিঠি যখন পড়তেন হৃদয় দিয়ে। আবার যে মা-বাবা নিজে পড়তে পারতেন না, তারা গ্রামের পড়তে পারা লোকদের কাছে নিয়ে যেতেন একটু পড়ে দেওয়ার জন্য। আবার দীর্ঘদিন ঘরের দরজায় পিয়নের কড়া নাড়া না শুনলে পিতামাতার মনে সন্তানের জন্য দুশ্চিন্তার কালো মেঘ জমতো।
প্রেমের চিঠি
তখন বাজারে প্রচুর রাইটিং প্যাড ও চিঠি লেখার প্যাড পাওয়া যেতো। রঙ-বেরঙের হরেক রকমের প্যাডে প্রিয়জনের কাছে সুস্পষ্ট হরফে বিভিন্ন কালি বা কলমের মাধ্যমে চিঠি লেখা হতো। আবার চিঠিটা লিখে আঠা দিয়ে খামের মুখটা বন্ধ করে তাতে স্ট্যাম্প সেঁটে, বহুদূর হেঁটে গিয়ে ডাকবাক্সে বা ডাকঘরে চিঠি নিয়ে যেতে হতো। প্রেম ও ভালোবাসার ক্ষেত্রে যদি প্রেমের ব্যর্থতা আসতো, সেক্ষেত্রে চিঠি দিয়ে অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করতেন। কোনও কোনও চিঠি পড়ে হৃদয় জুড়িয়ে যেত, এতটাই স্পর্শকাতর ছিল সেসব চিঠির ভাষা। চিঠির জন্য দিনের পর দিন ডাক পিয়নের প্রতীক্ষায় থাকত মানুষেরা। কখন পিয়ন এসেই কাঙ্খিত চিঠিটি তার হাতে দেবে। চিঠি পেলেই মনের মধ্যে সে কী আনন্দ! সেই অনুভূতি ভাষায় লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়! সেই চিঠি পড়ে শেষ না করা পর্যন্ত শান্তি মিলতো না।
পোস্ট অফিসের এসব চিঠিকে ঘিরেই এসেছে সভ্যতা। প্রথম স্ট্যাম্প করা চিঠি ১৮৪০ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার রাজত্বকালে শুরু হয়। মানুষের মনের ভাব আদান-প্রদানে চিঠি দীর্ঘকাল ধরেই রাজত্ব করেছে। এই মাধ্যম যত দিক দিয়ে সফল হয়েছিল, তা ভবিষ্যতে অন্য কোনো মাধ্যমের দ্বারা সফলতা পাবে কিনা সন্দেহ।
তাই চিঠির যুগের কথা মনে হলে এখনো যেন মানুষের কানে ভেসে আসে বাংলা ছায়াছবির জনপ্রিয় গান- নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম/বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম/বন্ধুরে তোর লাগি পরবাসী হইলাম।/ শিমুল যদি আমি হইতাম শিমুলের ডালে/ শোভা পাইত রূপ আমার ফাগুনেরও কালে।
বিখ্যাত কবি, মহাদেব সাহাও লিখেছিলেন- করুণা করে হলেও চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিও/আঙ্গুলের মিহিন সেলাই/ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও,/ এটুকু সামান্য দাবি, চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতো।
বাংলা বহু গানে ও কবিতায় এভাবেই উঠে এসেছে চিঠির প্রসঙ্গ। গত শতকের ৮০ কিংবা ৯০ দশকে চিঠিই ছিল অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম। চিঠির অপেক্ষায় প্রেমিক বা প্রেমিকার পথের দিকে চেয়ে বসে থাকা, চিঠি পাঠাবে ছেলে সেই অপেক্ষাতে বসে থাকতেন মা-বাবা। কিংবা স্বামীর চিঠির অপেক্ষায় মুখ ভার করে পুকুর পাড়ে স্ত্রী বসে থাকতেন। এসবই আজ অতীত, যার অস্বিত্ব এখন খুঁজে পাওয়া দায়।
সাহিত্য ও চিঠি
বাংলা সাহিত্যেও চিঠি বেশ জায়গা দখল করে আছে। এক্ষেত্রে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলেন অগ্রগামী। কবিগুরু জীবনে যা চিঠি লিখেছিল তা অন্য কোন কবি ও সাহিত্যিক লিখেছিলেন কি না সন্দেহ। আর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পত্রনির্ভর আত্মজৈবনিক উপন্যাস বাঁধনহারা। সেখানে তিনি প্রথম স্ত্রী নার্গিসকে যে চিঠি লিখেছিল তা আজও অনন্য। চিঠির এক জায়গায় কবি লিখেছিল- ‘তুমি ভুলে যেওনা আমি কবি....। আমি আঘাত করলেও ফুল দিয়ে আঘাত করি...।
অসুন্দর কুৎসিতের সাধনা আমার নয়। আরও লিখেছেন, ‘আমার আঘাত বর্বরের কাপুরুষের আঘাতের মতো নিষ্ঠুর নয়।’চিঠিতে শুধু মনের ভাব আদান-প্রদান হতো তা নয় বরং সাহিত্যিক-কবিত্ব ফুটে উঠতো চিঠিতে।
পত্র মিতালি
তখনকার দিনে পত্র মিতালীর প্রচলনও ছিল খুব বেশি। প্রতি বছর প্রচুর ছেলেমেয়ের নাম-ঠিকানা সম্বলিত পত্র মিতালি গাইডও পাওয়া যেত বিভিন্ন বুক স্টলে বা পত্রিকার স্টলে। এসব পত্র মিতালির গাইড থেকেই অনেকে পছন্দের বন্ধু খুঁজে নিতেন এবং তাদের কাছে শেয়ার করতেন জীবনের সুখ-দুঃখের বহু গল্প। একজন অন্যজনকে চিঠি লিখতো অনেক সুন্দর করে। যাতে স্থান পেত বিভিন্ন কবিতার লাইন বা গানের কথা। ব্যবহার হতো বিভিন্ন বর্ণিল চিঠির প্যাডও। হলুদ খামের এক একটি চিঠি যেন একটি গীতি কবিতা।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিঠি
বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিঠিটা লিখেছিল নিউইয়র্কের ব্ররুকলিনের একজন নারী তার প্রেমিককে। তিনি ১৯৫২ সালে কোরিয়াতে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে লেখেন ওই চিঠি। তখন তার প্রেমিক মার্কিন সেনাবাহিনীর সৈনিক হিসাবে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। সেই চিঠিটার দৈর্ঘ্য ছিল ৩ হাজার ২০ ফুট লম্বা, যা লিখতে সময় লেগেছিল একমাস। আবার খুবই ক্ষুদ্র চিঠি লিখেছিল চমৎকার ভাষাতে ফ্রান্সের বিখ্যাত সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক ভিক্টর হুগো।
তা ছাড়াও আর এক ঘটনা স্মরণ করার মতোই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শৈশবের লেখা একটি চিঠি। সেই পত্র সম্পর্কে বলতেই হয়- তিনি বাড়ি থেকে বহুদূরে পড়তে গিয়ে সবেমাত্র বাংলা স্বরবর্ণের সঙ্গে পরিচয়। তখন তার টাকার প্রয়োজন হয়েছিল। তিনি কী আর করবেন, শুধু মাত্র স্বরবর্ণ দিয়েই বাবার কাছে চিঠি বা পত্র লিখেছিল। বর্ণের সাথে ‘কার’ যোগ করলে তা ঠিক এমনটি হয় 'বাবা টাকা পাঠাও তো পাঠাও, না পাঠাও তো- ভাত অভাবে মরি'। তার চিঠিতে এই ভাবে লেখা ছিল- ‘বব টক পঠও ত পঠও ন পঠও ত ভত অভব মর’।
চিঠি-পত্র লেখার পেশা
চিঠি নিয়ে সে সময়ের বহু স্মৃতির মতো এখনকার আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তেমন স্মৃতি স্মরণ রাখার মতো নেই বললেই চলে। চিঠিপত্র লেখাকে কেন্দ্র করেই বেড়ে গিয়েছিল চিঠি লেখাকে পেশা রূপে নেয়ার প্রবণতা। ডাকঘরের বারান্দায় লাইনের পর লাইন ধরেই সকল শ্রেণির মানুষের ভিড় লেগেই থাকত। ডাকটিকিট, পোস্টাল অর্ডার, ইনভেলাপ, রেজিস্ট্রি চিঠি, মানি অর্ডার, পোস্ট কার্ড, বীমা, পার্সেল, জিএমই, ভিপিপি, ইএমএস, স্মারক ডাকটিকিট, ডাক জীবনবীমা, লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকসহ সরকারি কর্মচারীদের বেতন সবই হতো ডাকঘরে চিঠির মাধ্যমে। এমনকি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পও ডাকঘর থেকেই সংগ্রহ করতে হত। এগুলোর চাহিদাতেই চিঠিপত্রের আদান-প্রদানের মাধ্যমটি খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল।
তখনকার যুগে যেসব মানুষ লেখাপড়া জানতেন না, ডাকঘরের লেখকেরা বারান্দাতে কিংবা সুবিধাজনক স্থানে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে তাদের চিঠিপত্র, মানিঅর্ডার কিংবা মালামাল প্রেরণ সংক্রান্ত কাজ করে দিতেন। ব্রিটিশ আমল থেকেই শুরু করে দেড় শ’বছর পর্যন্ত বজায় ছিল চিঠিপত্রের রমরমা অবস্থা। গাঁও-গেরামের বেশকিছু স্বল্পশিক্ষিত লোকজনরাই বিনে পয়সায় চিঠি লিখে দেওয়ার কাজ করতেন। অবশ্য তাদের কদরই ছিল আলাদা।
বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে অনেক নিত্য নতুন সব প্রযুক্তি। দিয়েছে সকলের পকেটে স্মার্ট মোবাইল ফোন। নিমিষেই প্রিয়জনের কাছে পৌঁছে যায় হৃদয়ের কথা। আমাদের শ্রম বাঁচিয়েছে, খরচ বাঁচিয়েছে এবং বাঁচিয়েছে সময়। চিঠি বয়ে নিয়ে ডাকবক্সে ফেলতে হয়না। ভুল করলে বারবার কেটে দিতে হয়না। অনেক নতুনত্ব সংযুক্ত হয়েছে আমাদের জীবনে। ফেসবুক, টুইটার কিংবা মেইলে চিঠি বা তথ্যের আদান-প্রদান যত দ্রুত হোক না কেন কাগজে লেখা চিঠির সেই আবেগময়তা যেন আজও ভুলবার নয়।
তবে চিঠির জবাবের আশায় পথ চেয়ে বসে থাকা সেই সময়টুকুও আজ আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। স্বজন কিংবা বন্ধুর খবর পেতে এখন আর অপেক্ষায় থাকতে হয় না দিনের পর দিন। যেটা এক সময় হতো হাতের লেখা চিঠির জন্য। চিঠির স্থলে এসে গেছে ইন্টারনেট, মোবাইল-এসএমএস। যোগাযোগ মাধ্যমের এই পরিবর্তনে মানুষের জীবনযাত্রা এখন সহজ হয়ে গেলেও হারিয়ে যাচ্ছে চিঠি।
ইন্টারনেটের এ যুগে কাগজ-কলমে লেখা চিঠির প্রচলন অনেক কমে গেলেও তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। অনেক অফিসিয়াল চিঠি এখনও প্রতিদিন ডাক বিভাগের মাধ্যমেই আসে। তবে সেখানেও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে।
এএইচ/